আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে চাইলে সেটা বিপ্লবে রূপ নেয়!

  • আহমেদ ফয়সাল 
  • এপ্রিল ১০, ২০১৮

বিষয়টা আমার জানা নেই। তবু বলছি। আমার জানা মতে সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেট টিমে কোটা বিদ্যমান। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী দলে একজন কালো বর্ণের খেলোয়ার রাখতে হবে। তবে যোগ্যতায় একাধিকও হতে পারবে। বাকী ১০ জন সাদা বর্ণের। তাই বলে বিষয়টা এমন না যে, ১০ জন কোটায় খেলবেন। ওই ১০ জনেরও যোগ্যতা প্রমান দিয়ে দলে থাকতে হবে। এখানে একটা বিষয় ক্লিয়ার, ১১ জনে ১ জন কোটা, মানে বাকী ১০টা নাম কোটা মূক্ত। ওই ১০ টা সবার জন্য প্রযোজ্য।

গোটা দেশ আজ কোটা নিয়ে বিভক্ত, কিছু বলতেও ভয় লাগে। যে কোন পক্ষে বলতেই ভয় লাগে। যারা ভিসির ভবনে হামলা চালিয়েছে তাদের দেখলে ভয় লাগে, পুলিশের গ্যাস আর বুলেট ভয় লাগে, আবার হলের ভিতরে ঢুকে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপরে হামলাকারীদের ভয় লাগে।

উপজাতিদের জন্য কোটা প্রয়োজন আছে, মু্ক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য কোটা প্রয়োজন আছে, আবার নারী কোটারও প্রয়োজন আছে। নারী কোটা নিয়ে একটা কথা উঠতে পারে, নারীরা তো সম অধিকার চায়, তাদের জন্য আলাদা কোটা কেন? নারীরা বেশ এগিয়েছে, কিন্তু সব নারীরা তো আগাতে পারেনি। চাকুরী ক্ষেত্রে নারীদের আরও এগিয়ে নিতে নারী কোটার প্রয়োজন আছে। তবে কোন কোন জব সেক্টরে দেখা যায় নারীদের অংশগ্রহন পরিপূর্ন হয়েছে, সেক্ষেত্রে ওই সেক্টরে মনে করি কিছুদিনের জন্য নারী কোটার প্রয়োজন থাকবে না, আবার যখন অসমতা দেখা দিবে, তখনই কোটা ব্যবস্থা করতে হবে। এটার জন্য একটা নির্দিষ্ট নিয়ম থাকবে, যে নিয়ম মেনে ওই সেক্টর কাজ করবে।

উপজাতি কোটা। বাংলাদেশে যতগুলো উপজাতি গোষ্ঠী আছে, সে তুলনায় কোটার পরিমান কম। উপজাতিদের এগিয়ে নিতে কোটার প্রয়োজন আছে। উপজাতি একটা মেয়ে এসএসসি পাশ করে ঢাকায় এসে কোটার কারণে ভালো কলেজে ভর্তি হলো। এইচএসসিতে সে ভালো রেজাল্ট করলো। এখন ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা। সে কিন্তু এগিয়ে গেছে। সে তার কোটা একবার ব্যবহার করেই এগিয়ে গেছে। তার যদি যোগ্যতা থাকে কোটায় না গিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার, আপনি কোন শক্তির বলে তাকে কোটায় রাখবেন? সে তো অলরেডি এগিয়েই গেছে, তার তো কোটার প্রয়োজন নেই।

মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই আমরা মানচিত্র পেয়েছি। তাদের কাছে আমরা সবসময়ই ঋণী। একটা চাকুরী ক্ষেত্রে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকে। মনে করুন একটা চাকুরীতে ২০০ জন নিয়োগ দেয়া হবে, তাহলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৬০টা বরাদ্দ। কিন্তু ৬০টা মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিপরীতে আবেদন আসলে ৫০ টা। তখন হিসাবটা কি হবে? যে ৫০টা আবেদন আসলো তারা সবারই কি যোগ্যতা আছে? ন্যূনতম যোগ্যতার বিচারটা কি রাখার প্রয়োজন ছিলো না? আমি কিন্তু একবারও বলছি না, এই কোটা ৩০%টা থেকে কমাতে হবে। আমি বলছি ন্যূনতম যোগ্যতার মাপকাঠি রাখা দরকার। একজন ভালো রেজাল্ট করে যদি বেকার বসে থাকে, আর টেনে টুনে পাশ করে যদি বড় কর্মকর্তা হয়, সেটা কি দেশের জন্য ভালো হবে? আর হ্যাঁ, মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু দেশের ভালো চেয়েই অস্ত্র হাতে নিয়েছিলো। 

আমরা যে কোন বিষয়েই দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাই। মেসি নেইমার প্রসঙ্গ বলেন, আর ডোনাল্ট ট্রাম্প বলেন, আমাদের দুই ভাগে ভাগ হতেই হবে। কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করছে ছাত্ররা। এটা কোটা সংস্কারের দাবী তুলেছে। এরা কিন্তু বলে নাই কোটা বাদ দিতে হবে। একটা দেশের নাগরিক হিসাবে এমন দাবী করা কিন্তু তার অধিকার আছে। এক শ্রেনী এই আন্দোলনের সাথে আবার রাজনীতি মেশানো শুরু করে দিছে। আর দিবেই তো, আমরা হচ্ছি রাজনীতির সাথে পলিটিক্স করা মানুষ। ৩টা রাজনৈতিক দলের কথা বলছি। আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামাত। 

এই ৩ দলের ছাত্র সংগঠন হচ্ছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র শিবির। আচ্ছা এই ৩ টা ছাত্র সংগঠন তৈরি করা হয়েছে কেন? ছাত্রদের কল্যাণের জন্যই তো, নাকি? কিন্তু চলমান এই ছাত্রদের দাবী নিয়ে এই সংগঠনের ভূমিকা কি? মানলাম ছাত্রলীগ খারাপ, ছাত্রদল সন্ত্রাস, ছাত্র শিবির জঙ্গী।  কিন্তু নিরীহ ছাত্ররা কি? তাদের উপর হামলা করা হলে তারা কোথায় যাবে? এতক্ষন পড়ে মনে মনে ভাবছেন, কোন বালছাল লেখছে, কোন কিছুই স্পষ্ট না। ওই যে আগেই বলছি- যারা ভিসির ভবনে হামলা চালিয়েছে তাদের দেখলে ভয় লাগে, পুলিশের গ্যাস আর বুলেট ভয় লাগে, আবার হলের ভিতরে ঢুকে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপরে হামলাকারীদের ভয় লাগে।

ছাত্রদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে পাশে দাঁড়াতে ভয় লাগে, আবার তাদের দমাতেও ভয় লাগে, আবার চুপচাপ থাকলেও ভয় লাগে। কোটা সংস্কারের বিষয়ের সাথে মনে হয় না কোন রাজনৈতিক প্রভাব আছে। কিন্তু তাহলে কেন রাজনৈতিক ভাবে তাদের দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? ছাত্রদের দাবী যদি ন্যায্য হয়, তাহলে তা অবশ্যই মেনে নিতে হবে। আবার দাবী যদি ন্যায্য নাও হয়, তাহলেও তা ভেবে দেখে সমঝোতার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। কাউকে দমিয়ে রাখতে চাওয়া ঠিক না। আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে চাইলে সেটা বিপ্লবে রূপ নেয়।

Leave a Comment