নগ্নতা মানেই নির্লজ্জ নয়, লিজেন্ডও হয়!

  • রোমানা আক্তার 
  • মার্চ ১৭, ২০১৮

নারীর নগ্নতা যদি কেবলি মনোরঞ্জন কিংবা লোক হাসানো হয় তবে লেডি গোডিভা তার নগ্নতা দিয়ে কিভাবে ইতিহাসের পাতায় লিজেন্ড হয়ে রয়ে গেলেন? তিনিতো পুরো কোভেন্ট্রীর ডাউন টাউন নগ্ন শরীরে ঘোড়ার পিঠে করে ঘুরেছিলেন। আসলে এখানে নগ্নতার চাইতেও বড় বিষয় হচ্ছে আমি কেন নগ্ন হচ্ছি? চুন থেকে পান খসলেই যদি নগ্নতাকে হাতিয়ার বানাই সেখানে লোক হাসবে, বিব্রত হবে, বিরক্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। 

বলছিলাম লেডি গোডিভার কথা। নয়শ বছর আগে ইংল্যান্ড এ জন্ম নেয়া একজন নারী কিংবদন্তী এই লেডি গোডিভা। থার্টিন সেঞ্চুরীর এই মহিয়ষী নারী ইতিহাসে জায়গা করে নেন তার দৃষ্টান্তমুলক মানবতার কারনে। যেই মানবতার প্রকাশ ঘটানোর জন্য তাকে বিবস্ত্র হয়ে ঘুরতে হয়েছে তার শহর।  এ্যাংলো স্যাক্সন পিরিয়ডের আর্ল অব মারসিয়া এবং কোভেন্ট্রী নগরীর শাষক ছিলেন লিওফ্রিক।আর গোডিভা ছিলেন লিওফ্রিক এর স্ত্রী। সেই সময় কোভেন্ট্রীর প্রজাদের উপর লিওফ্রিক উচ্চ হারে করারোপ করেছিলেন। প্রজাদের উপর এটা রীতিমত জুলুম ছিল। যা লেডি গোডিভা মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি তার স্বামী লিওফ্রিককে অনুরোধ করেছিলেন যেন প্রজাদের উপর থেকে এই করের বোঝা কিছুটা কমানো হয়।

দীর্ঘ সময় অনুরোধ করার পর তার স্বামী তাকে শর্ত দেন, গোডিভা যদি প্রকাশ্য দিবালোকে সম্পূর্ণ  নগ্ন হয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে কোভেন্ট্রীর ডাউন টাউন ঘুরে আসতে পারে তবেই তিনি প্রজাদের উপর আরোপিত কর কিছুটা কমাবেন। কেমন বদ স্বামী ভাবা যায়! কিন্তু গোডিভা হার মানার মেয়ে নয়। তিনি প্রজাদের কষ্ট কমানোর জন্য স্বামীর দেয়া শর্ত মেনে নেন। স্বামী এখন কি করবে? একদিকে স্ত্রীকে দেয়া শর্ত তিনি ফেরাতে পারছেন না, অন্যদিকে নগ্ন হয়ে ঘুরে আসা স্ত্রীর সাথে আবার সংসার করা। লিওক্রিফ তাই কৌশলে বিষয়টা সামলে নিলেন। সারা কোভেন্ট্রী শহর কে বলে দিলেন গোডিভা যেদিন ঘর থেকে বের হবেন সেদিন যেন শহরের অন্যকেউ ঘর থেকে বের না হয়, এমনকি তারা যেন তাদের ঘরের দরজা জানালাও না খোলে।যেহেতু গোডিভা সবার খুব প্রিয় ছিলেন আর প্রজাদের জন্যই এই ত্যাগ স্বীকারে রাজী হয়েছিলেন তাই সেদিন সত্যিই কেউ ঘরের জানালাও খোলে নি।

কিন্তু দুষ্টু লোক এখন যেমন আছে, তখনো ছিল। গোডিভা নগ্ন হয়ে ঘোড়ার পিঠে করে ঘুরবে এই দৃশ্য দেখার লোভ সামলাতে পারেনি টমাস নামে এক যুবক। সে গোডিভাকে গোপনে দেখে এবং ধরাও পরে। টমাসের এই লুকিয়ে নারী দেহ দর্শন থেকেই “পীপিং টম” ইংরেজী ফ্রেইজটার উৎপত্তি। এদিকে গোডিভা নগ্ন হয়েও যেন হয়নি। কেননা, গোডিভার গায়ে কোন পোশাক না থাকলেও মাথায় ছিল লম্বা, ঘন চুল। নগ্ন হয়ে ঘোড়ায় চাপলেও তিনি তার চুল দিয়ে নিজেকে আবৃত করে রাখেন। তারপর তিনি সাফল্যের সাথে স্বামীর দেয়া শর্ত পুরন করেন এবং স্বামীও কথা অনুযায়ী কর কমিয়ে দেন। লেডি গোডিভার নগ্নতার পেছনে ছিল একদল মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবিকার ব্যবস্থা করা। আর বর্তমান সময়ের নগ্নতা হয় নিজেকে হাইলাইট করার জন্য। মানুষ কিন্তু বুঝে কোন নগ্নতা নোবেল ইনিশিয়েটিভ আর কোনটা মনোরঞ্জন করার। আর বুঝে বলেই ইতিহাসের পাতায় গোডিভা লিজেন্ড আর আধুনিকারা নির্লজ্জ।

Leave a Comment