সবাই যদি চাকরির পিছনে ছুটে, তবে চাকরি দিবে কে?

  • তৌহিদুল ইসলাম রাব্বি
  • মার্চ ৩১, ২০১৮

সে অনেক দিন আগের কথা। দাদুদের যুগের কাহানী। কেউ যদি বি.এ পাশ করতো আশে-পাশের দশ গ্রাম এর লোক দেখতে আসতো। আর দশ গ্রাম এর লোকরা জ্ঞানী মানতো তাকেই। আর যে কোন সমস্যাই পড়লেই তার শরণাপন্ন হতো মানুষ। হ্যা আমি সেই দাদুদের যুগের কথা বলছি। যে সময়ে মানুষ প্রকৃত শিক্ষিত হতো। যদিও শিক্ষার হার কম ছিল কিন্তু যে শিক্ষিত হতো তার ভিতর শিক্ষার আলো ছিল।  বর্তমানে সে আলো খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বর্তমান সময়ে যদি ১০০ ছাত্র-ছাত্রী কে জিজ্ঞেস করা হয়, তুমি কেন লেখাপড়া করো? সবার উত্তর এমন টাই হবে যে, চাকরির জন্য বাবা-মা লেখাপড়া করতে বলছে তাই। 

যে যাই বলুক না কেন সবার কথার অর্থ একই দাঁড়াবে চাকরির জন্য। আপনাদের সাথে ছোট্ট একটা গল্প শেয়ার করি। দুই বন্ধু গ্রাজুয়েশন শেষ করে একজন চাকরির পিছনে ছুটতে লাগলো। আর একজন তার গ্রাজুয়েশন শেষ করার আগেই ছোট্ট একটা রেস্তরা দিল। প্রায় দশ বছর পর আবার তাদের দেখা হলো। তখন তার বন্ধু ছিল একজন কর্পোরেট অফিসার। আর তার অন্য বন্ধু ছিল কয়েকটি রেস্তোরার মালিক। এখন ভেবে দেখুন লাইফে কার কতটা সাকসেস??? আপনার মনে হতেই পারে, যে বন্ধু কর্পোরেট অফিসার সে হয়তো বেশি সাকসেস হয়েছে জীবনে। এটা যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনার  ধারনা ভুল। একটু গভীরে গিয়ে চিন্তা করে দেখুন। রেস্তোরা মালিকের ছেলে গ্রাজুয়েশন শেষ করেই তার বাবার বিজনেস চাইলেই বাড়াতে পারবে কিন্তু তার অন্য বন্ধুর ছেলে চাইলেও কিন্তু সেটা সম্ভব না। 

তাকে কর্পোরেট লাইনে ঢুকতে হলে বা বিজনেস শুরু করতে হলে তার আবার সব কিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। আর ততদিনে রেস্তরার মালিক এর ছেলে বড় একটা কোম্পানির এমডিও হতে পারে। যাই , হোক তার মানে এই না যে সবাই কর্পোরেট লাইন ছেড়ে বিজনেস করুক।এটা একটা উদাহরণ ছিল মাত্র। আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন? আপনি ২০ বা ২২ বছর পরিশ্রম করছেন শুধু মাত্র একজন চাকর হওয়ার জন্য। যেখানে আপনি শুধুই একজন চাকর। হ্যা আপনি অবাক হলেও এটাই নির্মম সত্য। আমরা সবাই ছোট বেলা থেকে কষ্ট করি একজন উন্নত মানের চাকর হওয়ার জন্য। আপনার ইচ্ছে স্বপ্ন সব মাটি চাপা দিয়ে আপনি একজন চাকর হতেই ছুটছেন। আর হ্যা এটাই আমাদের সিস্টেম। যেখানে আমরা সবাই আবদ্ধ। তারপরও কিছু কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। 

সবাই যদি চাকরির পিছনে ছুটে তবে কে চাকরি দিবে? প্রশ্ন টা যদিও ফানি বাট কখনো কি ভেবে দেখেছেন আসলেই কে দিবে চাকরি আপনাকে??? আমরা কথায় কথায় বলি ইহুদিরা সারা বিশ্ব কে কন্ট্রোল করছে। হ্যা সত্যিই তাই, তারাই কন্ট্রোল করছে। কিন্তু আমাদের মাধ্যমে সেটাই করছে আর আমরা চাকর চাকরই থেকে যাবো সারাজীবন। এর করন আছে অনেক গুলো যেমনঃ ১.তাদের শিক্ষাব্যবস্থা। ২.তাদের লাইফ স্টাইল। ৩.তাদের একাত্মবাদ এর মেন্টালিটি। এছাড়াও আরো অনেক কাজের জন্য তারা এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বুকে তাদের ক্ষমতা দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আপনার মথায় এখন প্রশ্ন আাসতে পারে, সত্যিই তো! তাহলে এ থেকে মুক্তির উপায় কী??? কথায় আছে যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যত উন্নত সে দেশ তত উন্নত। 

হ্যা এটাই চিরন্তন সত্য একটি কথা,আপনি মানেন বা না মানেন এটাই সত্য। যে দেশে প্রকৃত শিক্ষার হার যত বেশি সে দেশ ততটাই উন্নত। আমাদের দেশকে উন্নত করতে হলে সবার প্রথমে আমদের আগামী প্রজন্ম কে প্রকৃত শিক্ষায় গড়তে হবে। যেখানে থাকবে না কোন চাকরির লোভ,শুধুই তার ভিতর থাকবে শিক্ষার লোভ। এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাদের ভিতর দেশপ্রেম জাগিয়ে তুলতে হবে। তাহলেই বদলে যাবে আমাদের দেশ আর এগিয়ে যাবো  আমরা। হয়তো আপনি একথা গুলো অনেক বার শুনেছেন। আর এখন এটাই ভাবছেন যে আদৌ এটা সম্ভব না। ঠিক আপনার মতো দেশকে ভালবাসে কিন্তু সেও একই কথা ভাবছে। ভেবে দেখুন তো আপনার মতো এরকম সবাই ভাবছে তাহলে কী হবে??? আবার মনে করন সবাই পজেটিভ ভাবছে তাহলেই বা কি রকম হ্তো??? 

ধুর অামার এত সময় কই ভাববার! আমি অনেক ব্যস্ত আমার অনেক কাজ আছে।  আপনার যদি এখন ভাবার সময় না থাকে তাহলে দেশেরও সময় থাকবে না আপনার আগামী প্রজন্ম নিয়ে ভাববার। আর সব কিছুই থমকে যাবে এভাবে। আমাদের বেলায় শুধু আমাদেরটাই ভাবি তাই হয়তো আমরা এখনও বিশ্বের দরবারে অবহেলিত। আমরা রাস্তার টাকা মেরে গাড়ি কিনি কিন্তু সেটা চলতে যে একটা সুন্দর রাস্তার প্রয়োজন সেটা কখনো ভাবিই না। আর এটাই আমাদের মেন্টালিটির প্রবলেম। শুধু এর জন্যই আমরা এতটা পিছিয়ে। আর আমাদের এটা থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র আমাদের প্রকৃত শিক্ষাব্যবস্থা। 


 

Leave a Comment