দোষারোপে সমাধান নেই

  • জান্নাতুন নুর দিশা
  • মার্চ ২০, ২০১৯

জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি হলে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এক মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়ে ট্রাঙ্কে ভরে রেখেছে। পরে সে শিশুর মৃত্যু হয়। তো এই জাতীয় ঘটনা যখনই ঘটে নারীবিদ্বেষী লোকজন গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। যথারীতি এরা এখন নারীশিক্ষার জাতিগোষ্ঠী উদ্ধার করছে গালি দিয়ে। আজ এমনই এক লোকের কথাবার্তা শুনছিলাম। এই লোক বেশ হাঁকডাক দিয়ে এই যুগের মেয়েদের খারাপ হওয়া নিয়ে আলোচনা করছে। 

তো তাকে বললাম, "ভাই, এই যে ঘটনাটা ঘটল, আপনি মনে করেন এটা মেয়েটার দোষ?"  "অবশ্যই মেয়ের দোষ।"  "মেয়ে কি একা একা জন্ম দিতে পারে? ছেলের কোনো দায় নেই?"  "বিয়ের আগে প্রেম করে বেড়াবে, প্রেমিকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখবে। এইজন্যই মেয়েদের কম পড়ানো দরকার।"  "প্রেম কি মেয়ে একা করেছে? ছেলে করে নাই? ছেলেকে কেন বেঁধে রাখবেন না?" 

"অবাস্তব কথা বলেন কেন মা? ছেলেরা ইনকাম করবে, তাদের ঘর চালাতে হয়। তাদের বেঁধে রাখলে ইনকাম কে করবে?"  "তা আংকেল, যে যুগ আসছে একজনের ইনকামে তো শহুরে জীবন যাপন করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আপনি মনে করেন দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বোঝা বানিয়ে রেখে অগ্রগতি সম্ভব?"  "কিন্তু মেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে তো সমাজ বরবাদ হচ্ছে।" 

"তো এর সমাধান কী?" "মেয়েদের দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেয়া। অত পড়ালেখা করিয়ে শিক্ষিত করতে গিয়ে তো এসব নষ্টামি করে বেড়ায়।" "আপনার মেয়ে আছে, আংকেল?" "আছে। নাইনে পড়ে। এসএসসি দিলেই তারে বিয়ে দিয়ে দেব। তাহলে আর এসব ভুল পথে যাবার সুযোগ পাইল না। আরেকটু পড়তে দিলেই মেয়েরা এখন সেয়ানা হয়ে যায়। বাপমার কথাও শুনতে চায় না।" "বেশ ভালো কথা। আপনার ছেলে আছে?" 
"আছে তো। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।" 

"বাহ! বয়স তো ভালোই। তা ছেলের ব্যাপারে কী ভাবলেন?" "ওর ব্যাপারে কী ভাবব? পড়াশুনা করে চাকরি করবে।" "তার কি শারীরিক চাহিদা নেই? সে যে কোনো মেয়ের সাথে কিছু করে বেড়াচ্ছে না কিভাবে নিশ্চিত হলেন?" "আমার ছেলে কেন এসব করবে? অদ্ভুত!" "আপনার মেয়ে এসব করতে পারবে এই ভয়ে বিয়ে দিয়ে দেবেন। আর ছেলে এসব করবে না কী করে নিশ্চিত হলেন? তারও তো চাহিদা আছে। প্রেমিকা পেলে সেও হয়ত প্রেমিকাকে চাপ দেবে, প্রেমিকা রাজী হয়ে গেলে এসব সর্বনাশ হবে। প্রেমিকা রাজী না হলে সে পতিতালয় যাবে। তাই না? তাকে কি বিয়ে করানো উচিত না?" "সে এখনো ছাত্র। বিয়ে করবে কিভাবে?" "তাহলে তো আলটিমেটলি এসব সামাজিক সমস্যা থেকেই যাচ্ছে তাই না? মেয়েকে বিয়ে দিলেও আপনার ছেলের দ্বারা এসব হতে পারে।" 

লোক এবার খানিক দম নিলেন। "তারপর ধরেন, আপনার ষোলো বছরের মেয়েকে আপনি বিয়ে দিবেন ত্রিশ/বত্রিশ বছরের ছেলের সাথে। প্রায় দ্বিগুণ বয়সী পাত্রের সাথে মানসিকতার বনিবনা হবে। ভেবেছেন কখনো?  আপনি তো বিয়ে দিয়ে মাসে মাসে জামাইকে মোরগ পোলাও খাইয়ে ভাববেন মেয়েকে সুখী করে ফেলছেন। তারপর মেয়ে বা তার জামাই যে কেউ সমমানসিকতার কারো সাথে পরকীয়া করে বসলে তখন আবার আপনার মেয়েরই দোষ হবে। সে নিজে পরকীয়া করলে সে হবে চরিত্রহীনা আর জামাই পরকীয়া করলে লোকে বলবে কেমন মেয়ে, জামাই ধরে রাখতে পারে না?" 

তো দিনশেষে মেয়েদের দাবায়ে রাখতে রাখতে মেয়েদের দিকে আঙ্গুল তুলতে তুলতে দেখবেন মেয়েটা আর কেউ নয়, আপনারই মেয়ে। তাই সমাধানে আসুন, বাসায় গিয়ে সন্তানকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন তাদের কী কী প্রয়োজন। আর শুধু মেয়ে দিলে হবে না, প্রয়োজনে ছেলেকেও বিয়ে করিয়ে দিন, পুত্রবধূর এগিয়ে চলারও বাধা হবেন না। বিয়ে আসলেই উত্তম সমাধান, তবে তা কেবল মেয়েদের নয়, ছেলেদেরও। 

 

Leave a Comment