বহুগামী মানুষেরা বিয়ে থেকে দূরে থাকুন

  • সুদীপ্তা  ভট্টাচার্য্য রুমকি
  • মার্চ ১৬, ২০১৯

কোনকালে একা হয়নিকো পুরুষ পরকীয়ার কান্ডারী;
প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী ”

পুরুষ পরকীয়া কি একা একা করে এসেছে এতদিন ধরে!নারী তো কবে থেকেই পুরুষের পরকীয়ার দোসর হয়ে আছে...এখন শুধু লিডিং রোলে যাচ্ছে পার্থক্যটা এটাই।এতদিন বউরা আত্মহত্যা করেছে,এখন হাজব্যান্ডও সেই পথে পা দিবে।তবে এই ইস্যুর ব্যাপকতা পুরুষের জীবনে যে পরিমাণে বিস্তৃত সেই তুলনায় এদের বউরা কমই আত্মহত্যা করেছে।যদি এই ইস্যুকে  মুদ্দা বানিয়ে চরিত্রহীনের  স্ত্রীরা আত্মহত্যা করা শুরু করতো তাহলে আশপাশের বন্ধুভাজন অনেকের স্ত্রীরা গত হয়ে যেতেন।যেহেতু স্ত্রীদের এধরনের  পুরুষের সাথে সংসার জীবনে মানিয়ে চলার একটা সামাজিক চাপ থাকে,সন্তান থাকলে তো কথাই নেই,তাই আত্মহত্যা অনেক সময় তাদের স্ত্রীদের দৃষ্টিতে বিলাসিতার নামান্তর হয়।তবে কষ্ট সহ্য করতে করতে এরা একসময়   হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলে  পরিকল্পিত হত্যাকান্ডটি স্বাভাবিক মৃত্যুর মোড়কে ঢাকা পড়েই থাকে।

যে পুরুষ  নিজে পরকীয়ায় লাফান তার তো স্ত্রীকে পঙ্গু ভাবা ঠিক না,পা সবারই আছে আর লাফাতে সবাই জানে শুধু রুচিটা সবার বিকৃত থাকেনা।যে বিশেষ চাহিদা নিজের জীবনে অসীম সেটাই সঙ্গীর জীবনে শুন্যের কোঠায় ধরে নেয়াও তো যুক্তিসঙ্গত না।পরকীয়ার জন্য বিবাহিত পুরুষের  দিকে যে লেভেলের নারীরা দুহাত বাড়িয়ে থাকেন ঠিক সেই প্রজাতির পুরুষরাও অন্যের   স্ত্রীর দিকে হাত গুটিয়ে থাকেনা।তবে দুশ্চরিত্রের চূড়ান্ত সীমায় অবস্থানককারী ব্যক্তি  নিজে যা তা করে বেড়ালেও কখনো সেটা মেনে নিতে পারবেনা তার স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত, সেখানে আকাশের মতো একজনের তো মানার প্রশ্নই আসেনা।পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কিন্তু এই স্ত্রীর সাথে মানিয়ে চলার চাপ পুরুষকে দেয়না,পুরুষ এই ক্ষেত্রে তারই তন্ত্র দ্বারা ভিকটিমাইজ ফিল করে নিজের আব্রু রক্ষায় এ ধরনের আচরণ আরও বেশি করবে।মর্দকো দর্দ অবশ্যই হয়,যখন বেঈমানিটা আদিকাল থেকে চলে আসা স্ত্রীদের সাথে করা বেঈমানির সমতুল্য হয়।

ধরি, মিতুর জায়গায় সুমিত,প্যাটেল এর জায়গায় একজন মহিলা, আকাশের শাশুড়ির স্থানে আরিশার শাশুড়ি এবং আত্মহত্যা করেছে আরিশা।কত শাশুড়িইতো  আরিশাদের শুনিয়ে চলেছেন স্বামীকে ধরে রাখতে না পারা,সংসার রেখে স্বামীর অন্যদিকে যাওয়ার ব্যর্থতা এককভাবে আরিশাদের।আরিশারা কি কখনোই বলেনি শ্বশুর,শাশুড়িকে সুমিতদের  অনৈতিক জীবন যাপনে উৎসাহিত করছেন,প্রশ্রয় দিচ্ছেন!আর মহিলা প্যাটেলরা বিবাহিত জেনেও  সুমিতদের উৎসাহ দিতে বউকে নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ,কটুক্তির মাধ্যমে নিঁখাদ প্রেমের উদ্দামতার হাতছানি দিয়ে চলেননি  এতদিন ধরে। সেটাই তো চলছে অহরহ।কত আরিশা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত মনে মনে নিচ্ছে,কতজন গুমরে মরছে তার খবর রাখে কি সুশীল সমাজ।আরিশারা তো আকাশের মতো সুমিতকে মেরেকেটে  স্বীকারোক্তিও নিতে সক্ষম হবেনা,বাঘের ডেরায় বসে বাঘের সাথে শক্তি প্রদর্শন তো অসম্ভব। তাই বলে কি আরিশাদের কাছে প্রমাণ থাকেনা সুমিতদের পরকীয়ার ব্যাপারে? থাকে... পরকীয়ারত প্রেমিকা সেই গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে তথ্য  ঠিকই  নিষ্ঠাসহকারে পৌছে দেয় আরিশাদের কাছে।সব আরিশারা সেই তথ্য উপাত্ত হয়তো ফেইসবুকে আপলোড দেয়না,নিজের হাজব্যান্ড শব্দটা  এত সস্তা নয় বলে।

