ওসব দিবস-টিবস আমাগে নেই!

  • আল আমীন
  • মে ১, ২০১৮

মহান মে দিবস আজ। বিশ্বব্যাপি বিভিন্নভাবে পালিত হচ্ছে এই দিনটি। স্কুল কলেজ, অফিস-আদালতে ঘোষণা করা হয়েছে সরকারি ছুটির দিন। যদিও বেড়েছে শ্রমিকের মজুরী। দিনটি শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় দিন হিসেবে বলা হলেও এবং সেভাবে পালন করা হলেও আদৌ কি শ্রমজীবীদের কাছে এই দিনটি অতটা গুরুত্ববহ, তারা কি সত্যি তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।


মে দিবসেও ধানের ক্ষেত নিয়ে ব্যস্ত চাষী। ছবি : আল আমীন 
 

১৮৮৬ সালের এই দিনে শ্রমিকরা আট ঘণ্টা কাজের অধিকারের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের সব শিল্পাঞ্চলে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন। এইসব ইতিহাস আমরা সবাই-ই কমবেশি জানি। শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে বিশাল শ্রমিক জমায়েত ও বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ১১ জন। এরপরই ওই শ্রমিক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। গড়ে ওঠে শ্রমিক-জনতার বৃহত্তর ঐক্য। অবশেষে তীব্র আন্দোলনের মুখে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকার।


বৈশাখের প্রখর রোদ উপেক্ষা করেও কাজ করছে শ্রমিকরা । ছবি : আল আমীন 
 

অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২য় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের সব দেশেই আজ পালিত হচ্ছে দিবসটি। এসবও জানি। কিন্তু এই শ্রমজীবী মানুষগুলোই আজকের দিনেও কোনো ছুটি পায় নি। জীবিকার টানে ঠিকই বেরিয়ে পড়তে হয়েছে ঘর ছেড়ে এই প্রখর রোদে।

কাল প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে গেছে ধান সেই চিন্তাই অনেক চাষীর মাথা হেঁট হয়ে আছে। কারো ধান কাটা ছিল ভিজে গেছে। কারো এখনো ঠিকমতো পাকেই নি বলে, কাটা হয় নি ক্ষেতের ধান; তলিয়ে গেছে বৃষ্টির পানিতে। আজ ঠিকই তড়িঘড়ি করে নেমে পড়েছেন ধান উদ্ধারে। এমনই এককজন, বাগেরহাটের প্রত্যন্ত এক গ্রাম এলাকার চাষী। উনি তার পুরো জমির ধান কয়েক দিন বসে একাই কেটেছেন। বাড়তি শ্রমিক নেয়ার সামর্থ্য নেই। আজও ঠিকই দেখা গেল সকাল থেকেই তার ধানের জমিতে ব্যস্ত। এক প্রশ্নের উত্তরে সে বললো, “আরে ভাই, আমাগে আবার মে-দিবস! ওসব দিবস-টিবস আমাগে নেই! কাজ কত্তি ফাল্লি নাহলি খাব কী?” 


এবারে মে দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে , “শ্রমিক মালিক ভাই ভাই, সোনার বাংলা গড়তে চাই।“ এখন কথা হলো, কারা এই শ্রমিক বা শ্রমজীবী মানুষ! এঁরা আমাদেরই তো কারো বাবা, ভাই, চাচা বা মা-বোন। রিকশাওয়ালা মামা, গার্মেন্টসের কর্মী বা আমদের বাসার বুয়া বা কাজের লোক সবাইই কারো না কারো আপনজন। সর্বপরি এঁরাও মানুষ। সুতরাং আমাদের উচিত এঁদের কারো সাথে অধস্তন বা নীচু শ্রেণীর ক্যাটাগরিতে  না ফেলে, ভাইয়ে ভাইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যার যার কাজ করে যাওয়া, সুন্দর পৃথিবী তবে হতে পারো আরো সুন্দর আর শৃঙ্খল! আর এর জন্য সবারই মানবিক হওয়া দরকার।

আর/এস 

Leave a Comment