চাকরি চাই! ভাই চাকরি চাই! চাকরি ছাড়া উপায় নাই।

  • রেজবুল ইসলাম
  • মার্চ ৩১, ২০১৮

কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখলাম। ‘লিফট ম্যান’ নিয়োগ দেয়া হবে এবং শিক্ষ্যাগত যোগ্যতা মাস্টার্স পাশ। একজন মাস্টার্স পাশ ছেলে সারাজীবন লেখা পড়া শেষ করে লিফট ম্যান হবে। করবেই কী? দেশে চাকরি নেই। ছোট বেলা থেকে আমাদের বাবা-মায়েরা আমাদের বলে। ‘’বড় হবি, বড় চাকরি করবি” কিন্তু কথা হলো চাকরি দেবে কে? সবাই তো চায় চাকরি করতে। আমাদের দেশে মাশআল্লাহ শিক্ষিত ছেলে মেয়ের আকাল নেই। অনার্স, ডিগ্রী, মাস্টার্স, বিএসসি কত রকমের স্টুডেন্ট। সবাই পাশ করে করে বসে আছে কেউ আমাকে চাকরি দেবে। কাজ যদি না থাকে তাহলে চাকরির ক্ষেত্র টা আসবে কোথা থেকে? এটার মূল কারণ দেশে বিনিয়োগ নেই। বাংলাদেশে দেশের এবং বিদেশের কোম্পানি বিনিয়োগ করছেনা। আর শিক্ষিতর হার বেড়েছে কিন্তু কমেছে মান। যার ফলে যে কোন কোম্পানি একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষকে খুবই কম পারিশ্রমিক দিয়ে পুষছে। গরু ছাগলের থেকেও মানুষ সস্তা।

বিপ্লবের পর চীন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য প্রায় ১২ বছর তাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ রেখেছিলো। চীন সরকারের বক্তব্য ছিল, এত ছেলেমেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কি করবে? কোথায় চাকরি পাবে? কেই বা চাকরী দিবে? এত হাজার হাজার বেকারকে চাকরী দেয়ার মত প্রতিষ্ঠান চীনে নেই। এই সময়টায় চীন ছাত্রছাত্রীদের আধুনিক প্রশিক্ষন দিয়েছিল নানা ধরনের ট্রেড কোর্সে। স্বল্প মেয়াদী ট্রেড কোর্স শিখে চীনের ছেলেমেয়েরা স্বাবলম্বী হয়ে গেলো। প্রতিটি বাড়ি গড়ে উঠল একটা করে ছোট ছোট কারখানায়। পরিবারের সবাই সেখানে কাজ করে। বড় ফ্যাক্টরী করার আলাদা খরচ নেই। ফলে পন্যের উৎপাদন খরচ কমে গেলো। বর্তমানে যে কোন পন্য স্বস্তায় উৎপাদন করার সক্ষমতায় তাদের ধারে কাছে কেউ নেই। 

পৃথিবীর প্রতিটি অঞ্চলে চাইনিজ পন্যের প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তারা বিশ্ব বানিজ্যের এক অপ্রতিরোধ্য পরাশক্তি। উপযুক্ত মুল্য দিলে তারা এমন জিনিস বানিয়ে দেবে যার গ্যারান্টি আপনি চাইলে ১০০ বছরও দিতে পারবেন। বাংলাদেশে সিমফোনি, ওয়ালটনসহ বহু প্রতিষ্ঠান এই চায়নার বদৌলতেই কিছু করে খাচ্ছে। অপর দিকে বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে বেকার বানানোর কারখানা। এর আধুনিক নাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতি বছরই দুই একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরী হচ্ছে আর বের হচ্ছে কয়েক হাজার বেকার। দল বেঁধে পড়ানো হচ্ছে বিবিএ, এমবিএ অথবা চিরচরিত সেই ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ানিং। এতো বেকারের ভীড়ে চাকরী বাংলাদেশে একটি সোনার হরিন। কোম্পানীরাও এটা বুঝে। ফলে এই দেশের শিক্ষিত ছেলেরা প্রত্যাশা অনুযায়ী বেতন পায় না, চাকরী পায় না আর পেলেও সহ্য করতে হয় মালিক অথবা বসের নানাবিদ অদ্ভুত পরীক্ষা ও অপেশাদার আচরন।

