ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়:পর্ব ১

  • তামান্না ইসলাম 
  • নভেম্বর ১, ২০১৮

ডিপ্রেশন বা হতাশা শব্দটির সাথে কম বেশি আমাদের সকলের পরিচয় আছে।  ডিপ্রেশনকে বলা হয় আধুনিক সময়ের অসুখ।  এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বর্তমানে যাদের বয়স ৬৫ বছরের উপরে তাদের মাঝে ডিপ্রেশনের হার মাত্র ১০%।  অপরদিকে যাদের বয়স ৪৫ এর উপরে তাদের মাঝে এই হার বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ হারে, ২০%। এবং  যাদের বয়স ১৫-৩৫ এর উপরে এদের ডিপ্রেশনের হার ৫০% ! বিজ্ঞানীদের মতে এই অবস্থা অতন্ত্য ঝুকিপূর্ন। 

বয়সের পার্থক্যর সাথে হতাশার সম্পর্ক কি তা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে দেখা যায়, বিগত বছরগুলোতে আমাদের জীবনযাপনে পদ্ধতিগত পরিবর্তন অনেক। একজন ৬৫ বছর বয়স্ক ব্যক্তির জীবনের বেশিভাগ সময় ছিলো মাঠে কর্মব্যস্ত। কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম তাদের জীবনের বড় অংশ কাটাচ্ছে প্রযুক্তির সাথে। কম্পিউটার, মোবাইল, আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতি জীবনে যেমন সহজ করেছে তেমনি আমাদের মনোজগৎ করে তুলেছে জটিল। ডিপ্রেশন থেকে পরিত্রাণ পাবার কিছু উপায়  নির্ভর করে আমাদের জীবনযাপনে কিছুটা পরিবর্তন সাধনের উপর।
চলুন যেনে নেই অবশ্যক এ পরিবর্তনগুলোঃ

শারীরিক পরিশ্রম (physically activists) : পূর্বেকার সময় মানুষ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪ঘন্টা বিভিন্ন রকম শারীরিক পরিশ্রমের কাজে ব্যয় করতো। কিন্তু বর্তমানে আমারা প্রযুক্তির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে গেছি যে ১০ মিনিটও এই প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকা কঠিন। বিজ্ঞানীদের মতে অন্তত ৩০ মিনিট ধরে সপ্তাহে ৩ দিন শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা উচিৎ। দৌড়, দ্রুত হাটা, সাতার, সাইকেলিং ইত্যাদি শারীরিক কাজের আওতাভুক্ত।  শারীরিক পরিশ্রমের ফলে আমাদের মস্তিষ্কে Popamine এবং Serotonin নামক হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা হতাশা সৃষ্টিকারি অনুভূতির পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড (OMEGA-3 Fatty Acid):  ওমেগা-6 এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিডকে মানব দেহের জন্য অবশ্যক বলা হয়। কেননা এই দুই ধরনের ফ্যাটি এসিড আমাদের শরীর তৈরি করতে পারে না। ওমেগা-3 এসিড সাধারণত ঘাস, সবুজ শাক-সবজি, বীজ জাতীয় খাবার যেমন- সীমের বিচি, বিভিন্ন রকম মাছ ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। ডিপ্রেশনের ওষুধ হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে ১০০০-২০০০এমজি পর্যন্ত ওমেগা-3 সাপ্লিমেন্ট প্রেসক্রাইব করা হয়।

সূর্যের আলো (Sun Light)  : সূর্যের আলো আমাদের দেহের জন্য খুবই জরুরি। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আমাদের দেখে ভিটামিন ডি উৎপন্ন হয়। সূর্যের আলো আমাদের দেহের হাড় গঠন, পেশি গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ক্যান্সার সেল উৎপাদনে বাধা প্রদান, ডায়বেটিস ও মানসিক স্বাস্থ্যর জন্য সূর্যের আলো খুবই গুরুত্বপূর্ন।  প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট উজ্জ্বল সূর্যের আলোতে থাকলে আমাদের দেহ ঘড়ি সঠিক কাজ করে। যেমন হরমোন তৈরি, এনার্জি  ব্যালেন্স, সঠিক সময় ঘুম-জেগে উঠা ইত্যাদিতে সূর্যের আলো প্রভাব ফেলে।

পর্যাপ্ত ঘুম (Sound Sleep) : পর্যাপ্ত ঘুম বলতে সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ে ৭-৯ ঘন্টার ঘুম বোঝায়। আপনি যদি সারারাত নির্ঘুম থেকে দিনের বেলা ঘুমান তবে আপনার মাঝে ডিপ্রেশন সৃষ্টিকারী হরমোন অধিক তৈরি  হবে। অনির্দিষ্ট ঘুমের সময় এড়াতে যে কাজগুলো করতে পারেন-

* শোবার অন্তত ১ ঘন্টা পূর্বের ফোন, কম্পিউটার এবং টিভি থেকে দূরে থাকুন।

* দিনে শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করুন। এতে ক্লান্তি অনুভব হবে ও রাতে দ্রুত ঘুম আসবে।

* আপনি যদি দিনের বেশকিছু সময় বিছানায় কাটান তবে রাতে আপনার মস্তিষ্ক বিছানায় ঘুমের অনূভবে বদলে অন্য কাজের আগ্রহ তৈরি করবে।  তাই বিছানা ব্যবহার করুন শুধু ঘুমের সময়।

অতীত নিয়ে কম ভাবা (Less thinking about past)  : তথ্যপ্রযুক্তি উন্নতির কল্যাণে আমরা যেমন সহজেই একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে পারি, তেমনই দিনের একটা বড় অংশ আমরা একা কাটাই। একা থাকার এই সময়ে অতীতের বিভিন্ন ঘটনা, দূর্ঘটনা, ব্যার্থতার কথা মনে করার ফলে আমাদের মাঝে ডিপ্রেশনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।  অতীত স্মরণ করার থেকে দূরে থাকার সামাধান হিসেবে বলা হচ্ছে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এমন কোন কাজে যেখানে মস্তিষ্ক অতীত নিয়ে ভাবার সময় না পায়।  যেমন-  গ্রুপ ওয়ার্ক, সোসাল ওয়ার্ক, নিজের পছন্দসই কাজ, ক্রাফট, ইত্যাদিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।

সামাজিক যোগাযোগ (Social Communication)  : মানুষ দলগত ভাবে অবস্থান করছে সভ্যতার শুরু থেকে। একে অন্যের সুখ, দুঃখ ভাগ করে নিয়ে সুসময়-দুঃসময়ে পাশে থেকেছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে টেকনোলজির উন্নতির ফলে আমারা মুখমুখি হয়ে কথা বা কাজের চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশি সময় দেই। ফলে বাড়ছে দূরত্ব। আমাদের বর্তমান সময়ের একটা বড় অংশ হয়ে পরেছে বন্ধুহীন।  তাই ডিপ্রেশন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অবশ্যই আমাদের সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। একে অন্যের কাছে আসলেই বাড়বে বন্ধুক্ত, কমবে হতাশা ও ব্যর্থতার ভার।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।  শুভ কামনা সকলের জন্য।

Leave a Comment