আমার বাচ্চা আমি নিবো যখন খুশি তখন নিবো 

  • ফারজানা আক্তার
  • সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮

আসিফ এবং আয়েশা ভালোবেসে বিয়ে করেছেন বছর দেড়েক আগে। আয়েশার বাসায় বিয়ের খুব চাপ ছিলো,  অন্যদিকে আসিফের তখনো চাকরি হয় নি। দুই বাসার কেউ তাদের বিয়েতে রাজি ছিলো না। বেকার অবস্থায় আসিফ আর আয়েশা সাহস করে নিজেরাই বিয়ে করে নিলো। তাদের ভাগ্য অবশ্য একদিকে ভালো কারণ বিয়ে করার দুইদিনের মধ্যেই দুই পরিবার খুব খুশিতে না হলেও তাদের মেনে নিলো। দেড় বছরের মধ্যেই তাদের ঘর আলো করে এক রাজপুত্র এলো। আসিফ, আয়েশা এবং তাদের পরিবার আগত রাজপুত্রকে নিয়ে খুবই খুশী এবং সুখী। কিন্তু সমস্যা হলো আশেপাশের মানুষদের। 

চারদিকে কানাঘুষা শুরু হলো বিয়ে হতে না হতেই বাচ্চা! তাহলে বিয়ের আগেই পেটে বাচ্চা এসেছিলো! এজন্যই বিয়ে করার জন্য এতো তাড়াহুড়া ছিলো! প্রথমে পরিবার রাজি না থাকলেও বিয়ের পর পর কি এই জন্যই মেনে নিয়েছে ইত্যাদি আরো নানান কথা। বিয়ের পর আসিফের একটি চাকরি হয়। কয়েকজন তো আসিফকে আগে বাড়িয়ে কিছু জ্ঞানও দিয়ে দিলো। নতুন চাকরি, কিছু টাকা জমিয়ে তারপর বাচ্চা - কাচ্চা নিতে! এত তাড়াহুড়ার কি ছিলো! যারা বাচ্চাকে মানুষ করবে, বাচ্চা যাদের কাছে বড় হবে তারা বাচ্চাকে নিয়ে খুশি। বাচ্চাকে মানুষ করার ব্যাপারে, বাচ্চার খরচের ব্যাপারে দুনিয়ার সব চিন্তা আশেপাশের মানুষদের। 

নয়ন আর নীলার বিয়ে হয়েছে তিন বছর হলো। নয়ন আর নীলা সমবয়সী। বিয়ের পর পরই তারা নিজেরা  নিজেদের মধ্যে কথা বলে একটি প্ল্যান করে নিয়েছে। দুইজন একসাথে এমবিএ শেষ করবে তারপর বাচ্চা নিবে। আশেপাশের মানুষদের তো মাথায় হাত! কি ব্যাপার, বিয়ের তিন বছর হয়ে গেলো এখনো বাচ্চা কাচ্চার দেখা নেই। মেয়ের কোন সমস্যা আছে নাকি! পরে তো বাচ্চা হবে না! মেয়ের বয়স বেড়ে গেলে এমনি বাচ্চা হবে না। কেউ কেউ তো কয়েক ধাপ এগিয়ে বলা শুরু করলো, 'আমার বোনের ননদের জায়ের বোনের ননদের মামীর মেয়ের বাচ্চা না হওয়ার সমস্যা আছে। কে জানে এই মেয়েরই সেই সমস্যা কিনা!'

প্রতিটি মানুষের তার নিজের জীবন নিয়ে একটি পরিকল্পনা থাকে। অনেকের সেই পরিকল্পনা গুছানো হয়, অনেকে হয় এলোমেলো। কিন্তু সবারই একটি পরিকল্পনা থাকে। বিয়ে এবং বাচ্চা নেওয়ার বিষয়গুলো জীবনের অনেক বড়, গুরুত্বপূর্ণ  এবং গভীর অংশ। আশেপাশের মানুষদের মনের মতো করে কখনো এই কাজগুলো করা যায় না। করা উচিতও না। একজন মেয়ের একটু বয়স হয়ে গেলো কিংবা তার যদি হয় বাড়ন্ত শরীর তখন সবার মাথাব্যথা শুরু হয় তার বিয়ে নিয়ে। বিয়েটা হতে না হতেই শুরু হয় বাচ্চা হবে কি হবে না সেই হিসাবনিকাশ। 

আচ্ছা, সাথে আরেকটা ডায়লগ আছে। বাচ্চা না হলে নাকি জামাই ভালোবাসবে না। যে সংসারে বাচ্চা আসতে দেরি করে, সেই সংসারের স্বামী নাকি ঘর বিমুখ হয়ে যায়। একটি সংসারে স্বামী, স্ত্রী, বাচ্চা সবার গুরুত্ব সমান। বাচ্চা না হলে যদি স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা কমে যায় তাহলে এখানে একটি প্রশ্ন আমাকে করতেই হবে।  বাচ্চা না হলে স্ত্রীর প্রতি যে স্বামীর ভালোবাসা কমে যায়, আদৌ কি সেই স্ত্রীর প্রতি সেই স্বামীর কোন ভালোবাসা ছিলো ? নাকি একই ছাদের নিচে থাকা এবং একই বিছানায় ঘুমানো পর্যন্তই সম্পর্ক ছিলো?

আর বাচ্চা হওয়া, না হওয়ার জন্য শুধু মেয়েকেই কেন দ্বায়ী করা হয়? ছেলেদের কি এখানে কোন সম্পর্ক নেই? অন্যরা কে কখন বাচ্চা নিবে, কে বাচ্চা নিবে না সেই বিষয় নিয়ে কথা বলার বা নাক গলানোর আমরা কে! কোন এক দম্পতির যদি বিয়ের বছর বাচ্চা হয় সেটাও সমস্যা, বিয়ের কয়েক বছর বাচ্চা না হলে সেটাও সমস্যা। তাহলে সমাধানটা আসলে কি? সমাধান একটাই, আমার বাচ্চা আমি নিবো যখন খুশী তখন নিবো।  

Leave a Comment