মেয়েরা বেশি শিক্ষিত হলে ভালো বিয়ে হয় না!

  • মৃন্ময়ী লিজা
  • নভেম্বর ৩, ২০১৮

চব্বিশ বছরের এক যুবকের থেকে চব্বিশ বছরের এক যুবতী কতটা স্ট্রাগল করে কল্পনার বাইরে।  বিয়ে না হওয়া মেয়েটা যদি বাসায় থাকে প্রতি নিয়ত মা-বাবার কথা শুনতে হয়। বাসায় কোন কাজ করলেও দোষ, না করলেও দোষ। সে নারী তাকে ঘরের কাজ আগে করতে হবে তবে বাইরের কাজ, বলাবাহুল্য শিক্ষিত বাবা মারও একমাত্র চাওয়া তার মেয়ের যেন একটা ভাল বিয়ে হয়। শয়নে স্বপনে, উঠতে বসতে একটাই কামনা একটাই মনোবাসনা "একটা ভালো বিয়ে "।

মেয়েকে হায়ার এডুকেশন এর জন্য বিদেশে পাঠানো যাবেনা তাতে ঘোর বিপত্তি, যুগ যেখানে এগিয়ে সেখানে তারা চিন্তায় থাকে যৌতুকের, যদি যৌতুকের টাকা মেয়ের পড়াশুনোর পেছনে খরচ করতো তবে সমাজ অনেকটাই এগিয়ে যেতো।  কিন্তু গণহারে ধনী-গরীব, শিক্ষিত -অশিক্ষিত অভিনব উপায়ে সেই যৌতুককেই সাপোর্ট করছে। মেয়ে কৈশোরী ১২ কি ১৩ বৎসর হবে হঠাৎ কোন আত্মীয় দেখলে মেয়েতো বিয়ের উপযোগী হয়ে উঠেছে।  কৈশোরেই দেয় তাকে বসিয়ে ছাদনাতলায়। আর যদি বিবাহযোগ্যা হয় তাহলে তো কথাই নেই আপনি দাওয়াতে সামাজিক কোন আচার- অনুষ্ঠানে গিয়েছেন হতে পারে বিয়ে, জন্মদিন, মুসলমানি ইত্যাদি অমনি খোজঁও নেবে আপনি কেমন আছেন প্রথমেই -ভাবী ( আপনার মা) মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন কবে? ভালপাত্র পেলে বিয়ে দিয়ে দেন, পরে বেশী পড়াশোনা করলে ভাল বিয়ের ঘর আসে না।

যুবতী চোখে তার হরেক রকম স্বপ্ন বড় হবে অথচ মা বলবে -তুই এখনি যে ছেলে পাবি এম,এ করলেও সেই একই ছেলে পাবি। ভাল ছেলে সবসময় আসে না। শুরু হল উপদ্রব মায়ের কথা না মানলে আই মিন বিয়েতে সম্মতি না দিলে মা বলবে আমার মাথা খাও, মরা মুখ দেখ ব্যাস সেই চিরায়ত সেক্রিফাইজের পালা এইটুকুতেই কত মেয়ে নিজের স্বপ্ন হনন করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন " তেরো চৌদ্দ বছরের মতো বালাই আর পৃথিবীতে নেই এরা বাচ্চাদের মতো কথা বলতে চাইলে ন্যাকামো আর বড়দের মতো কথা বলতে চাইলে জ্যাঠামো কালক্রমে তা ঘাড়ে এসে চেপেছে নারীদের।  

২৩/ ২৪ বছরের নারীরাই যেন এই সমাজের সবচেয়ে বড় আপদ। ছোট কাপড় পড়লে হয়ে যায় ন্যাকামি আর তারা তো এমনি সমাজের চোখে বুড়িয়ে গেছে।  প্রচলিত ভাবধারায় যৌবন পদ্ম পাতার জল তা কেবল সংরক্ষিত পুরুষের জন্য, কালক্ষেপণ করার একচ্ছত্র অধিকার রাখে সমাজের  পাশের বাসার ভাবী থেকে শুরু করে পত্রিকাওয়ালা। বাসা থেকে বের হলে কৈফিয়ত, বাসায় দেরী করে ফিরলেও কৈফিয়ত।  পুরুষের বেলায় তা কেবলি নিছক ব্যাপার, তুমি পুরুষ তুমি রাতে বাসায় না ফিরলে হও শীর্যে-বীর্যে বলিয়ান, আর নারী হয়ে রাতে বাসায় না ফিরলে হয় নষ্টা, দুশ্চরিত্রা। 

আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি তার অলিখিত দারোয়ান সারাক্ষণ তাকে নিয়ে মেতে থাকা।  একটা ছেলে জব ছাড়া বিয়ে করতে পারে না আর একটা মেয়ে জব পেয়ে বিয়ে করতে তাকে বেগ পেতে হয়। ক্ষুধার্ত, পীড়িত, টাকা না থাকা মেয়েটার দিন কিভাবে কাটে রাতে কিভাবে যায় তা নিয়ে কেও ভাবেনা। ইনসোমোমোনিয়ার আশীর্বাদে তুষ্ট ডার্ক সার্কেল। মুখমাঝে উকিঁ দেয় মাঝেমধ্যে ব্রণ,  ঢাকতে সদা সচেষ্ট। ডিহাইড্রেশনে ভুগে ক্লীষ্ট শরীর নিয়ে বই পড়ে ঘুমিয়ে যায়। সর্বদা একই কথা চেহেরা নষ্ট হয়ে যাবে, স্তন ঝুলে পড়বে, থলথলে পেট, বয়সের ছাপ পড়ে গেলেই সে আর বিয়ে করার অধিকার হারিয়েছে। 

এই মেয়েটারও কৈশোরে প্রেম এসেছিলো, সেও লাল টিপ পড়তো, লিপস্টিক দিতো।মেয়েটার জীবনেও এসেছিলো প্রথম প্রেমের পরশ। পুরুষ সমাজের নীতিনির্ধারণ তারা কালো তাতে সমস্যা নেই সমস্যা ওই কালো মেয়েটার। একটা ছেলে সমাজে ৩০-৪০ বছরে হয় ঠিক বয়স কিন্তু একটা মেয়ের বেলায় সম্পূর্ণ ভিন্ন।  ভুঁড়িওয়ালা পুরুষগুলোর মনোবাসনা কচি মেয়ে বিষয়টা ঠিক যেন। কোন দেবীর মনোরঞ্জনের জন্য উৎসর্গ করা হচ্ছে পাঠাকে। আর আটত্রিশ বছরের  টাক মাথার ছেলে হরহামেশা বিয়ে করছে ১৬/১৭ বছরের সদ্য যৌবনে পা দেওয়া মেয়েটা, যে মেয়ে জানেই না বিয়ে টা কি? 

লালসার চরম পর্যায়ে সমাজ তাকে বাহবা দিচ্ছে কিন্তু মেয়েদের বেলায় আটত্রিশ বছর তা তো অকল্পনীয়, এ আবার হয় নাকি???  ওমা ছিঃ ছিঃ ওই মেয়েকে কেও আবার বিয়ে করবে নাকি!  উঠতে বসতে হাসি-তামাশা অথচ মাথায় টাক, অর্ধবয়স্ক, চামড়া ঝুলে যাওয়া, হলদে দাতেঁর বিদঘুটে মোটা স্যালারীযুক্ত সরকারী চাকুরীজীবী সকল বয়সের, সকল কুমারীকে বিয়ে করার অধিকার রাখে। সমাজ তার হাতে দিয়েছে সোনালী সে চাবি। 

Leave a Comment