পরকীয়া অন্যায় এবং অবশ্যই এটি অন্যায়

  • রোমানা আক্তার 
  • মার্চ ২৯, ২০১৮

কোনভাবে, কোন পরিস্থিতিতে "পরকীয়া" সাপোর্ট করিনা। সংসারে অশান্তি, বোঝাপড়ায় সমস্যা, পারিবারিক বা মানসিক দ্বিধা নানাবিধ কারণে কিংবা কোনরকম কারণ ছাড়াই আমার পছন্দ বদল হতেই পারে, আমার স্বামীকে একসময় ভালো নাই লাগতে পারে, তার সাথে সময় কাটাতে বিরক্ত আসতেই পারে। অন্যকারো প্রতি আমি আসক্ত হতেই পারি। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমি পরকীয়া করতে পারিনা।

কেউ কেউ বলেছেন "নিজের মানুষের কাছে যাওয়া পরকীয়া কিভাবে হয়? এটাতো স্বকীয়া।"  না, এটা কোনভাবেই স্বকীয়া নয়। কারণ পরকীয়া তাকেই বলে যখন স্বকীয়ার (স্বামী/স্ত্রীর) মানুষটাকে ঠকিয়ে, গোপনে অন্যের সাথে সম্পর্ক জড়ানো হয়। যেই মানুষটাকে আমি পছন্দই করছিনা সেই মানুষটাকে স্বামী বা স্ত্রীর স্যাম্পল সাজিয়ে পছন্দের মানুষকে সমাজে গোপন রাখাকে কোন স্তরের পছন্দ বা অপছন্দ বলে? এটা স্রেফ ভণ্ডামিই বটে। আমি আমার স্বামীকেও পছন্দ করছিনা, পর পুরুষটাকেও করছিনা। তাদেরকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করছি মাত্র। স্বামী নামক ব্যক্তিটাকে ব্যবহার করছি সামাজিক পরিচয়ের জন্য, আর পরকীয়ার ব্যক্তিটাকে ব্যবহার করছি মানসিক শান্তির জন্য। ব্যাপারটা কি তাই নয়?

যুক্তি দেখানো হল, বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করা তথা ডিভোর্স আইনি জটিলতা নানাবিধ কারণে পরকীয়াই উত্তম পন্থা নিজের পছন্দকে কাছে রাখার জন্য। হাস্যকর যুক্তি। আইনি জটিলতায় পরেই গেলাম, আমি যদি আমার স্বামীকে চুপচাপ শান্ত হয়ে বলব, "আমি আজ সকালে অমুকের সাথে শুয়েছিলাম, সেদিন বিকেলে তমুক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম, তারো আগে একদিন প্রেম নিবেদন করেছিলাম, আগামীকাল আবার ঘুরতে যাব" তখন সত্যিকি স্বামী নামক ব্যক্তিটা আমাকে লক্ষি, সোনা বলে বুকে আগলে রাখবে? আমারতো মনে হয়না। ডিভোর্সের জটিলতা নিয়ে আপনি পরকীয়া চালিয়ে গেলেও একবার প্রকাশ করে দেখেন, আপনার কোর্টে যাবার দরকার নেই, কোর্ট আপনার কাছে আসবে।

মজার বিষয় কি বলেনতো, যে সমাজ সংসার আগডুম বাগডুম নিয়ে শুদ্ধ ভাবনায় থাকে সে কখনোই পরকীয়া করতে পারেনা। যার মনে সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসা, ভালোলাগা কাজ করে সে কখনোই পরকীয়া করতে পারেনা। হয় সে তার জীবন সাথীকে আঁকড়ে ধরে থাকবে নতুবা তাকে ছেড়ে নতুন ভালোবাসার কাছে চলে যাবে। একই সাথে দুজনকে ব্যবহার করবেনা। খুব বাজে রকমের সত্যি হল, পরকীয়ায় লিপ্ত দুজনের মাঝেই "মজা নেয়া" ব্যাপারটাই ঘুরপাক খায়। একপক্ষ নিশ্চিতভাবে মজা নেয় বিবাহের ঝামেলা নেই এই ভেবে, অন্য পক্ষ মজা নেয় একই কথা ভেবে। তাই এই পরকীয়াকে আদর্শ প্রেম বলে প্রেম শব্দটাকে কলুষিত করতে চাইনা।

হ্যা, যদি করতেই হয় স্বকীয়াই করব, পরকীয়া নয়। নিজের পছন্দের কাছে যাবো এতে এতো লুকোচুরির কি? আর যাকে অপছন্দ করি তাকে ছাড়তেই এতো দ্বিধা কি? বুকের পাটা এত নড়বড়ে হলে, পায়ের তলায় মাটি না থাকলে একজনকে ছেড়ে অন্যজনের দিকে তাকানোরি বা কি দরকার? লজ্জা থাকা উচিত। ভন্ডামিরো একটা সীমা আছে, যুক্তিরো একটা লেভেল আছে। পরকীয়া অন্যায় এবং এটি অবশ্যই অন্যায়। 
 

Leave a Comment