নিজের বৃদ্ধ পিতামাতাকে ভালোবাসুন

  • জান্নাতুন নুর দিশা
  • এপ্রিল ১৭, ২০১৯

আমি এক ঈদে এক বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। গিয়ে চমৎকার এক দৃশ্য দেখেছি।  সে বাড়ির ছোট বউ তার বৃদ্ধা শাশুড়ির হাতে ডিজাইন করে মেহেদি লাগিয়ে দিচ্ছে। বৃদ্ধার গায়ে নতুন শাড়ি ফুটে আছে, মুখে ফুটে আছে সোনালি হাসি। একটু পর ড্রইংরুমে আমি আর বৃদ্ধা বসে আছি। তার বউমা গেছে নাশতা বানাতে। 

বৃদ্ধাকে বললাম, "আপনার হাতদুটো সুন্দর লাগছে।" বৃদ্ধা হাসিহাসি মুখে বললো, "জানো মা, আমি সারাজীবন ঈদে কখনো হাতে মেহেদি লাগাবার সময় পেতাম না। এত কাজ থাকতো সংসারে ঈদের সময়ে। মেহমান আসতো, ঈদের রান্না, ঘর গুছানো। নতুন শাড়ি ময়লা হবে বলে পরা হতো না ঈদের দিন। সবাই সাজগোজ করে থাকতো ঈদের দিন। আমি থাকতাম রান্নাঘরে।

আর আজকে বউমা আমাকে নতুন শাড়ি পরিয়ে দিলো, মেহেদি লাগিয়ে দিলো, কি যে ভালো লাগছে!" আমি বৃদ্ধার হাতের দিকে তাকালাম। মলিন দুটো হাত। দেখেই বুঝা যাচ্ছে হাতের তালু দুটো খসখসে। কাজ করতে করতে সব মায়েদের হাতই অবশ্য এমন হয়ে যায়। আমরা হয়তো খেয়াল করবার সময় পাই না। এই মলিন হাত দুটো মেহেদির ছোঁয়ায় সৌন্দর্য পেয়েছে।

সে বাড়ির ছোট বউ এমন ছোট ছোট যত্ন, ভালোবাসা দিয়ে তার শাশুড়িকে ভীষণ খুশী রেখেছে।  এটাকে তার শ্বশুরবাড়ির সকল আত্মীয়স্বজন শো অফ মনে করে! আমরা অধিকাংশই কোনো ভালোত্বকে কখনোই প্রশংসা করতে শিখি নি।  এই মেয়েটা তার শাশুড়িকে খুশী রেখেছে, যা তিনি করতে পারতেন না সংসারের ব্যস্ততায়, তা তাকে দিয়েছে। এসব তার পরিবার, আত্মীয়স্বজনের চোখে শো অফ। 
কারণ বউ, শাশুড়ির সুন্দর সম্পর্ক দেখতে অভ্যস্ত না এই উপমহাদেশ।

মেয়েটি প্রায় তার শাশুড়িকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। কখনো শপিংয়ে, চাইনিজে কখনো বা ট্যুরেও নিয়ে যায়। একজন বৃদ্ধ/বৃদ্ধাকে খুশী করবার জন্য এর চেয়ে বেশি কিছু প্রয়োজন পড়ে না সন্তানদের। সমাজ কখনোই সহজে আপনার ভালো কিছু এপ্রিশিয়েট করতে চাইবে না। 

আপনি ভালো করলেও বলবে শো অফ। তবু বৃদ্ধ পিতামাতাদের নিজের সন্তানের মত যত্ন নিন। নিজের মায়ের বা শাশুড়ির মাথার চুল নিজের হাতে আঁচড়ে দিন। তাদের মাঝেমাঝে ঘুরতে নিয়ে যান। নিজেদের হাজার ব্যস্ততা থাকুক, তবু উৎসবগুলো তাদের সাথে কাটান।শুধু স্বামীর নয়, স্ত্রীর বাবামায়ের প্রতিও সমান যত্ন নিন উভয়ে। সারাটা জীবন সংসারের জন্য দিয়ে আসা মানুষগুলো, উৎসবে সকলের মুখে হাসি ফুটাতে ক্রমাগত আত্মত্যাগ করে আসা মানুষগুলো যেন শেষ বয়সে অসহায়ত্বে না ভোগে।

টি/শা  

Leave a Comment