নারীর সাইকোলজি কী!?

  • আদিব হোসাইন
  • জুন ১৮, ২০১৯

আজ অব্দি মেয়েদের সাইকোলজি নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। কারন মেয়েদের মধ্যে নরমাল সাইকোলজির বাইরে কিছু ব্যতিক্রমধর্মী সাইকোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তা অন্য কোন শাখাতে পড়েনা। কিন্তু আবার অ্যাবনরমাল সাইকোলজিও নয়। তাই নারীসুলভ অল্প
সংখ্যক মৌলিক বিষয় নিয়ে গড়ে উঠেছে ফেমিনিন সাইকোলজি।

মেয়েদের মধ্যে সব সময় একটা নিজস্বতায় ঘেরা ব্যক্তিত্ত্ব থাকে, যা তাদের সৌন্দর্যের সঙ্গে আত্মীক ভাবে মিশে আছে। 

ফেমিনিন সাইকোলজির একটা বড় অংশই নিজ সত্ত্বা নিয়ে, যা সম্পূর্ণ নারী জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। পৌরুষের নিজস্বতা বলতে যা বোঝায়, তা থেকে সম্পূর্ন আলাদা। একজন পুরুষ যেমন মাতৃত্বের অনুভূতি কেমন সেটা বুঝতে পারবেনা, যদিও আঁচ করতে পারবে কষ্টের ব্যপারটা। তেমনি এই নারীসত্ত্বা নিয়েও কখনো সুস্পষ্ট ধারণা করতে পারবে না।

নারীদের এই নিজ ব্যক্তিত্বের কথা সর্বপ্রথম বলেন (গুরু) সিগমুন্ড ফ্রয়েড। তাঁর মতে, নারী শিশুর জন্মের ১ থেকে ৫ বছরের মধ্যে, ইডিপাস কমপ্লেক্স থেকে। মেয়ে শিশুর ভেতর এই কমপ্লেক্সের তীব্রতা ছেলেদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

যেমন তুলনামূলক সুন্দরী, গোলগাল, নাদুস-নুদুস বাচ্চাদের সবাই একটু বেশি আদর করে। এবং সেই মেয়ে ৯ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই বুঝতে পারে সমাজের কাছে তার কদর বাকি আট, দশটা মেয়ের থেকে বেশি। যে মেয়ে যতো বেশি সুন্দরী, তার মধ্যে এই বোধ ততো দ্রুত এবং তীব্রভাবে প্রবেশ করে। এই ব্যপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর পরিপূর্ণতা হচ্ছে নারীসত্ত্বা।

একটা কথা বলা দরকার, সৌন্দর্যের সংজ্ঞা এক একজনের কাছে এক একরকম। কিন্তু সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সাইকোল-অ্যানালাইসিস। তাই সাইকোলজিতে সৌন্দর্য্যের একটা নির্দিষ্ট সংজ্ঞাও রয়েছে। তা হচ্ছে- কোন মানুষ যদি নিজেকে ভাবে “আমি সুন্দর”, তবেই সে সুন্দর। তারপর কার কাছে ভালো লাগলো আর লাগলো না, সেই কথা গ্রহনীয় নয়।

আবার কারো নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে, নিজেকে বেশি সুন্দরী ভাবার কারণে তার মধ্যে সৌন্দর্য জনিত আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য তৈরী হয়, যা তার ব্যক্তিত্বে প্রচুর প্রভাব ফেলে এবং সমাজের মুষ্টিমেয় মানুষ সুন্দরী বলে মতামত দিলে তবেই তার মধ্যে “আমি সুন্দরী” এই বোধটা তৈরী হয়।

উদাহরণ- হিসেবে বলা যেতে পারে পিগমিদের কথা। আফ্রিকার বিশেষ একদল পিগমিদরা প্রতি বছর একজন সেরা সুন্দরী বিবেচনা করে গ্রামের সর্দারের সেবায় পাঠানো হয়। সেই সুন্দরীর চেহারা দেখলে আমাদের চমকে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। অর্থাৎ, বুঝা যাচ্ছে একটি মানুষ সুন্দর কিনা নির্ধারণ করবে তার সমাজ! কিন্তু ঐ সৌন্দর্যের ব্যপারটা তখন থেকেই ঐ মানুষটির সাইকোলজিতে প্রভাব ফেলা শুরু করবে তখন সে তার সৌন্দর্য নিয়ে সম্পূর্ণভাবে সচেতন হবে। ফ্রয়েডের ভাষায়, তার চেতন এবং অবচেতন মন তাকে সুন্দরী হিসেবে ঘোষণা করবে।

