এক যে ছিলো সাকিব আল হাসান!

  • ফারজানা আক্তার  
  • মার্চ ২৪, ২০১৮

পৃথিবীতে বাংলাদেশ নামে একটি দেশ আছে। সেই দেশে ১৬ কোটিরও বেশি মানুষ আছে। তাদেরই একজন সাকিব-আল-হাসান। পেশায় একজন ক্রিকেটার। বোলিং, ব্যাটিং কিংবা ফিল্ডিং- সব জায়গায় সমান পারদর্শী। এজন্য তাকে বলা হয় অলরাউন্ডার। তবে শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটেই নন, গোটা বিশ্ব ক্রিকেটেরও অলরাউন্ডার তিনি। মাঝে মাঝে বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও দেখা যায়। আবার তিনি একজন ব্যবসায়ীও। রেস্টুরেন্টের ব্যবসা আছে তার।

সাকিবের একটা পরিবারও আছে। মা, বাবা, ছোট বোন, বউ আর মিষ্টি একটা মেয়ে। সুন্দর পরিপাটি মিষ্টি একটা পরিবার। এতো কিছুর পরও সাকিব কেন যেন হঠাৎ করেই আলোচনায় উঠে আসেন। তাও আবার তার ট্র্যাকের বাইরের বিষয় নিয়ে। তাই প্রশ্ন উদয় হয় মনে; সাকিবের সমস্যা কী এবং কোথায়? কেন তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া হঠাৎ উত্তাল হয়? তাকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের কেন এতো জটিল আবেগ?

বিয়ের আগে প্রশ্ন তোলা হলো সাকিবের প্রেম নিয়ে। প্রেম করেছেন সত্য, তবে কাউকে জানালেন না কেন? যদিও বিয়ের ঘোষণা দেয়ার পর তার প্রেমের কথা অকপটে জানালেন সবাইকে। এরপর কৌতুহল বাড়তে থাকলো, কবে বিয়ে হচ্ছে সাকিবের?

হুম, এবার জবর খবর, সাকিব বিয়ে করেছেন বিরল তারিখে, মানে ১২-১২-১২ তে। নিন্দুকেরা ঠাস করে মন্তব্য করলেন, ঢং দেখে বাঁচি না! এরপরই নতুন করে প্রশ্ন- বৌভাতের অনুষ্ঠান কবে? এবারও চমকে দিলেন সাকিব। বৌভাত করলেন দারুণ তারিখে- ১১-১২-১৩ তে।

নিন্দুকরা চুপসে গেলেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, সাকিব কি নিজেকে বেশি রোমান্টিক দেখাতে চাচ্ছেন? সেজন্যই কি বিয়ে করলেন হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের চেহারার মতো মেয়েকে? যিনি কিনা থাকেন আমেরিকায়। সেখানেই বড় হয়েছেন।

গাল ফুলিয়ে কেউ কেউ বললেন, দেশে কি মেয়ের অভাব ছিল? সাত সমুদ্রের ওপার থেকে কনে আনতে হবে? এরপর খানিকটা নীরবতা। তারপর বলা হলো- বিয়ে করেছেন ভালো কথা, তাই বলে যেখানে যাবেন সেখানেই বউকে বগলদাবা করতে হবে?

এর কিছুদিন পর সাকিব তার সন্তানসম্ভবা বউকে নিয়ে চলে গেলেন আমেরিকায়। নিন্দুকরা এবার গেলেন রেগে। বললেন, সাকিবের সন্তান কেন আমেরিকায় গিয়ে ভূমিষ্ট হবে? বাংলাদেশে কি হাসপাতাল নাই? নাকি বাংলাদেশে কোনো সন্তানের জন্ম হয় না?

ভালোয় ভালোয় সন্তানের বাবাও হলেন সাকিব। এবার নিন্দুকেরা বিদ্ধ করলেন সাকিব আর তার বউকে। আমেরিকায় গিয়ে বাচ্চা হলো- ভালো কথা। কিন্তু ফেসবুকে কেন বাচ্চার ছবি পোস্ট করা হলো না? বিশ্বে কি শুধু সাকিবের বাচ্চাই হয়, অন্য মানুষের বাচ্চা হয় না? আর বাচ্চা হয়েছে ভালো কথা, তাই বলে সারাক্ষণ কাঁধে নিয়ে রাখতে হবে?

উফ্, আর কত? বিশ্ব ক্রিকেটের অলরাউন্ডার সাকিবের পদে পদেই তো দেখি দোষ! প্রশ্নের ঝড়। এসব লিখতে গেলে ১০-১২টা বইয়ে শেষ হবে কি না আল্লাহই জানেন। আমরা বাঙালিরা কখনও কখনও কাণ্ডজ্ঞানহীন! সেই সঙ্গে অকৃতজ্ঞও বটে! একটা অন্যরকম গুমোট অন্ধকারে বসবাস করা মানুষ আমরা। কারো ভালো থাকা, সুখে থাকা দেখতে পারি না। একইসঙ্গে একই মানুষের মাঝে অনেকগুলো গুণ বুঝি সহ্য করতে বা মানতেও পারি না।

সাকিব বিয়ের পর বউকে একা রেখে বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে উঠেন নি। সাকিব নিজে বাবা হয়ে দায়সারাভাব দেখান নি। নিজের দায়িত্বটুকু ঠিকঠাক ভাবে পালন করছেন। নিজের বউয়ের ওপর সন্তানের সবটুকু দায়িত্ব দিয়ে দেননি। নিজের পেশার দোহাই দিয়ে পরিবারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াননি। কাজের বাইরের সবটুকু সময় পরিবারকে দিচ্ছেন।  আমরা বাঙ্গালিরা এমন মানুষ দেখে অভ্যস্ত নই। তাই এমন একটা মানুষের উঠতে বসতে খেতে বা হেঁটে বেড়াতে দোষ ধরাই প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়।

মানুষের ভুল থাকবেই। আমার যেমন অনেক ভুল আছে, আপনারও আছে। সাকিবও তো মানুষ। তার কোনো ভুল থাকবে না- এমন নয়। ছোটোখাটো ভুল সব মানুষেরই থাকবে। কিন্ত আমরা কোনো ঘটনার সত্যতা না জেনেই হুট হাট মন্তব্য করে বসি। আমাদের এই স্বভাবটা খুবই খারাপ।

যে মানুষটা আমার আপনার আর তার নিজের দেশটাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন, তাকে কিছু একটা বলার আগে হাজারবার ভেবে নেয়া উচিত নয় কি? বিশ্বের কাছে নিজের দেশকে তুলে ধরার ক্ষমতা সবার থাকে না। যেসব অসাধারণ মানুষ এসব কাজ করছেন, তাদের তো বিন্দুমাত্র সম্মান দিতেও পারি না আমরা! এতটা অকৃতজ্ঞ আমরা না হলেও পারতাম!

বি :দ্র : গোনিউজের জন্য এই লেখাটা লিখেছিলাম গতবছর। একটু ইডিট করে এবারের তার জন্মদিনে ওমেন্স কর্নারে দিলাম। এমন অযৌক্তিক দোষে ভরা অলরাউন্ডার মনে হয় বিশ্ব দরবারে আর একটিও নেই।  তার জন্মদিনে তার দোষগুলো আরেকবার উতরে দিতে ইচ্ছে করলো! এমন দোষে ভরা নতুন একজন অলরাউন্ডার আমরা আবার কবে পাবো! এদেরকে যে আমাদের দরকার। খুব খুব দরকার। 

Leave a Comment