আদিবাসী নারী! যাদের পদে পদে শুধু নেই আর নেই!

  • ফারজানা আক্তার 
  • জানুয়ারি ১৪, ২০১৯

সাধারণত ‘ক্ষমতায়ন’ নিশ্চিত করা হয় দুইটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। এক : উৎপাদন এবং উৎপাদিত দ্রব্যের উপর অধিকার, দুই : নিজের জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার। অবাক করার বিষয় হলো ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয় যে দুইটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে তার কোনোটাই আদিবাসী নারীদের নেই। অথচ, যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় এদেশের সব আদিবাসী নারীরাই হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করে। নিজের উপার্জিত অর্থের উপর নিজের কোন অধিকার নেই।

বিষয়টা ভাবতেই কেমন গা শিউরে উঠে!!! কিন্তু যুগ যুগ ধরে আদিবাসী নারীরা এমন গা শিউরে উঠা নিয়মেই জীবন পার করে আসছেন। পার্বত্য অঞ্চলের নারীরা পুরুষদের সাথে সমান তালে উৎপাদন কাজে অংশগ্রহণ করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের থেকেও অনেক এগিয়ে আছেন। যেমন : কৃষি কাজে, জুম চাষে। ইউএনডিপির এক জরিপমতে, শুধু কৃষিক্ষেত্রেই আদিবাসী নারিদের অংশগ্রহণ প্রায় ৯০%। অংশগ্রহণে ৯০%, কিন্তু নিজেদের উৎপাদিত দ্রব্যের উপর তাদের অধিকার ০%।

পারিবারিক এবং সামাজিক সকল ক্ষেত্রে পুরুষদের কর্তৃত্বই বিরাজ করে। আদিবাসী নারীরা বহুবছর ধরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত আছেন, কিন্তু অধিকারের জায়গাটা এখনো খুব সংকীর্ণ। নিজের আয় করা অর্থ নিজের ইচ্ছায় ব্যয় করার অধিকার নেই, সম্পত্তিতে অধিকার নেই, বিয়েতে কোন রেজিস্ট্রি করার অধিকারও নেই। সোজা কথায় আদিবাসী নারীদের কোন অধিকারই নেই। পদে পদে তাদের শুধু নেই আর নেই। বাংলাদেশে মোট ৪৫ টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে উত্তরাধিকার হিসেবে নারীরা গণ্য হয় গারো, খাসি, মারমা ও রাখাইন সম্প্রদায়ে।


আদিবাসী নারী
 

বাকি ৪১টি সম্প্রদায়ে নারীরা অধিকার হিসেবে সম্পত্তি দাবি করতে পারেন না। ফলে সম্পত্তির উপর নারীর মালিকানার বিষয়টি পরিবারের প্রধান কর্তা তথা পুরুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপর নির্ভর করে। কেবলমাত্র দান বা উইলের মাধ্যমে নারীরা সম্পত্তির অধিকার লাভ করতে পারেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে স্বামীর সম্পত্তির অধিকার স্ত্রী লাভ করতে পারেন। তবে পুত্র সন্তান না থাকলে এবং অন্য কোথাও বিয়ে করলে সে প্রয়াত স্বামীর সম্পত্তির অধিকার হারায়। সকল নারীদের ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে মূলধারার নারী আন্দোলনের সঙ্গে আদিবাসী নারীদের অধিকারের বিষয়টিও সম্পৃক্ত করতে হবে। আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীন অবস্থায় থাকেন আদিবাসী নারীরা। আদিবাসী নারীরা সবথেকে বেশি সহিংসতার শিকার হয় ভূমি বিরোধ ও সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের কারণে। আদিবাসীদের উপর নির্যাতনের আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে বিচারহীনতা। তাদের উপর করা অত্যাচারের কোন বিচার করা হয় না। মূলধারার নারীদের থেকে আদিবাসী নারীরা কোন অংশে কম নয়, বরং আরো বেশি প্ররিশ্রমী এবং উদ্যমী। তাদেরকে তাদের প্রাপ্ত অধিকার দেওয়া হলে তারা যেমন নিজেদের বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পাবে, সেইসাথে দেশ এবং জাতির উন্নতিতেও বিশাল ভূমিকা রাখবে।

Leave a Comment