সুন্দরী একটা মেয়ে যখন ধীরে ধীরে তার নিজস্ব সৌন্দর্যের ব্যাপারে সচেতন হয়, তখন তার মাঝে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। সে যখন সাবালিকা হয়, তখন তার ব্রেন থেকে মূল মেয়েলি হরমোন ইস্ট্রোজেনের নিঃসরণ বৃদ্ধি পায় এবং তা প্রবল হয়। এই বৃদ্ধির পরিমাণ এক সময় সৌন্দর্যের উপর প্রভাবিত হয়। বিশেষ করে যেসব মেয়েরা নিজেদের অত্যধিক সুন্দরী বলে মনে করে, তাদের ক্ষেত্রে এই হরমোনের নিঃসরণ স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চারগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এবং এক্ষেত্রে ঐ হরমোন জনিত ইস্ট্রোজেনের প্রভাব দেখা যায় খুব বেশি।

তার শরীর-স্বাস্থ্য অনেক সুগঠিত হয়, নারীসুলভ আচরণ বহুমাত্রায় বেড়ে যায়। যে কারণে সমাজের চোখে, তথাপি তার চোখে সে আরও সুন্দরী হয়ে উঠতে থাকে। তখনই মাঝে মাঝে বিভিন্ন জনের মুখে বলতে শোনা যায়- “যতোই দিন যাচ্ছে মেয়েটা আরও সুন্দরী হয়ে উঠছে!”

সাধারণত ‘আমি সুন্দরী’ বোধটাই মেয়েদের আরও আকর্ষণীয় করে তুলার মূল কারণ, যা অনবরত মস্তিস্কে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এই বোধের কারণেই তাদের সৌন্দর্য ও সুশ্রীর পরিপূর্ণতা পায়, এই প্রভাবিত ইস্ট্রোজেনের কারণে নারীসুলভ আচরণ প্রচুর পরিমাণে বাড়তে থাকে যা ছেলেদের মনকে ঐ মেয়ের প্রতি আরও বেশি আকৃষ্ট করে।

তথাকথিত কোন অসুন্দরী যুবতী মেয়ের ভেতর যদি এই চেতনা ঢুকিয়ে দেয়া যায় যে, সে খুব বেশ সুন্দর, তাহলে দেখা যাবে এক সময় তার মাঝেও এই টার্মটা কাজ করা শুরু হয়েছে, এবং তার নিজস্ব  ব্যাপারে ধারণা ভাঙার আগ পর্যন্ত তার সাইকোলজি একজন সুন্দরী মেয়ের মতোই তাকে উপলব্দি হবে,  ফলে তার নারীসুলভ আচরণ বৃদ্ধি পাবে। তার শারীরিক গঠন ও চিন্তা  ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে বেশ সুগঠিত হবে। তবে এই ধারণা এক সময় না একসময় ভেঙে যায়, তখন মেয়েটির সাইকোসেক্সুয়াল ভিত্তিটি নড়বড় করে উঠার সম্ভবনা তৈরি হয়। এবং বিষাদের সহিত বলতে হচ্ছে, এই ধরনের মেয়েরাই সমাজ, পরিবেশে সবচেয়ে বেশি অপমানিত, অপদস্ত কিংবা লাঞ্চিত হয়, এরাই সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করে থাকে। তবে অনেক সময় তাদের নারীসুলভ আচরণ কিংবা বৈশিষ্ট্য সঠিকভাবে গৃহীত হয়, নারীসত্ত্বার বিকাশ ঘটে যেতে পারে বা সুযোগ হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা প্রতারিত হয়ে থাকে। ছেলেদের লোভে অনেক ধরনের লাঞ্চনার শিকার হয়। অসুন্দর হয়েও তাদের নারীসুলভ আচরণ পরিবারে ও বন্ধুদের মধ্যে বিরক্তকর প্রভাব সৃষ্টি করে।

বিখ্যাত ফিমেল সাইকোলজিস্ট অ্যানা মোটজ এ সম্পর্কিত একটি চমৎকার উদাহরণ দিয়ে বলেছেন- একবার একটি মেয়েকে তার কাছে আনা হয়েছিল, যে খুবই ধনী পরিবারের একমাত্র মেয়ে। তার চেহারা ছিল মোটামুটি সুন্দর, তবে চুলগুলো ছিল কিছুটা কুৎসিত। অ্যালোপেশিয়া রোগের কারণে তার মাথার চুল এমনিতেই অদ্ভূত আকৃতির ছিল, এর সাথে ফাঙ্গাসের সংক্রমণে মাথার বিভিন্ন জায়গায় চুল উঠে গিয়েছিল, যার কারণে তাকে বেশ ভয়াবহ দেখায়।

