স্যানিটারি ন্যাপকিন কেবলি একটা ন্যাপকিন, এটা কোন ব্যথানাশক নয়।

  • রোমানা আক্তার
  • আগস্ট ১৯, ২০১৮

টিভিতে যখন স্যানিটারি ন্যাপকিন এর বিজ্ঞাপন দেখি তখন হা করে তাকিয়ে থেকে ভাবি, এমন ক্রাইসিস মোমেন্টেও মেয়েরা কি এগিয়ে!  বাস্কেটবল খেলে, দৌড়ে ফার্স্ট হয়, ক্লাশে যায়, বনে জঙ্গলে ফটোগ্রাফি সহ আরও কত কি যে করে। এই সময়ে তাদের হারতেও মানা। ন্যাপকিন পরে ফিল্ডে নেমেছে, হারানোর সাধ্যি কার??

বিজ্ঞাপন শেষ টিভি বন্ধ করে খোশ গল্প করার জন্য বান্ধবীরে ফোন দিলে বলে, "ফোন রাখ, পেটে ব্যথা করছে/মাথা ঝিমঝিম করছে/ ভাল্লাগেনা" সহ আরও নানা বায়না। কারণ একটাই, পিরিয়ড চলছে। এই অবস্থা কেবল একজনের না, দেশের অধিকাংশ নারীর অবস্থাই এমন। প্রতিমাসে পাঁচটা দিন কিসের ভেতর দিয়ে যে যায় তা কেবল এই নারীরাই জানে। কত মেয়ে যে পেটের ব্যথায় চিৎকার করে কাঁদে এমনকি অজ্ঞান হয়ে যায় তা এই নারীরাই জানে। এই ব্যথা যে কেমন ব্যথা তা কোনদিন কাউকে অনুধাবন করানো সম্ভব না। দুই সন্তানের জননী একদিন পিরিয়ডকালীন তীব্র ব্যথায় বলেছিলেন, "কাচা মাংস পত পত করে কেটে আমার ডেলিভারির সময়ো আমার এত কষ্ট হয়নি যত কষ্ট এই বা**র  সময় পাই।" শুধু ব্যথায় বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকার সুযোগ পেলেও রক্ষা নেই, উঠে যেতে হয় ওয়াশরুমে, নিজেকে পরিষ্কার রাখার ব্যাপারো কম নয়।

ওদিকে কাজ করা নারীদের হয় বেহাল দশা। না পারে কইতে, না পারে সইতে। খিটমিটে মেজাজে, পেটে ব্যথা নিয়ে করতে হয় রাজ্যের কাজ। এক পুলিশ আপুকে জিজ্ঞাসা করলাম, "ওই সময় ট্রেনিং কেমন লেগেছিল?" তিনি বললেন, "সিক নিয়েছে কয়েকবার, বাকি দিনগুলো টেনেটুনে পাড়ি দেয়া।" ক্রিকেটার বান্ধবী আমার সেসময় একবেলা প্রাকটিস করে। যে যার সাধ্যমত চেষ্টা করে এই সময়টুকু নিজেকে আরামে রাখার।

স্যানিটারি ন্যাপকিন কেবলি একটা ন্যাপকিন। এটা কোন ব্যথানাশক নয়, এটা কোন মেডিসিন নয়। খোঁজ নিয়ে দেখবেন, এইসব ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন করা মডেলগুলো পিরিয়ড বহির্ভূত সময়েই আরামসে সুটিং করেছে। তাই ওদের বিজ্ঞাপন দেখে আপনি আপনার প্রিয় মানুষটার প্রতি পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে কাজের চাপ বাড়িয়ে দেবেন না। বিশ্বাস করুন, আপনার সাথের এই মেয়েটি সুপার উইমেন। তাকে কোনকিছুই থামাতে পারেনা। মাসের এই পাঁচটি দিন থাকতে দেন তার নিজের মতো করে। ভুলে যান, "কি চাইলাম, আর কি পাইলাম" এই হিসেবগুলো। বাকি পঁচিশটা দিনতো আছেই, রাগ-দু:খ-অভিমানের হিসাব মেটানোর জন্য।

Leave a Comment