শ্রদ্ধেয় হুজুর ,শিক্ষিত মেয়েদেরকে আপনার কিসের এতো ভয়?

  • ফারজানা আক্তার
  • জানুয়ারি ১২, ২০১৯

ধর্ম এবং রাজনীতি এই দুইটি বিষয় নিয়ে সচারচর আমি কথা বলি না। এখানে বলে রাখা ভালো আমি আস্তিক মানুষ। আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস করি। যথাসাধ্য ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চলার চেষ্টা করি। এখন প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে ধর্ম নিয়ে কথা বলি না কেন? কারণ কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে হলে সেই বিষয়কে খুব গভীরভাবে জানতে হয়, বুঝতে হয় এবং লালন করতে হয়। যেহেতু ধর্ম নিয়ে কথা বলার মতো জ্ঞান আমার নেই তাই আমি কথা বলি না। আর, রাজনীতির ক্ষেত্রেও একই। সোজা কথা আমি রাজনীতি বুঝি না। আমি বুঝার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন ইন্টারেস্ট পাই নি। এ আমার অজ্ঞতা এবং ব্যর্থতা। আমি মেনে নিয়েছি।

উপরে যে দুইটি বিষয় নিয়ে কথা বললাম তার একটি কারণ আছে। এইতো বিস্তারিত সেই কারণ বলছি। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার বার্ষিক মাহফিলে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী মেয়েদের স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য ওয়াদা নিয়েছেন। আর পাঠালেও চতুর্থ কিংবা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর কথা বলেছেন। তাকে আমি তেঁতুল হুজুর নামেই এতদিন চিনতাম। মেয়েদের একবার তেঁতুলের সাথে তুলনা করেন, এখন আবার মেয়েদের গন্ড মূর্খ করে রাখার ওয়াদা নিচ্ছেন। আমি জানি না তিনি কেন মেয়েদের এতো ভয়ংকর প্রতিযোগী ভাবছেন! মেয়েদের সাথে তার কিসের এতো শত্রুতা সেটাও আমার অজানা।

আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী একজন শিক্ষিত মানুষ। তিনি হয়তো এতটুকু জানেন একজন শিক্ষিত মা'ই পারেন একজন শিক্ষিত জাতি উপহার দিতে। একজন সন্তান তার জীবনের প্রথম শিক্ষাটা তার মায়ের কাছে পায় এইকথাটা নিশ্চয় তার অজানা নয়। এতটুকু যে মানুষ জানে তার মুখ দিয়েও কখনো বের হবে না মেয়েদের স্কুল-কলেজে দেবেন না! কারণ প্রতিটি মানুষই চায় তার সন্তান মানুষের মতো মানুষ হোক। সেই জায়গায় তার মতো একজন শিক্ষিত মানুষ মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করছেন। ভাবা যায়!

খুব বেশিদিন আগের কথা না! এইতো গত বছরের নভেম্বর মাসেই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিয়েছে কওমিপন্থি ৬টি বোর্ড নিয়ে গঠিত আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশ (হাইয়াতুল উলইয়া)।সেই মাহফিলের সভাপতিত্ব করেছেন হেফাজত ইসলামের আমির ও হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফি। যে মানুষটা মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে এতো কথা বলছে, সেই মানুষটাই আবার একজন মেয়েকে (মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে) সংবর্ধনা দিচ্ছে। ভাবা যায়!!

এই মানুষটা তো কোন মেয়ের সন্তান! কোন মেয়ের স্বামী! কোন মেয়ের ভাই! কোন মেয়ের বাবা! একজন সন্তান, স্বামী, ভাই এবং বাবা কিভাবে তার মা, বউ, বোন এবং মেয়েকে তেঁতুলের সাথে তুলনা করে আমার জানা নেই। একজন বাবা এবং ভাই কিভাবে চায় তার মেয়ে এবং বোন গন্ড মূর্খ হয়ে ঘরের এককোনে সারাজীবন ধুঁকে ধুঁকে পড়ে থাকুক। তার মতো একজন শিক্ষিত মানুষ কেন ভুল মেসেজ দিয়ে মেয়েদেরকে ছেলেদের প্রতিযোগী বানিয়ে তুলছে সেই বিষয়টাও আমার কাছে ক্লিয়ার নয়। হে হুজুর! আপনার কাছে আমার প্রশ্ন শিক্ষিত মেয়েদেরকে আপনার কিসের এতো ভয়?

Leave a Comment