পরিবারের আদর ও প্রশংসার  ব্যাপারে সে তেমন সচেতন ছিল না। বরং পরিবারের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে হিসেবে তার বেশ গর্ব ছিল, স্বাভাবিকভাবেই চুল নিয়ে অন্যান্য মেয়েদের মতোই খেলা করত, নিজেকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে রাখতো। কিন্তু তার বিয়ের রাতে স্বামী তার চুলের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে। মনে মনে তাকে আর মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু দিনে দিনে মেয়েটির নারীসুলভ আচরণে বিরক্ত হয়ে একদিন বলে ওঠে, “তোমার চুলের এমনি অবস্থা, সাজগোজ করলে আরও বিশ্রী দেখায়। তোমাকে আমি আর কোন পার্টিতে নেবো না, আমার বন্ধুরা হাসাহাসি করে”।

সেই ছিল শুরু। মেয়েটিও এক সময় বুঝতে পারে তাকে আক্ষরিক অর্থে পরিবার সুন্দরীর বদলে কুৎসিতই বুঝাইতো। এবং পরে সে তার চুলে উত্তপ্ত গরম পানি ঢেলে দেয়। এরপর থেকে তাদের সংসারে প্রচুর অশান্তির শুরু হয়, এক পর্যায়ে মেয়েটি সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়। অ্যানা মোটজের মতে, মেয়েটির মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার এক মাত্র কারণ তার শৈশব থেকে সযত্নে লালিত তার সৌন্দর্যে বড় ধরণের আঘাত।

সুন্দর মেয়েদের সংসার জীবন নিয়ে আলাপ করি এবার। দেখি কতোটা ভালোবাসা মাখা জীবন দিয়ে অতিবাহিত করে থাকে তাদের ঐ মুহূর্ত টা। দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে আধুনিক মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সুন্দরী নারীদের শতকরা ৯১ ভাগই আপন নিজস্ব জীবনে অসুখী হয়। এর কারণও কিন্তু তাদের নারীসত্ত্বার ভুল বোঝাবুঝি। এতোক্ষন মেয়েদের সুন্দর নিয়ে অনেক কিছু ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে শোনলাম। কিন্তু যাকে নারীর সৌন্দর্য বলে যাচ্ছি, এবার তাহলে ছেলেদের চোখে দেখা যাক এই সুন্দরের ব্যাপারটা তাদের মাঝে কেমন কাজ করে৷

যেকোনো সুন্দর জিনিস দেখলে ভাল লাগে, তাই বলে সারাজীবনই এইটা সুন্দর লাগবে এমন নয়। এখানে ভালোবাসা, ভালো লাগার একটা ব্যাপার কাজ করে থাকে। জিনিসটা যতক্ষন চোখে লেগে থাকবে ততক্ষন সেই সুন্দরের ব্যাপারে আলোকপাত করতে থাকি আমরা। চোখের আড়াল হলেই শেষ।

যেমন- একটা ফুল খুব সুন্দর হলে আর প্রতিদিন সেটা দেখলে আর সেটার গন্ধ পেতে থাকলে এক সময় সেই ফুলের প্রতি আর পুরনো সুন্দর বোধ কাজ করবেনা। বাস্তবে, নারীর ব্যাপারেও এরকম একটি বিশেষ ধরনের সৌন্দর্যবোধ কাজ করে। যার ফলে ছেলে বা পুরুষ দীর্ঘদিন একজনের সাথে থাকতে থাকতে তার ব্যাপারে অনিহা তৈরি হয়, সেটা স্বাভাবিক । এটার উৎপত্তি হয় টেস্টোস্টেরন হরমোন থেকে, যা একই সাথে যৌনতারও উৎপত্তিস্থল। তবে সাধারণত এটি একটি ইনফ্যাচুয়েশন বা মোহ বলা যেতে পারে।

ইনফ্যাচুয়েশনের হচ্ছে তা সাময়িক, অর্থাৎ এটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে বাধ্য। নারীর সৌন্দর্যের প্রতি পুরুষের আকর্ষণই ইনফ্যাচুয়েশন।

