একজন মেয়ের একার পক্ষে কোন বাচ্চাকে জন্ম দেওয়া সম্ভব না

  • ফারজানা আক্তার 
  • মে ১১, ২০১৯

- আপু, ইদের পর আমার ডিভোর্স। দোয়া করবেন আমার জন্য।

- মানে? কী বলছেন আপু?

- হ্যাঁ আপু! ছোটবেলা থেকে সকল প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া মেয়েটি আজ মা হওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হয়েছে। বিয়ের পর থেকে ভালো বৌমা তকমা পাওয়া মেয়েটি আজকে মা হতে না পারার কারণে সবথেকে খারাপ বৌমা হয়ে গেছে।

- আপু আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আপনি বিস্তারিত বলবেন প্লিজ!

- আপনারা তো সচেতনমূলক কাজ করেন। বাচ্চা হওয়া, না হওয়া কোন মেয়ের হাতে থাকে না এই বিষয়টি নিয়ে ছেলেদের এবং তাদের পরিবারকে সচেতন করুণ। এই কাজটি সবার আগে করুণ প্লিজ। তাহলে আমার মতো অনেক মেয়ের জীবন, সংসার বেঁচে যাবে।

- আপু আমি আপনাকে মেসেঞ্জারে কল দেই?

- না! কোন সান্ত্বনার বাণী শোনার ইচ্ছে নেই। মেয়েদের জন্য যদি সত্যিকার অর্থে কিছু করতে চান তাহলে এই কাজটি আগে করুণ। আমার কথা শুনুন।

- আচ্ছা আপু। এই কাজটি আমরা করবো। প্রমিজ করবো। আমি সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য কল দিতে চাই নি। আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই। এই কাজটি কিভাবে শুরু করবো, কোথায় থেকে শুরু করবো এই বিষয় নিয়ে একটু বিস্তারিত কথা বলবো আপনার সাথে। মেসেজে এতো কথা বলা যায় না আপু।

- নিজেরা তো অনেক কাজ করেন। নিজেরা ভেবে চিন্তে বের করেন।

- আপু আমার আপনার সাথে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছে। ৫মিনিট আমার সাথে কথা বলুন। ৫মিনিটের বেশি এক মিনিটও নিবো না। প্রমিজ!

অতঃপর এই ভদ্রমহিলার সাথে আমি ৪০মিনিট কথা বললাম। এবং ৪০মিনিটে আমি কথা বলার সুযোগ ৫মিনিটও পেয়েছি কিনা সন্দেহ। আমি তাকে জোর করে কলে নিয়েছি কারণ তার যে মানসিক অবস্থা ছিলো এই অবস্থায় কারো সাথে মন খুলে কথা বলতে পারলে সে কিছুটা রিলিফ পাবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী মানসিকভাবে চাপে থাকা মানুষদের প্রথমেই মন খুলে কথা বলতে দেওয়া উচিত। তখন তারা যে আশ্রয় সংকটে ভুগে , মন খুলে কথা বলার কারণে সেই সংকট টুকু তাদের কেটে যায়।

আপুর বিয়ে হয়েছে ১২বছর। মনে করুণ আপুর নাম স্বপ্না। সেই ছোটবেলা থেকে ক্লাসে প্রথম হওয়া স্বপ্না প্রথম হতে হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে একটি প্রাইভেট কলেজে শিক্ষকতা করছেন। পাশাপাশি বাসায় ব্যাচ করে প্রাইভেট পড়ান। পড়াশোনার পাশাপাশি বিতর্কে, গানে আর আবৃত্তিতে সেরা ছিলেন। বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করেন। স্বামী শ্বশুরবাড়ি সব নিয়ে ভালোই সংসার জীবন চলছিলো। সমস্যাটা শুরু হলো বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা করার পর থেকে! আসলে সমস্যাটা শুরু আপু যখন তার স্বামীকে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বলেছে তখন থেকে।

আপু তার শারীরিক সকল ধরণের পরীক্ষা করেছেন। কোন প্রব্লেম ধরা পড়ে নি। তখন আপু তার স্বামীকে বললেন তিনিও যেন কিছু পরীক্ষা করেন। আপুর এই কথায় তার স্বামীর ইগোতে খুব লেগেছে। পারিবারিক ঝামেলা তখন থেকে শুরু। এখন সেই ঝামেলা শাখা প্রশাখা খুলে ডিভোর্সের পর্যায়ে চলে গিয়েছে।এটা ২০১৯সাল। এখনো কিছু শিক্ষিত ছেলে এই ধরণের মন মানসিকতা নিয়ে বসবাস করে ভাবতে অবাক লাগছে।

একজন মেয়ে শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেই বাচ্চা হবে না, একজন ছেলেকেও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। আমাদের সমাজে বাচ্চা না হলে শুধুমাত্র মেয়েকেই দোষারোপ করা হয়। আপনারা কি জানেন না একজন মেয়ের একার পক্ষে কোন বাচ্চাকে জন্ম দেওয়া সম্ভব না? আর, যদি কারো কোন অসুখ ধরাও পড়ে তাতে সমস্যাটা কোথায়? অসুখ বিসুখ তো কেউ বলে কয়ে নিয়ে আসে না। যে সমাজে শুধুমাত্র বাচ্চা না হওয়ার জন্য যদি কোন মেয়েকে সংসার ছাড়তে হয়, তাহলে ধরে নিবেন সেই সমাজে পচন ধরছে। আর সেই পচনে পোঁকা ধরেছে।

Leave a Comment