অবশ্য, দীর্ঘদিন বিভিন্ন জাতির শোষনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে আমাদের জাতির জীনে প্রবেশ করেছে ভৃত্যগিরির মানসিকতা। আমরা মনে করি স্যুট, টাই পড়ে কোন কাজ করতে পারলেই বুঝি সেখানেই জাতির সফলতা। এটা আসলে একটি অপ্রকাশ্য দৈন্যতা, যে কেউ স্বীকার করছেন না। আমি আমার কথাতেই উদাহরণ দিই। আমি ম্যটস এ ভর্তি হই ২০০৯ সালে। সে সময় সারা বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ম্যাটস ছিল ১২ টি। এখন ম্যটস এর সংখ্যা ৩০০ এর উপরে। হাজার হাজার ছাত্র ম্যটস এ পড়ছে অথচ সরকারি কোন সার্কুলার নেই। বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৫০০০ টাকা দিয়ে এদের সারা মাস খাটিয়ে নিচ্ছে। ফলাফল স্বরুপ দেশে বাড়লো কয়েক হাজার বেকার। এভাবেই বাংলাদেশ বেকার তৈরী করে যাচ্ছে। একটা করে সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিচ্ছে। এটা নিয়ে এবার ঘরে বসে তা দাও।

তাহলে এখন যারা চাকরি করছে তারা কী করে চাকরি পেলো?  এবার আসা যাক আমাদের ব্যর্থতায়। আমাদের দেশের বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে নামে শিক্ষিত হয়। পড়া মানে তারা বই পড়ে খাতায় লিখে আসে মাঝে মাঝে তাও পারেনা, নকল করে লিখে দিয়ে আসে। পৃথিবী সম্পর্কে এদের নেই কোন জ্ঞান। পেটে বোম মারলেও বের হবেনা একটি ইংরেজি শব্দ। কম্পিউটারের অ আ ক খ কই থাকে এরা বলতে পারেনা অথচ এরাও ভাবে, “আমি চাকরি পাবো” কীভাবে? কেন দেবে আপনাকে চাকরি? নিজেকে যোগ্য করার দ্বিতীয় কোন পথ আছে কি? আর যারা যোগ্যতা বাদেও মামা-খালু, টাকার জোড়ে চাকরি পাচ্ছ তাতে শেষ পর্যন্ত দেশেরই ক্ষতি হচ্ছে।

এই দেশের অর্থনীতির জন্য সামনে খুব ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। তাই, বাংলাদেশের উচিত চীনের মত একটা পদক্ষেপ নেয়া। চাকরী করে দেশের উন্নতি হয় না, আমাদের উদ্যোক্তা প্রয়োজন। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন প্রয়োজন, গুরুত্ব দেয়া উচিত কর্মমুখী শিক্ষায়। সরকার একটু সচেতন হলেই খুব অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই আমরা এই দেশের চেহারা পালটে দিতে পারি। ঘরে ঘরে সার্টিফিকেট বিলানো বন্ধ করে বিশ্ব বাজার ধরতে হবে আমাদের। অনেকে নিজ উদ্যগে শুরু করে দিয়েছেন ফ্রিলেন্সিং যা দিয়ে লাখ লাখ বৈদেশিক টাকা ইনকাম করছে যার জন্য লাগেনা সার্ফিকেট। লাগে যোগ্যতা।

আমার অনেক বন্ধুই এখনও পেটে পাথর বেধে বসে আছে তাকে কেউ চাকরি দেবে। আমি কারো মুখ পানে চেয়ে না থেকে হাতে হাত দিয়েছি কীবোর্ড এ। অবশ্য লিখে টাকা আর্ন করা যায় এ কথা এখনও এদেশের কেউ বিশ্বাস করতে পারেনা। আজব হলেও সত্যি অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা একটা আর্টিকেল লেখার জন্য যে পরিমাণ টাকা দেয় তা এদেশের সাধারণ একজন চাকরি জীবির এক বছরের বেতনের সমান। যে মেশিন দিয়ে হাজার হাজার সার্ফিকেট বের করেছে সে মেশিন বানানোর কাজ করলেও বাংলাদেশে এতো বেকার থাকতোনা। চাকরির জন্য সরকারকে গালি না দিয়ে নিজেকে যোগ্য করে তুললে সরকারের দিকে বা কোন প্রাইভেট কোম্পানির দিকে চেয়ে থাকতে হবেনা। চাকরি আপনাকে খুঁজবে!

 

Leave a Comment