অনেক সময় সুন্দরী মেয়েদের সাথে বিয়ে হলে ছেলেদের কাছে স্ত্রীর রূপটাই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। তবে এই রপটা যে সাময়িক। এবং সেটা কেটে যেতে খুব একটা সময়ের প্রয়োজন হয় না। সুন্দর ফুল কিংবা সুন্দর কোন জায়গার মতোই। এরপর ছেলেটা আর যে তিনটা গুনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, মেয়েটার - ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাস এবং স্বামীর প্রতি বাধ্যতা। কিন্তু আজকাল একটা সুন্দরী মেয়ের সাইকোলজি অনুসারে, তার মধ্যে এই তিনটি গুণের দুটিই বিলুপ্ত । তার ব্যক্তিত্বের মূল হচ্ছে তার সৌন্দর্য, এবং এই সৌন্দর্যের আদলেই সে গড়ে উঠে। সৌন্দর্যের কারণে তার মধ্যে ততোদিনে সৃষ্টি হয় তীব্র নার্সিসিজম বা আত্ম-অহমিকা। আর এই যে ইগো টাকে কে ফ্রয়েড বলেছেন মানব জীবন কিংবা নারীর জীবনের চালনাকারী, কিন্তু দেখা গেলো তার সেই ইগোটাকেই সম্পূর্ণভাবে দখল করে ফেলেছে সৌন্দর্য। যার ফলে তৈরি হয় তার নার্সিসিজম। কিন্তু নার্সিসিজম আসলেই কী তা?না!

রূপজনিত কারণে স্বামীর প্রতি পরিপূর্ণ বাধ্যতাও এক সময় হারিয়ে ফেলে বরং “স্বামী আমাকে পেয়েছে এই তার চৌদ্দ পুরুষের ভাগ্য!” ধরনের মনস্তত্ত্ব বিষয়ও আলাপচারিতায় উঠে আসে। কিন্তু তাও অনেক সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাসটা তখনও অটুট থাকে। যদিও টিকের ব্যাপার সম্পূর্ণ নির্ভর করে স্বামীর উপর। আর সে যখন বুঝতে পারে তার প্রেয়সীর মধ্যে তার আকাঙ্ক্ষিত মানবীয় তিনটা গুণাবলী খুব বেশি অবশিষ্ট নেই, তখনই মনে মনে বলতে থাকে “শুধুই চেহারা দেখে এক মেয়েকে বিয়ে করলাম? “আমাকে কি তাহলে সে সহ্য করতে পারে না?” এক সময় এমন ধারণা থেকে জন্ম হয় সন্দেহের। আর সে স্ত্রীকে নানা ভাবে পরীক্ষা করে, শুরু হয় বিশ্বাসের ফাটল।

এক সময় স্ত্রী তার নিজস্ব প্রবৃত্তি থেকে বুঝতে পারে স্বামী তাকে পরীক্ষা করতে চাইছে, তাকে পরিপূর্ন বিশ্বাস করছে না।আর তার সৌন্দর্যের উপর গড়ে ওঠা ব্যক্তিত্বে এসে পড়ে বড় আঘাত! স্বামীকে সত্যিকার অর্থে ভালোবেসে থাকলে সাধারণত এই সময় সে চেষ্টা করবে স্বামীকে নিজের সবচেয়ে বড় সম্পদ, রূপ দিয়ে আরও গভীরভাবে পেতে। স্বামীও স্ত্রীকে পরিপূর্ণরূপে ভালবেসে থাকলে ব্যাপারটা এখানেই শেষ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।

কিন্তু স্ত্রী যদি স্বামীকে বা স্বামী যদি স্ত্রীকে তেমন ভাবে ভালো না বাসে, তাহলে এটা মাত্র শুরু বলা যেতে পারে। সেখানে স্ত্রী আবিষ্কার করবে তার সৌন্দর্যের উপর স্বামী আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আবার স্বামীও আস্তে আস্তে বিরক্ত হয় স্ত্রীর প্রতি, স্ত্রী তাকে আকৃষ্ট করতে চাইলেও “এতো ভালোবাসার আহ্লাদ?” দেখে নানা প্রশ্ন করতে থাকে স্ত্রীকে। স্ত্রীরও সন্দেহ আরও গাঢ় হয়, স্বামীর সন্দেহও ঘনীভূত হয়। এরপরও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংসার টিকে থাকে সমাজ সামাজিকতার কথা ভেবে যদিও থাকেনা সুখ। আবার বলা যায় এই টিকে থাকাটাও মেয়েদের উপরই নির্ভর করে। কিন্তু অনেক সময় স্বামী নতুন কোন ইনফ্যাচুয়েশনের দিকে ঝুঁকে পড়ে, অর্থাৎ অন্য কোন মেয়ে। স্বামীর কাছ থেকে নিজের পরিপূর্ণ মূল্য না পেয়ে স্ত্রীও অন্য প্রেমের দিকে ঝুঁকে। শুরু হয় চিরন্তন দ্বন্দ্বের। তবে আশার কথা এই যে, অনেক সময় সন্তান নিলে স্বামী ও স্ত্রীকে এমন উলটো পথ থেকে ফিরিয়ে  আনতে পারে আর স্ত্রীর মনের সৌন্দর্য সুলভ ব্যক্তিত্বটা স্থান করে নেয় মাতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। স্বামীও আগের সব ভুল ভুলে সংসারে মনযোগী হয়ে উঠে। প্রেমিক প্রেমিকার ক্ষেত্রেও এই ব্যাপার গুলো লক্ষ করা যায়। 