কিন্তু ঘর,আত্মীয়পরিজনের মধ্যে কোন মেয়ে একই প্রকৃতির যন্ত্রণা ভোগ করছে যদি জানেন তখন আপনারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন না কেন, কষ্টটা একটা মেয়ে পাচ্ছে বলে তার দহনটা কি স্বাভাবিক ধরে নিয়েছেন আপনারা!মিতু যতটা ঘৃণ্য ততটা  ঘৃণ্য কেন হয়না সুমিত আপনাদের দৃষ্টিতে?যে বিশেষন মিতুর নামের সাথে যুক্ত করছেন সেই একই বিশেষন কেন বসেনা সুমিতদের নামের পাশে?কেন পুরুষ প্যাটেলের মর্যাদায় মহিলা প্যাটেলরা যায়না?কেন মিতুর মায়ের মতো ধিক্কার সুমিতের মায়েরা পায়না?কেন  আকাশের মৃত্যুর মতো আরিশাদের মৃত্যুটা অসহ্য কষ্ট থেকে হয় তা বুঝা যায়না?বউ রেখে পতিতালয় আলোকিত করা বা রুমডেট করা পতিত পুরুষটি যখন মিতুর দিকে আঙুল তুলে বা পরকীয়ায়লিপ্ত পুরুষের প্রেমিকা যখন সতী স্বাধ্বী সেজে মিতুর চরিত্র নিয়ে কথা বলে তখন সত্যিই মনে হয় নিজেদের  নেই কোন চরিত্র  তারাও বলতে এসেছে কে দুশ্চরিত্র!এই টাইপের মানুষের সংখ্যা কম কিন্তু নয়।চোখের সামনেই তো দেখছি এসব নোংরামি।

আমার কাছে অপরাধী জেন্ডার নিরপেক্ষ শব্দ।তাকে জেন্ডার দিয়ে  মূলায়ন করা আমার মতে ভুল।সম্পর্কের মধ্যে থেকে পুরুষ বা নারী যেই প্রতারণা করুক এটা অপরাধ।বিয়েটা বজায় রেখে অসততা করা চরম বিকৃতি।আমার হাজব্যান্ড বা আমার ওয়াইফ পাবলিক প্রপার্টি এটা মেনে নেয়ার ক্ষমতা কোন সভ্য মানুষের থাকেনা,তা সে নারী হোক আর পুরুষই হোক।আর থাকেনা বলেই ক্রমাগত মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে একটা সময় নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হয়তো লাশ  হয় বা জ্যান্ত লাশ হয়ে বাঁচার চেষ্টা করে। পরকীয়ায় নিয়োজিত হাজব্যান্ড বা ওয়াইফ এর দোসররা তো কখনো সুইসাইড করতে শুনিনা,সুইসাইড করে বা করার চেষ্টা করে তাদের লিগ্যাল ওয়াইফ বা হাজব্যান্ডই। পশু বিয়ে করে যে পাপ করেছিল তার প্রায়শ্চিত্ত বোধ হয় এভাবেই করতে যায় তারা।অথচ  বুঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে  আত্মহত্যা কোন সমাধান  না। বহুগামী নারী বা পুরুষের একগামী বিবাহ নামক সম্পর্কে প্রবেশ না করলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।

কুকুর,বিড়ালের মতো লিভ টুগেদার করলেই তো পারে,আজকে এর সাথে, কালকে তার সাথে পরশু ওর সাথে just like animal.কুকুর, বিড়াল তো তার সঙ্গীকে কখনো বলবে না তুমি পাশের গলিতে গিয়ে এর, ওর সাথে সময় কাটাও কেন!সমস্যা হলো মানুষ বলে নিজেকে  পরিচয় দিয়ে পশুর  মতো আচরন করলে  তা আরেকজনের কাছে অগ্রহণযোগ্যই হবে। শুধু শুধু খ্যাত  মার্কা বিবাহ করার এদের মতো আলট্রা মর্ডানদের কি দরকার!এটা না হয় কিছু রক্ষণশীল মানুষের জন্যই তোলা থাক।যদি নিদেনপক্ষে বিয়ে করতেই হয় তাহলে নিজে যে চরিত্রের সেই চরিত্রের আরেকজনকে খুঁজে বিয়ে করুক। যার বিয়ের আগে পাঁচ,সাতটা প্রেমের হিস্ট্রি আছে এবং ভবিষ্যতে বিয়ের কারনে এই ইতিহাস সমৃদ্ধি বন্ধের কোন সম্ভাবনা নেই, তার ঠিক সেই চরিত্রের একজনকে বেছে নেয়া হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।এতে কেউই এক্সট্রা ম্যারিটাল এ্যাফেয়ার নিয়ে ধাক্কা খাবেনা,"তুমিও নাই আমিও নাই কেমন মজা হবে" এই টাইপ আরকি। 

