ধর্ষণের জন্যে ধর্ষক দায়ী!

  • আজমল জয়
  • মার্চ ২৯, ২০১৮

১)

কোনো কিছুর মূল্য দিয়েই একটি মেয়ের জীবনমৃত্যুর প্রশ্নকে, সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়ানো বিভৎস এক অভিজ্ঞতাকে, সেসব অমানুষদের বিকৃত রুচিকে আপনি পোশাকের অজুহাতে আড়াল করতে পারেন না। আড়াল করতে পারেন না ধর্মের অজুহাতে বা চরিত্রের দোহায় দিয়ে। এমন কী তর্কের খাতিরে মেনে নিলেও আপনি পারেন না। কারণ এই দুইয়ের দূরত্ব কয়েক কোটি আলোকবর্ষ দূরে।

২)

ধর্ষকের কাছে পোষাক বিবেচ্য নয়, অসংখ্যবার তার প্রমাণ হল। পোশাকই কারণ হলে, নারী-পুরুষের পার্থক্য বুঝার আগে, জীবন কী বা যৌনতা কী বুঝার আগে, বয়সটা দশ না পেরোনোর আগে, নিষ্পাপ বাচ্চাকেও ধর্ষিত হতে হত না। হতে হতনা তনু, লিমাদের। মরতে হতনা ভল্লুক বা হায়েনার হাতে। দিনের পর দিন নির্যাতিত ও ধর্ষিত হয়ে দেহের মৃত্যুর আগেই হাজারবার মানুষিক মৃত্যু হওয়া বিউটির লাশও শোকের মাসে সবুজের উপর নিতর হয়ে শুয়ে থাকত না।

৩)

পোশাক না ধর্ষণ করায়, না টেকায়। এরপরেও ধর্ষণ পোশাকে না কি যারা পোশাকের কথা বলে তাদের মাথায়, এসব তর্ক অর্থহীন। কেও পোশাককে দায়ী করল কেন, এটা নিয়ে প্রতিবাদ আরোবেশি অর্থহীন। বরং সুবিধাবাদীরাই মূল অপরাধীদের আড়াল করতে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট ভোগের আশায় বা নিজেদের সার্থোদ্ধারে দিনের পর দিন এসব নিয়ে প্রতিবাদ করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে রাখে। মাথায় যথেষ্ট বুদ্ধি রেখেই তারা এই চাল চালে। এই চালবাজীর জালে খেই হারিয়ে অনেকেই তাদের মানবতাবাদীর উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও ভাবতে শুরু করে এবং তাদের সুরেই সুর মেলাতে শুরু করে। এসব দেখে বরং ধর্ষকরাই আড়ালে হাত তালি দেয়, তারা আলোচনার বাইরে আছে বা তাদের রেখেছে বুঝতে পেরে।

৪)

ধর্ষণের জন্যে ধর্ষক দায়ী। ধর্ষণের জন্যে দায়ী বিচারহীনতার সংস্কৃতি। ধর্ষনের জন্যে দায়ী ধর্ষকের পৃষ্টপোষকরা, ক্ষমতালিপ্সুরা। হওক সেটা দেশ, ধর্ম, ব্যক্তি বা পরিবার। দায়ী তারা, যারা এই সংস্কৃতির গোড়ায় জল দিয়ে চলছে, দিনের পর দিন।

৫)

প্রতিবাদ করুন সরাসরি ধর্ষকের বিরুদ্ধে, এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, ধর্ষকের পৃষ্টপোষকদের বিরুদ্ধে। সাহস নেই প্রতিবাদের? অল্প অল্প করে শুরু করুন। ক্ষমতা দিয়ে থামাতে না পারলে, হাত দিয়ে থামান, সেটা না পারলে মুখে প্রতিবাদ করুন। সেটাও সম্ভব না হলে মনে মনে করুন। দোহায় লাগে, তবুও ধর্ম, পোশাক এসব তর্ক-বিতর্ক খেলা চালিয়ে নিয়ে মূল অপরাধীদের অপরাধ আড়াল করতে সাহায্য করবেন না।

Leave a Comment