মায়েরা সুপারহিউম্যান!

  • জান্নাতুন নুর দিশা
  • জুন ১১, ২০১৯

এবার ঈদে জামা কেনার ইচ্ছে ছিল না। যেহেতু ঈদের আগেই মোবাইল কিনেছি হাত ছিল খালি। তারপর দরকারি বেশ কিছু বই কেনা, তাছাড়া রোজার কদিন আগেই শাড়ি কেনা হল বলে ভেবেছিলাম কেন বাড়তি খরচ করব। অপ্রয়োজনীয় খরচ আমার বরাবরই অপছন্দ।

আম্মু ঈদের দুদিন আগে আমাকে একবার জোর করেই শপিংয়ে নিয়ে গেল। বলল নিজের জন্য শাড়ি কিনবে। আমাদের ঈদের শপিং থেকে শুরু করে সব খরচ ফিক্সড থাকে। বাড়তি এক টাকাও কোনোদিকে খরচ হবার মত হাতে থাকে না কারো। শেষ মুহূর্তের বেশ কিছু শপিং বাকি ছিল। সেসব সেরে, শাড়ি কিনে আম্মু একটা ড্রেসের দোকানে নিয়ে গেল আমাকে। বলল, "ড্রেস পছন্দ কর একটা।" ভ্যাবাচেকা খেয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। বললাম, "আমি তো ড্রেস নেবো না আম্মু। তাছাড়া হাতে এখন অত টাকা নেই। এই তো সেদিন শাড়ি নিলাম না?" বলল, "কথা কম, আমার সন্তান নতুন কাপড় ছাড়া ঈদ করতে পারে না। টাকা আমি দেবো। তুমি পছন্দ কর।"

শেষে ড্রেস কিনেই ফিরতে হল! সংসারে আমাদের সকলের কমবেশি উপার্জন আছে। শুধু আমার মা গৃহিণী, উপার্জন করেন না। মাসের বিশ দিন ফুরোলেই আমরা সবাই ফতুর হয়ে যাই টাকা পয়সা খরচ করে। শুধু ফতুর হন না আম্মু। আমরা আম্মুর কাছ থেকে ধার করি। বেতন পেয়ে শোধ করি। কোথা থেকে যে উনি টাকাপয়সা বের করেন কে জানে! ওনার টাকার ভাণ্ডার কখনোই ফুরোয় না। ছোটোবেলা থেকেই আমার আম্মুকে সুপারম্যান মনে হয়।

পরিবারের যেকোনো সমস্যায় আল্লাহ সব সমাধান সম্ভবত মায়েদের হাত দিয়েই পাঠিয়ে দেন। দেখা যায়, কখনো কোথাও যেতে আম্মু নিষেধ করেছেন, নিষেধ ঠেলে গেলেই কোনো বিপদ হয়, ঝামেলায় পড়ি। মায়ের আদেশ ডিঙিয়ে তাই কখনো কোথাও যাই না। আমাদের মায়েরা আসলেই একেকজন সুপারহিউমেন। একেকজন ধৈর্য আর ত্যাগের মূর্তমান প্রতীক। সন্তানের সব সমস্যার সমাধান করাত, সব কষ্টের লাঘব করার, সব না বলা কথা বুঝতে পারার এক অভাবনীয় ক্ষমতা নিয়ে একেকটি মাতৃসত্ত্বার আবির্ভাব হয়। যার মা পাশে থাকেন, তার কোনো পীর, কোনো সাধক, কোনো মোটিভেশনাল স্পিকার বা অন্য কোনো সাহসদাতা কিংবা অনুপ্রেরণাদাতার প্রয়োজন হবার কথা নয়। 

টি/শা 

Leave a Comment