তা না করে এমন অসুস্থ  মানসিকতার কেউ যদি  জেনে বুঝে এমন কাউকে বিয়ে করেন যার কাছে মা,বাবা,ভাই-বোনের মতো জীবনসঙ্গী যে মানুষটি সেও ঐচ্ছিক নয় আবশ্যিক, তখন আজকে সম্পর্কে ঢুকে কালকেই যদি কোন কারন ছাড়া বেড়িয়ে যেতে চান সেটা তারা মানতে চাইবেনা স্বাভাবিকভাবেই।বিয়ে কি ফাইজলামির বিষয় বা খেলা!হাজব্যান্ড,ওয়াইফের রিলেশন তো স্পেশাল প্রফেশন এ বিলংগিং সম্পর্কের মতো মুল্যায়িত হতে পারেনা যেখানে একজনের ভালো লাগা না লাগার উপর তার আসা যাওয়া নির্ভর করবে,আরেকজনের কিছু বলার কোন অধিকার সেখানে থাকবে না!যৌথ জীবনে একজন চোখ ঘুড়িয়ে ফেললেই আরেকজনও সাথে সাথে তাতে সক্ষম হবে এমন তো কোন কথা নেই।মানুষের মনের মধ্যে তো সুইচ দেয়া নেই অন/অফ এর, একজন ভালবাসা,প্রতিশ্রুতির সুইচ অফ করে দিলে আরেকজনও তাৎক্ষণিক তা করবে।একটা সম্পর্ক হুট করে ভাঙ্গার মাঝে কোন বীরত্ব নেই,বীরত্ব থাকে সেটা ধরে রাখার মাঝে তা ভেবে সেই পরকীয়া এক্সপার্ট দের স্ত্রী/স্বামীও হয়তো এটাই চায়।আর  প্রশ্ন যদি সন্তান থাকে তাহলে তার জীবন ,তার প্রতি দায়বদ্ধতাইবা কার উপর বর্তায়?অপ্রিয় উত্তর হবে যে মানুষটি বিশ্বাস করে বিয়ের মালা পড়িয়েছিলো অবশ্যই এককভাবে তার উপর কারন অনৈতিকতা চালিয়ে যাওয়ার সময় বাচ্চাকাচ্চার দায়বদ্ধতা নিয়ে ভাবার সময়ইবা কার হাতে থাকে!একবারও কি  তারা ভাবে নিজে লাগামহীনভাবে জীবনকে ভোগ করতে গিয়ে নিজের সঙ্গীর জীবনের লাগাম কিভাবে এরা টেনে ধরছেন! স্ত্রীর চোখের সামনে অন্য মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে স্ত্রী নির্যাতনকারী পুরুষ যেমন, কোন স্ত্রী যদি এই কাজ করেন তবে তিনিও ঐ পুরুষের সমগোত্রীয়।বৈধ সম্পর্কের  ভিতর থেকে অবৈধ জীবন যাপন অন্যায়।পাশের মানুষটির প্রতি চরম মানসিক নির্যাতন এটি।এর সাথে জড়িত নারী /পুরুষ দুজনেই সম অপরাধী।

শিশুর যেমন লিঙ্গান্তর হয়না তেমনি চরিত্রহীন,বদমাইশেরও লিঙ্গান্তর হয়না।যদি হতো তাহলে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর জন্য পুরুষ, নারী খুঁজে পেতোনা।নারী মানেই ধোয়া তুলসি পাতা নয় জীবনের এই পর্যায়ে এসে অন্ততপক্ষে সেটা বিশ্বাস করছি।ডিভোর্স এর আগে সংসারে জলাঞ্জলি দিয়ে পিরিতের শখ জাগলে যার জেগেছে আর যিনি সাথে তাল দিতে এসেছেন দুইজনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসলে সব পিরিত বন্ধ হয়ে যাবে।কেন ভালবাসায় চিটিং এর শাস্তি থাকবে না!একজন অসুস্থ চিন্তার মানুষের এক্সাইটমেন্ট এর  ফল কেন তার জীবনসঙ্গী ভোগ করবে?সে নিজেও এদের সাথে তাল মিলিয়ে কারো গলায় ঝুলে পড়েনি বলে আত্মহননের মাধ্যম কেনইবা সে সমাধানের পথ খুঁজবে!বহুগামী মানুষেরা পরকীয়া না করে দয়া করে বিয়ে থেকে দূরে থাকুন।কি দরকার শুধু শুধু সঙ্গী,সন্তান যদি থাকে তাদের জীবনে অহেতুক অশান্তি সৃষ্টি করার।আপনার একান্ত জীবন নিয়ে যা খুশি তা করুন।  সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বিয়ে আসলেই সবার করার বিষয় নয়।
                 
      

Leave a Comment