বিনয় ও অহংকার যতটুকু দরকার

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • নভেম্বর ১২, ২০১৮

'আমি স্বাধীন দেশের মানুষ' কথাটি অহংকার মিশ্রিত হলেও তা অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন ও গৌরবের, তেমনি 'অহংকার পতনের মূল' এতেও কোন সন্দেহ নেই। এমনকি এই দুটো সাংঘর্ষিক কথাকে কেউ অন্য চোখেও দেখে না। অপরদিকে যারা সবসময় অহংকার করে কথা বলে, তাদের যেমন খুব একটা পছন্দ করে না, আবার যারা সবসময় ভদ্রতা দেখিয়ে কথা বলে তাদেরকেও সমাজ তেমন একটা পাত্তা দেয় না। কিন্তু তাই বলে কি একেবারেই অহংকার করা যাবে না, আবার একেবারেই বিনয়ী হওয়া যাবে না?

বিনয় ও অহংকার : বিনয়ী ব্যক্তি সবার কাছেই গ্রহনযোগ্য। সবাই পছন্দ করে, বিশ্বাস করে, তাদের সাথে মিশতে চায়। তারা সমাজের আর দশটা মানুষের চেয়ে ভিন্ন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু তাই না, তাদেরকে অনুসরণ করে জীবন যাপন করে সমাজের অনেকেই। তারা হলেন সমাজের আদর্শ ব্যক্তির রোল মডেল। তবে এর বিপরীত দিকও রয়েছ। অতিরিক্ত বিনয়ী ব্যক্তিরা সমাজের অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয়ে থাকেন, অথবা তাদের তেমন কোনো গুরুত্ব থাকে না কারো কাছে। বিনয়ী ব্যক্তির পরিচয় মিলে তার কথাবার্তা,ওঠাবসা ও চালচলনের মাধ্যমে। অপরদিকে নিজেকে এতটা বিনয়ী বানানো যাবে না, যার দ্বারা অন্যের কাছে দূরে থাক, নিজের কাছেই নিজেকে মূল্যহীন মনে হয়। আপনি যদি নিজেই নিজেকে গুরুত্ব না দিয়ে থাকেন, তাহলে অন্যরা আপনাকে গুরুত্ব দিতে যাবে কেন? তাই পরিমাণ মতো প্রয়োজনমাফিক বিনয়ী হওয়ার পাশাপাশি বজায় রাখতে হবে আত্নসম্মান বোধ। 

এবার আসা যাক অহংকারের ব্যাপারে। অহংকার দুই রকমের হতে পারে। প্রথমত আপনার নিজের বা দলগত বড় কোনো সাফল্যের ফলে নিজের মধ্যে সাময়িক ভালো লাগা তৈরি করবে। হতে পারে এটি কোনো পরীক্ষায় আপনার ভাল ফলাফল কিংবা দেশের জন্য দলগতভাবে বড় কোনো কাজ করলেন। এর ফলে আপনার মধ্যে যে অহংকার কাজ করবে তা স্বল্পস্থায়ী। ক্ষণিক পরেই সেই অহংকার চলে যায়। এই অহংকার সাধারণত কেউ মুখে প্রকাশ করে না। দ্বিতীয়ত  হল, নিজের কাজ গর্ব করে সবাইকে বলে বেড়ানো। আপনার সাফল্যের কথা সবাই জেনে থাকলেও নিজে গিয়ে তাদের সামনে অহংকার করা। অহংকারের দ্বিতীয় উদাহরণের ব্যক্তিকে নিয়েই যত সমস্যা।

অতি অহংকারী ব্যক্তির বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-  সবসময় সবার থেকে সম্মান আশা করা, যে কোনো প্রকার উপদেশ ফিরিয়ে দেওয়া, সবার সাথে জোর গলায় কথা বলা, কেউ কোনো উপদেশ দিলেই বদমেজাজি হয়ে ওঠা, অন্যদের নীচ চোখে দেখা ইত্যাদি। এ ধরনের অহংকারী ব্যক্তি আমরা সবাই কম-বেশি দেখেছি। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের অহংকার হলো একধরনের রোগ, যা আপনাকে সত্যকে মেনে নিতে বাঁধা দেয়। আপনি হয়তো জানেন কোনো একটি কাজ ভুল হয়েছে। কিন্তু নিজের অহংকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য সেটি মেনে নিতে চাচ্ছেন না। এ ধরনের অহংকারী ব্যক্তিকে আমরা কেউই সাধারণত পছন্দ করি না।

অনেকে অহংকার করাকে নিজের সাফল্যের প্রচারণা হিসেবে দেখেন। আপনি কী সাফল্য পেয়েছেন তা যদি প্রচার না-ই করেন, তাহলে এত কষ্ট করে সাফল্য অর্জন করছেন কীসের জন্য? মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেনিয়েল স্নাইসারের মতে, “আপনি যদি আপনার সাফল্য নিয়ে অহংকার না করতেন, তাহলে আপনার সাফল্য আমি দেখতে পেতাম না।” অপরদিকে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লেডা কসমেডিসের মতে, অহংকার হলো সমাজ গড়ার একটি উপাদান। মানুষের মাঝে অহংকার কাজ না করলে এই আধুনিক সমাজব্যবস্থা আমরা পেতাম না। একজন আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই এখানে মূখ্য ভূমিকা হিসেবে কাজ করেছে।

বেশি বিনয় আবার বেশি অহংকার কোনটাই ভাল না। তাহলে কোনটা করা উচিত? সবচেয়ে ভাল রাস্তা হলো মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। আপনি বিনয়ী হতে পারেন, কিন্তু বিনয়ী হতে গিয়ে নিজের সম্মান বিকিয়ে দিবেন না। নিজের আত্মসম্মান ধরে রাখুন, নিজের যা প্রাপ্য সেটি ঠিকমতো বুঝে নিন। আর অহংকারের বেলায় নিজেকে সামলিয়ে চলুন। আপনার সাফল্য সবার সামনে তুলে ধরুন। তবে সেটা যাতে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয়। আবার অন্যের কাছ থেকে সম্মান পেতে যা করতে হবে তা হলো, আপনার নিজের মধ্যে থাকতে হবে অন্যকে সম্মান করার অভ্যাস।
 

Leave a Comment