হতাশা! মানুষের জীবনকে চোরাবালির মত গ্রাস করে

  • নাজিয়া হক 
  • নভেম্বর ৪, ২০১৮

হতাশা! ছোট্টো একটা শব্দ,তিনটি অক্ষরের ছোট্টো একটি শব্দ,তাই না? অথচ এই ছোট্টো একটা শব্দ মানুষের জীবনটাকে চোরাবালির মত গ্রাস করে নেয়। জীবনটাকে এক মুহুর্তের মধ্যে শেষ করে দিতে পারে হতাশা নামক ভয়ানক এ রোগ।

হতাশা জিনিসটা কি???

হতাশা- মেডিকেল এর ভাষায় '"হতাশা এমন একটি মনস্তাত্ত্বিক শব্দ যা ইচ্ছা প্রকাশ করতে ব্যর্থতা বা অকুণ্ঠতা বা প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম নয়,সেই অবস্থানকে বোঝানো হয়। সাধারণ অর্থে যখন আমরা আমাদের প্রয়োজন, চাওয়া পাওয়া মেটাতে অক্ষম হয়ে পড়ি,যা চাই তা পাইনা, তখনি আমরা হতাশ হই। জীবনের না পাওয়া গুলো ধীরে ধীরে হতাশায় পরিণত হয়। হতাশা দুই রকমের হয়ে থাকে, অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থিত। অভ্যন্তরীণ হতাশা ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণের চ্যালেঞ্জ থেকে উদ্ভূত হতে পারে, ইচ্ছা, প্রয়োজন বা অনুভূতির সঙ্গে আচরণ দুর্বলতা, যেমন আত্মবিশ্বাসের অভাব অথবা সামাজিক অবস্থার ভয় সংঘর্ষ এইসব কারনে হয়ে থাকে। হতাশার বাহ্যিক কারণগুলি একজন ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে অবস্থানকে বোঝায়।

প্রেমে ব্যর্থ,জীবন অর্থহীন লাগে,তাই না? শুরু হয় হতাশা। জীবনে যা চাচ্ছেন,পাচ্ছেন না,হতাশার শুরু। সরকারি কোথাও পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না,জীবনটাই ডুবিয়ে দিচ্ছেন হতাশায়। হতাশা এমনি কিছু অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি থেকে আস্তে আস্তে তৈরী হয়। যদি কোনও ব্যক্তির প্রয়োজনগুলি অবরুদ্ধ থাকে তবে অস্বাভাবিকতা এবং হতাশা ঘটতে পারে। আর যখনি এই চাহিদা ক্রমাগত উপেক্ষা করা হয় বা অসন্তুষ্ট হয়, রাগ, বিষণ্ণতা, আত্মবিশ্বাসের ক্ষতি, বিরক্তিকরতা, আগ্রাসন এবং কখনও কখনও সহিংসতা অনুসরণ করে। টিনএইজ থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক যেকোনো মানুষ যেকোনো একটা পর্যায় গিয়ে হতাশায় ভুগে থাকেন কোনো না কোনো অপ্রাপ্তির কারনে।

এতোই সহজ? এতো সহজেই '"হতাশা'" নামক ছোট্টো একটা শব্দের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন? প্রেম করে ব্যর্থ আপনি? ছেড়ে চলে গেছে বলে জীবনটাকে অর্থহীন লাগে? আচ্ছা একটাবার ভেবে দেখেছেন কি কেনো আসলে সেই মানুষটা চলে গেলো? কি নেই আপনার মাঝে? নিজেকে নিয়ে ভেবেছেন কখনো? একটাবার ভাবুন না নিজেকে নিয়ে,বের করুন না আপনার অপারগতা গুলো। পেয়েছেন খুঁজে কি নেই আপনার মাঝে?

একটা খাতা নিন। লিখে ফেলুন কি কি নেই আপনার,দোষগুলো লিখুন লাল একটা কলম দিয়ে। এইবার একটা একটা করে সংশোধন করুন তো। টাইম লাগছে? লাগুক না,একটা করে নিজের ভুলগুলোকে শুধরানো শুরু করুন তো। আর একটা করে ভুল খাতা থেকে কাটতে থাকুন। এক মাস পর দেখুন তো খাতায় কোনো শব্দ বাকি আছে কিনা যা কাটেননি?এইবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটাবার দেখুন তো নিজেকে,দেখেছেন? নিজেকে কি আবিষ্কার করছেন নতুনভাবে? এ নতুন আমি টা কি এখন চলে যাওয়া সেই মানুষটার চেয়েও বেশি ভালোবাসেন না আপনি? এইবার কষ্ট করে সেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মত মানুষগুলোর কাছে যান,জি বাবা মা ভাইবোন এর কাছে যান,গিয়ে বলুন তাদের কতোটা ভালোবাসেন তাদের। 

আপনার মুখ থেকে '"ভালোবাসি'" শব্দটা শুনে সেই মানুষগুলোর চেহারায় যে অপার সুখটা ফুটে উঠবে,সেই সুখ আর আনন্দ আপনার সব হতাশাকে মুহুর্তেই জীবন থেকে সরিয়ে দিবে,অপার সুখ খুঁজে পাবেন তখন আপনি।জীবন অনেক ছোটো, ভালোবাসুন নিজেকে,ভালোবাসুন যে মানুষ গুলো আপনাকে ভালোবাসে। জীবনে চাওয়া-পাওয়ার হিসেব না করে যা আছে সেই পাওয়াগুলোকেই আরো বিস্তৃত করেন,জীবনটাকে অনেক সুন্দর লাগবে।

সরকারি একটা ভার্সিটি, মেডিকেল এ পড়তে পারেননি বলে নিজেকে হতাশায় ডুবিয়ে দিবেন? কেনো? হতাশ না হয়ে নিজেকে সেই জায়গা থেকেই উন্নতির চরম শিখরে নিয়ে যান,জীবনটাকে তখনি সার্থক মনে হয়ে,প্রকৃত সার্থকতা তখনি খুজে পাবেন। জীবনটাকে এমনভাবে তৈরি করুন যেনো আপনাকে নিয়েই পরবর্তী ইতিহাস রচিত হয়। নিজেকে ভালোবাসুন, জীবনটা অনেক সুন্দর মনে হবে। হতাশাকে একটাবার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে জীবন থেকে আজকেই বের করুন,অর্থপুর্ণ করে তুলুন জীবনটাকে।

Leave a Comment