নারীর স্ট্যান্ডার্ড কখনোই পুরুষ হতে পারেনা

  • নাজমুল হক
  • মার্চ ১৩, ২০১৮

১.
আমার মা নারীবাদ শব্দটা কখনো শোনেনই নি। পুরুষের সাথে কখনো নিজেকে তুলনাও করতে যান না। বাংলার আটদশটা গ্রামের মেয়ের মতোই সীমিত লেখাপড়া আর ১৬ বছর বয়সে বিয়ে। এরপর আমাদের জন্ম, আমাদের বড় হওয়া। এখন মায়ের বয়স ৪৩।  এতপর আমাদের বিয়ে করাবেন নাতিপুতি নিয়ে বার্ধক্য কাটিয়ে একসময় আমাদের রেখে চলে যাবেন। আমার মায়ের বয়সি গ্রামের অন্য মেয়েদের গল্পটা হয়তো একি রকম। কিন্তু এত ছোটগল্পে লেখা থাকে না একজন নারী কতটা শক্তিশালী হলে নিজেকে ছাড়িয়ে একসময় পুরুষকেও ছাড়িয়ে যায়। এটা অনুভব করতে হয়।

২.   
মাত্র ১৬ বছরের বাচ্চা বয়সে নিজের সম্পুর্ন চেনা পরিবেশ ফেলে একদিন সকালে নিজেকে আবিষ্কার করলেন সম্পুর্ন নতুন আর অচেনা এক পরিবেশে। অথচ কি অদ্ভুত এক মানষিক শক্তির বদৌলতে এই অচেনা পরিবেশকে খুব তাড়াতাড়ি নিজের করে নিলেন। অভাবের সংসার, দেবর, শাশুড়ি সবকিছুকেই ১৬ বছরের নরম কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বাবার সীমিত উপার্জনে সংসারটাকে চালিয়ে নিয়েছেন একজন পাঁকা অর্থনীতিবিদের মতো। প্রতি মাসে কতবার করে বাজেটের অদলবদল করেছেন সেটার খবর বাবা রাখেনি। শুধুমাত্র অক্ষরজ্ঞান থাকা আমার মা সংসার চালানোর সাথে সাথে আমাদের লেখাপড়াও চালিয়ে নিয়েছেন।    

৩. 
জীবন সাংগ্রামে সমানতালে হেঁটেছেন বাবার সাথে। বাবা বাবার জায়গা থেকে লড়াই করেছেন আর মা মায়ের জায়গা থেকে। বাবা বিদেশ থাকায় সব সময় ক্যাশ টাকা থাকতো না আমাদের কাছে। কিন্তু পারিবারিক সংকটে মা'ই হয়ে উঠতেন কর্তা। অসাধারন সব বুদ্ধিমত্তায় সব সামলে নিতেন। এখনো প্রতিমাসে আমাদের অগোচরে প্রতিমাসে কয়েকবার করে বাজেট অদলবদল করছেন, আমাদের সামলাচ্ছেন, বাবাকে মানষিক সাপোর্ট দিচ্ছেন, আমাদের ফিউচার নিয়ে ভাবছেন। প্রতিনিয়ত দায়িত্বে, কর্তব্যে, মহানুভবতায় আমার সামান্য অক্ষরজ্ঞান থাকা মা নিজেকে ছাড়িয়ে সমান্তরালে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন বাবাকেও। যেসব নারীবাদীরা নারী অধিকারের নামে পুরুষকে স্ট্যান্ডার্ড ধরে পুরুষের সমান হতে চাচ্ছেন তারা হয়তো জানেনই না, নারীর স্ট্যান্ডার্ড কখনোই পুরুষ হয়ে পারে না। নারীর স্ট্যান্ডার্ড অসিম। নারী পুরুষকে ছাড়িয়েছেন অনেক আগে। প্রতিনিয়ত ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আর এই পৃথিবীকে ঋণী করে রাখছেন।

Leave a Comment