যৌতুকের যাঁতাকলে আজও নিজের সবটা হারাচ্ছে মেয়েরা

  • কামরুন নাহার স্মৃতি
  • এপ্রিল ১৬, ২০১৯

বিয়েটা শুধু আজকাল দুটো মনের বন্ধন নয়, টাকা আয়ের একটা হাতিয়ারও বটে। তেমনি হয়তো ভেবেছিলো ছবির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা৷ বিয়েতে যৌতুকের নামে পেয়েছে ত্রিশ হাজার টাকা কিন্তু এতো কমে তাদের লোভ লালসাকে মেটাতে পারেনি ছবি৷ বাড়ির যেকোন প্রয়োজনে ছবি'কে পাঠানো হয় বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য কিন্তু গরীর বাবার উপার্জন আর ঋণের বোঝার সবটা জেনে শুণ্য হাতেই ফিরতে হয় বাবাকে না জানিয়েই৷ এইজন্য শ্বশুরবাড়িতে কম অত্যাচার সহ্য করতে হয়না তাকে, যে যখন পারে তাকে কথা শোনায়, যে যেভাবে পারে অপমান করে, ছোটলোকের বাচ্চা বলতে কিংবা গায়ে হাত তুলতেও বাঁধেনা কারো৷

আইন আদালতের কাছে যেতে চেয়েও যেতে পারেনি বাবার অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে, বিয়ের সময়ে দেয়া টাকাটার ঋণের বোঝা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে বাবা৷ কোন রকমে অন্যের জমিতে কাজ করে যা পায় তা দিতে সবার খাওয়া, পরাই হয়না ঠিকঠাক। তার উপর ছবির বাবা মাসের প্রায় অর্ধেকদিনই অসুস্থ থাকে। সবটা ভেবেই কিছু করে উঠতে পারেনি ছবি, তাকে যে আবার এ বাড়িতেই ফিরতে হবে এটা তার নিজেরও অজানা নয়। তাই সমস্ত অন্যায় অত্যাচার মুখ বুজে মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা তার৷ তবুও দফায় দফায় বেশকিছু টাকা এনেছে ছবি কিন্তু তাতে মেটাতে পারেনি শ্বশুড়বাড়ির লালসার ভান্ডার। ছবি অনেক বুঝিয়েও মানুষরূপী পশুগুলোর মাঝে এতোটুকুও মানবিকতা জাগাতে পারেনি৷ সারাদিন কাজের লোকের মতো কাজ করেও তাকে কথায় কথায় সহ্য করতে হত থাপ্পড়, কিল।

এভাবে একবছর কেটে গেলেও, কমেনি ছবির শ্বশুরবাড়ির মানুষদের লালসা। বাপের কাছ থেকে টাকা আনায় অস্বীকার করে ছবি, জানায় খুব স্পষ্টভাবেই এসব আর তাকে দিয়ে হবেনা৷ বাবার কাছে আর কোনভাবেই যেতে পারবেনা সে জানায় স্পষ্ট। কথাগুলো ঠিক হজম করতে পারেনি ছবির স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়িসহ বাকিরা। অপমানের প্রতিশোধ হিসেবে চিরতরে বন্ধ করে দেয় ছবির কথাবলা। ছবিকে খুন করে গাছের সাথে টাঙ্গিয়ে আত্নহত্যা হিসেবে চালাতে চায় ছবির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ছবির চরিত্র খারাপ পরিবারে জানাজানি হওয়ায় এমন কান্ড করেছে সে, এমন কথা বলা হয় পুলিশকে। কিন্তু কথাগুলো বিশ্বাস করেনি ছবির বাবা। তিনি খুব ভালো করে জানেন তার মেয়েকে, তার মেয়ে এমন কাজ করতেই পারেনা৷ আইনের সাহায্যে সত্যি ঘটনা সবার সামনে আনা সম্ভব হয় এবং দোষী ব্যক্তিরাও শাস্তি পায়। কিন্তু যৌতুকের যাঁতাকলে পিষে নিঃশব্দে চলে গেল ছবি। যৌতুক কেড়ে নিল হাসিখুশি জীবনকে, কেড়ে নিল স্বপ্ন আর ভালোবাসাকেও। এমন হাজারো ছবি এভাবেই প্রতিনিয়ত হারিয়ে যাচ্ছে যৌতুকের কড়াল গ্রাসে।

টি/শা

Leave a Comment