নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি বাঁচে, কিন্তু কেন?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
  • ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৯

সারা বিশ্ব জুড়েই নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি বাঁচে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৬ সালে বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর। কিন্তু নারী ও পুরুষের গড় আয়ু আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,পুরুষদের গড় আয়ু যেখানে ৬৯ বছর আট মাস, সেখানে নারীদের গড় আয়ু ৭৪ বছর দুই মাস। অর্থাৎ নারীরা পুরুষদের চেয়ে প্রায় পাঁচ বছর বেশি বেঁচেছিলেন। বিজ্ঞানীরা এর কয়েকটি কারণ সনাক্ত করেছেন।

জেনেটিক: মানুষের মৃত্যুহারের তালিকায় বর্তমানে ৪০টি দেশের তথ্য ঘেটে দেখা যায়, প্রতি বছর সব দেশেই নারীর গড় আয়ু পুরুষের গড় আয়ুকে ছাড়িয়ে গেছে। জেনেটিক গঠনের কারণেই পুরুষরা নারীদের চেয়ে কম বাঁচেন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

ভ্রূণ: ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক ডেভিড জেমস বলেন, নারী ভ্রূণের চেয়ে পুরুষ ভ্রূণের নাকি অধিক হারে মৃত্যু হয়। লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোজোমগুলোর কার্যকলাপের কারণেই এমনটি হয় বলে অধ্যাপক ডেভিড জেমস মনে করেন।

XX হল নারী ক্রোমোজোম এবং XY হল পুরুষ ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমগুলো আমাদের জিন ধারণ করে থাকে। এক্স ক্রোমোজোমগুলোতে প্রচুর জিন রয়েছে যা আপনাকে জীবিত থাকতে সহায়তা করে। যদি এক্স ক্রোমোজোমে জেনেটিক ত্রুটি দেখা যায় তাহলে একজন নারীর ব্যাকআপ হিসেবে আরেকটা এক্স ক্রোমোজোম থাকে। কিন্তু পুরুষের এক্স ক্রোমোজোম একটাই থাকায় তাদের ব্যাকআপের কোন সুযোগ নেই।

এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লর্না হ্যারিস বলেন, বেশি বয়সে গর্ভধারণের কারণে মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুর মারা যাওয়ার হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্ম নেয়ার হার ছেলে শিশুদের বেলায় ১৪ শতাংশ বেশি। আর সাধারণত ছেলে শিশুদের আকার মেয়ে শিশুদের তুলনায় বড় হওয়ায় জন্মের সময় তাদের বেশি আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি থাকে।

হরমোন: বয়ঃসন্ধিকালের সময় শরীরে হরমোন পরিবর্তনের কারণে ছেলে ও মেয়েরা পুরুষ ও নারীতে পরিণত হয়। টেস্টোস্টেরন এমন একটি হরমোন যেটা মূলত পুরুষের বৈশিষ্ট্যগুলো ধারণ করে। যেমন: দীর্ঘকায় দেহ, শক্তিশালী পেশি, ভারী কণ্ঠ এবং লোমশ শরীর ইত্যাদি। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের শেষ সময়টার দিকে ছেলেদের শরীরে এই টেস্টোস্টেরন হরমোন নি:সরণ হয়। এ সময় তাদের মৃত্যু হার বেড়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরুষদের এই হরমোন বেশি থাকার কারণে তারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে উৎসাহী হয়; যেমন লড়াই করা, খুব দ্রুত গতিতে মোটর সাইকেল বা গাড়ি ড্রাইভিং এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও পুরুষের মধ্যে বেশি থাকে। এই হরমোনের কারণেই যেকোনো দুর্ঘটনায় পুরুষদের মৃত্যুর মুখে পড়ার হার বেশি।

অভ্যাস ও আচরণ: বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ এলাকার পুরুষদের আয়ু কম হয়ে থাকে। কেননা তাদের যুদ্ধে যেতে যেতে। আর যুদ্ধক্ষেত্রেও পুরুষরাই তো বেশি মারা যায়। তবে যেসব এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা অপর্যাপ্ত, সেখানে অনেক নারী শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। এছাড়া ধূমপান, মদ্যপান ও অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ওপরও নির্ভর করে কে কতো বছর বাঁচবে সেটা।

উদাহরণ হিসেবে রাশিয়ান পুরুষদের কথা বলা যায়। রুশ পুরুষরা সে দেশের নারীদের চেয়ে ১৩ বছর আগে মারা যায়। কারণ রাশিয়ার পুরুষরা প্রচুর মদপান করে থাকে। দীর্ঘতর কিন্তু সুস্বাস্থ্যময় নয়

তবে মজার কথা হচ্ছে নারীরা বেশিদিন বাঁচলেও তাদের জীবন কিন্তু অতটা সুখকর নয়। কেননা তারা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলেও সুস্থ থাকে না। জীবনের এক পর্যায়ে তারা নানা ধরনের অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হন। ফলে পুরুষদের চাইতে নারীদেরই বেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। নারীদের শারীরিক সীমাবদ্ধতার এ প্রবণতা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে বাংলাদেশ, চীন, মিশর, গুয়াতেমালা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জ্যামাইকা, মালয়েশিয়া, মেক্সিকো, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং তিউনিসিয়া।

ব্যবধান কমছে: সাম্প্রতিক গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, ভবিষ্যতে নারী ও পুরুষের মধ্যে আয়ুষ্কালের এই ব্যবধান আর থাকবেনা। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ২০৩০ সাল নাগাদ নারী ও পুরুষের মধ্যে আয়ুষ্কালের ফারাক শুধুমাত্র এক বছর নয় মাস থাকবে।

যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের মতে, যুক্তরাজ্যে আজ জন্ম নেয়া একটি ছেলে শিশু গড়ে ৭৯ বছর দুই মাস এবং মেয়ে শিশুর ৮২ বছর নয় মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। হৃদরোগ মোকাবেলা করার ক্ষেত্রেও বড় ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন দেশটির চিকিৎসকরা। কেননা পুরুষরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। এছাড়া বিভিন্ন দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমাতে পারলে পুরুষদের গড় আয়ু বেড়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

টি/আ

Leave a Comment