নিজের সংসারে বাঁচুন অধিকারবোধ নিয়ে!

  • জান্নাতুন নুর দিশা
  • ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নয়টি প্রদেশ আছে যেসব প্রদেশে বৈবাহিক সম্পত্তি আইন অনুসারে বিচ্ছেদের সময় স্বামী-স্ত্রী ৫০-৫০ সম্পত্তির মালিক হয়ে যায়। অর্থাৎ বৈবাহিক জীবনে তাদের উভয়ে যা কিছু সম্পদ অর্জন করে তার মালিক হয় উভয়ে যৌথভাবে। কে সম্পত্তি কিনলো তা ধর্তব্য হয় না। এই নয়টি প্রদেশ হল অ্যারিজোনা, ক্যালিফোর্নিয়া, আইডাহোর, লুইসিয়ানা, নেভাডা, নিউ মেক্সিকো, টেক্সাস, ওয়াশিংটন এবং উইসকনসিন।

এই সকল প্রদেশে বিয়ের পর অর্জিত সম্পদকে ম্যারিটাল প্রোপার্টি বা কম্যুনিটি প্রোপার্টি বলে। আর ডিভোর্সের ক্ষেত্রে এর সমবন্টনকে বলা হয় ফিফটি/ফিফটি ডিভোর্স স্যাটেলমেন্ট। এই আলোচনা দিয়ে লেখা শুরু করলেও মূল আলোচনা এটা নয় অবশ্য। আমাদের দেশের মেয়েরা এই বিষয়ে একদম সচেতন নয় যে বিয়ের পর যা কিছু একটা সংসারে থাকে তা কেবল তার বরের নয়, তারও। একটা সংসার কিন্তু একটা কমিটমেন্ট, একটা কর্মক্ষেত্রও বটে। একটা সংসারে যে সময়, যে শ্রম আপনি দেন তা অন্য কোনো কাজে দিলে অবশ্যই তার আর্থিক মূল্য পেতেন আপনি।

তাই সংসারে যা কিছু অর্জন হয় তার মালিক অবশ্যই উভয়ে। কিন্তুভাব এদেশের অধিকাংশ মেয়েরা আজীবন মনে করে সে অন্যের ঘর করছে! প্রায় মেয়েকে ঝগড়া হলেই বলতে শুনবেন "বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি, থাকো তোমার সংসার নিয়ে" এই জাতীয় ডায়ালগ দিতে। স্ত্রীর ভয়ে স্বামী বাইরে রাত কাটাচ্ছে এমন ভুরিভুরি ন্যাকা গল্প ফেসবুকে ঘুরে বেড়ালেও বাস্তবতা সবসময় তেমনটা নয়, বরং উলটো চিত্রই। এখনো ঝগড়া হলে "বাপের বাড়ি গেলাম চলে" একদম কমন ডায়ালগ। এখনো এদেশের অধিকাংশ মেয়েরা নিজের সংসারকে নিজের ভাবতে পারে না। অথচ সেই সংসারেই তারা সারাটাজীবন দিয়ে দেয়।

কেন মনোমালিন্য হলেই এই বাপের বাড়ি যাওয়ার হুমকি? যেমন কাজের লোকেরা বলে কাজ ছেড়ে দেবো অনেকটা তেমন নয়? একটা মেয়ে সারাজীবনেও তার সংসারের প্রতি নিজের অধিকারবোধ অনুভব করে না এটা চরম রকমের ব্যক্তিত্বহীনতা। সংসারে মনোমালিন্য হবেই। সেটাকে ফেইস করুন। বাপের বাড়ি, তোমার সংসার এসব দুর্বলচেতা কথাবার্তা বলবেন না। সংসার একটি সামগ্রিক বিষয়, সংসার কখনো নির্দিষ্ট একজনের হয় না।

আমারই এক কাজিন তার বরের শত উপেক্ষা সত্ত্বেও সংসারে পড়ে আছে। জানতে চাইলে বলে ওর সংসারে থাকি, দুটো কটু কথা তো বলবেই। অথচ আমার সেই কাজিনের সরকারি চাকরী হয়েছিলো এক সময়, সন্তানদের কে দেখবে এই অজুহাতে তাকে তার বর চাকরী করতে দেয় নি। সন্তানদের পালনের বদলে চাকরী করলে সেই মেয়ে নিশ্চয়ই আর্থিক মূল্য পেত? অথচ তার বর এখন তাকে কথায় কথায় খোঁচা দিয়ে বলে আমার টাকায় খাও-পরো। যখন আপনি অন্য কোনো কাজ না করে সংসারে কাজ করছেন, সেই সংসারের মালিক আপনার বর একা নন, আপনিও। তাই বাপের বাড়ি যাওয়া নয়, আপনার সংসারেই অধিকারবোধ নিয়ে বাঁচুন।

Leave a Comment