অপরাধী কেবল অপরাধ দিয়েই বিবেচিত হোক

  • রোমানা আক্তার-শুদ্ধবালিকা
  • ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯

নারীবাদী মানে এই নয় যে, নারী যা করে তাই সঠিক প্রমাণের চেষ্টা করতে হবে। নারী ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার, নারী তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, নারী সম্মানহানির শিকার, নারী কেবল ভোগের বস্তু, নারীর প্রতি ফতোয়া ইত্যাদি অভিযোগে একজন নারীকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা যেমন অন্যায়, ঠিক তেমনি নারী নাস্তানাবুদ প্রতিনিয়ত হচ্ছে তাই নারীকে এগিয়ে নিয়ে পজেটিভ, নেগেটিভ সকল বিষয়ে সাপোর্ট দেয়াটা আরও বেশি অন্যায়। একজন নারীবাদী সবসময় হবে নিরপেক্ষভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদকারী। অবহেলিত নারীর সম্মান ফিরিয়ে আনতে প্রতিষ্ঠিত নারীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অবশ্যই হতে হবে নির্ভেজাল। কেননা, তার হাত ধরেই বাকিদের উঠে আসার রাস্তাটা তৈরি হয়।

এখন আসি মূল কথায়। পরকীয়া অন্যায় এবং অবশ্যই এটি অন্যায়। সেটা নারী বা পুরুষ যেই করুক না কেন, শাস্তি একই হবে। কোন অযুহাতে এখানে পরকীয়া নিয়ে পক্ষপাতীত্ব করার সুযোগ নেই। একান্তেই যদি জীবনসাথী অপছন্দ হয় তবে আগে তাকে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে, তারপর অন্যের দিকে এগুতে হবে। ম্যাক্সিমাম পরকীয়াকারীদের মনোভাব থাকে এরকম যে, "আমি যার সাথেই থাকি আমার বর/বউ অন্য কারো কাছে যাবেনা" অথবা "বউ/স্বামী থাকবে সামাজিকতা রক্ষায়, বাকিরা থাকবে মনোরঞ্জনে।" 

পরকীয়ায় দেনমোহর বেশ শক্ত ভূমিকা রাখে। ছেলে পরকীয়ায় লিপ্ত হলে চায় বউ ডিভোর্স দিক, মেয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হলে চায় ছেলে ডিভোর্স দিক। দু'জনই লাভবান হবার চিন্তায় মগ্ন। এতে ভুক্তভোগী হয় স্বামী বা বউকে বিশ্বাস করা মানুষটা। প্রতিনিয়ত প্রিয় মানুষের ভাগ হয়ে যাওয়াটা দেখতে দেখতে সে ট্রমায় চলে যায়। এই পরিস্থিতি সামালের মতো মানসিক জোড় সবার থাকে না। কেউ মরে যায়, কেউ মরতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। প্রিয় মানুষের দুর্নাম নিজ মুখে অন্যকারও কাছে বলা যতোটা কষ্টের, ঠিক ততোটাই অপমানের। ভুক্তভোগীর এই কষ্টের পেছনে আমরা শ্রোতারা দায়ী। আমরা যখন শুনি কারও বউ বা স্বামী পরকীয়া করে তখন ভিকটিমকেই ব্লেইম দেই "কেন স্বামী বা বউকে ধরে রাখতে পারিনা?" 

ধর্ষণ ঘটনায় ধর্ষিতাকে ব্লেইম দেই, পরকীয়ায় দোষ দেই নির্দোষ স্বামী/বউকে, আত্মহত্যায় দোষ দেই আত্মহত্যাকারীকে। আমরা আসলে দায় নিতে চাইনা। অপরাধীকে দোষ দিলে আইনের বিচক্ষণতা জরুরী, সমাজ সংস্কার জরুরি, চিন্তা চেতনা বদল বাধ্যতামূলক   তথাপি ব্যক্তি আমি যে প্রতিনিয়ত এসব ঘটনা এক চোখে দেখে আরেক চোখে না দেখার ভান করি সেই আমিটাকে পরিবর্তন করা অনিবার্য। এতো এতো পরিবর্তনের চাপ নেয়ার চাইতে চুপ থাকাই শ্রেয় মনে হয় আমাদের মতো শ্রোতাদের। চামড়ায় সামান্য চুলকানি অবহেলায় তা যেমন ক্যান্সার রূপ নেয়, প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদের গা বাঁচাতে গিয়ে অপরাধের ক্যান্সার ছড়িয়ে দিচ্ছি।

এদিকে আমরা আবার সন্তানের জন্য ব্যাকুল। আমরা স্বপ্ন দেখি আমাদের সন্তান মানুষের মতো মানুষ হবে। একসময় সিগারেট যে খায় সে মার্ক করা থাকতো, এখন সিগারেট যে খায়না সে মার্ক হয়ে থাকে। আগে প্রেমিক প্রেমিকাকে খুশি করার পাল্লা চলতো, এখন বদলের পাল্লা চলে। সময়ের সাথে খারাপ দিকগুলো হয়েছে স্বাভাবিক আর ভালো দিকগুলো হয়েছে অস্বাভাবিক। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের আগামী জেনারেশন মানুষের মতো মানুষ হও আশীর্বাদটাকে ব্যাঙ্গ করবে। সেই দায়টাও কিন্তু আমাদের কাধেই এসে পড়বে। আমরা বলে থাকি, এখনকার জেনারেশন বেয়াদব, কথা শুনেনা। ভবিষ্যতে তাদের শাসনের বেলায় এই কথা না শুনা গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে যদি মুখের উপর বলে দেয়, "তোমরা কিছু বুঝোনা" তখন আমাদের অবস্থা কি হবে বুঝেছেন? আজ বা আগামী যে কোন দিন বাজে পরিস্থিতির দায় আমাদের কাধে আসবেই, আর দায় যেহেতু নিতেই হবে তাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ধ্বংসের আগেই নেয়া উচিত। অপরাধী কেবল অপরাধ দিয়েই বিবেচিত হোক। ভিকটিমকে অন্ধ দোষারোপ করা বন্ধ হোক।

Leave a Comment