এবার আসি অসুন্দরী মেয়েদের সম্পর্কে, সে সম্পর্কে আসলে খুব বেশি কিছু বলার নেই। সৌন্দর্যের মাপকাঠি তাদের মন। যদি তাদের মন বলে “আমি অসুন্দর” তবেই সে অসুন্দর। বেশিরভাগ মেয়েই এই ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণ মেনে নেয়। ধীরে ধীরে অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেকে মনোযোগী করে তুলে তার এই ‘ঘাটতি’ পূরণ করার চেষ্টায়। যদিও কিশোরী বয়সে বেশিরভাগ মেয়েই এ নিয়ে ম্যানিক- ডিপ্রেসিভ ডিজর্ডারে ভুগে, বড় হতে হতে তা ঠিক একদিন হয়ে যায়। এই সব মেয়েই সাধারণত বাস্তববাদী হয়; রূপই যে সব নয় তা বুঝতে শিখে যায়। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এদের তুলনামূলক বেশি উন্নতি করতে দেখা যায়।

যদিও একটা মানুষকে বা একটা সুন্দরী মেয়েকে সবাই অসুন্দরী বলা শুরু করে তাহলে সে প্রভাবি হয়ে এক সময় নিজেকে অসুন্দরী ভাবতে শুরু করে। দেখা যায় এক সময় বন্ধু বান্ধব কিংবা ভার্সিটিতে তার সুন্দরের প্রশংসা করলে বলে উঠে- হয় বলতে তোদের আমি সুন্দরী! আমার বাবা মা সব সময় বলে আমি কাইলা, অসুন্দরী। এটাও একটা মনস্তত্ত্ব ও নিজস্ব হারানোর সাইকোলজিক সমস্যার মধ্যে পড়ে। 

এই হচ্ছে ফিমেল সাইকোলজির বেসিক পর্যায়ের কিছু ধারণা।

এগুলো সব যে আবার সবার জন্যে খাটে তা কিন্তু নয়। কারণ আধুনিক সাইকোলজির ভাষাও ফিজিক্সের মতোই সবকিছুতে আপেক্ষিকতা জড়িত। অনেক সুন্দরী মেয়েও প্রচন্ড রক্ষণশীল পরিবেশের মধ্যে বড় হলে তার ভেতর সৌন্দর্য সম্পর্কিত ইগো তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আবার তেমন অসুন্দরী মেয়ে একটা অভিজাত পরিবারে জন্ম নিলে তার মাঝেও সৌন্দর্য সম্পর্কিত এই ইগো তৈরী হতে পারে।

আবার কোন পরিবারে দেখা গেল তিন বোন, তিন জনই অনেক সুন্দরী। এর মধ্যে ছোটজন একটু কম হওয়ায় তার মধ্যে ‘আমি অসুন্দর’ ধারণার বিকাশ লাভ করতে পারে। সৌন্দর্য সুলভ আচরণগুলো তার মধ্যে অনুপস্থিত থাকতে পারে। তাই নারীকে এ ধরনের মাপকাঠিতে বিবেচনা করার জন্যে তার পেছনে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে যে, মানুষের মন কখনোই সরল সমীকরন মানে না। যেকোন পরিস্থিতিতে যেকোন রূপ ধারন করতে পারে।

কষ্টের ব্যাপার হচ্ছে, আধুনিক বিশ্ব বর্তমানে এই সৌন্দর্য নির্ভর সমাজ ব্যবস্থা থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে, কিন্তু আমাদের দেশে এধরনের পরিবর্তন হচ্ছে না বললেই চলে। এখনো আমরা মানুষকে সবার আগে বিচার করি তার রূপ, বংশ, টাকা, পড়া শোনা, কিন্তু কর্ম দিয়ে নয়। একটু সুন্দর বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই তাদের সৌন্দর্য টা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু এটা কোন ভাবেই ঠিক নয়। আজকের বিশ্বে যেকোনো ধরণের সম্পর্ক ভাঙা-গড়ার এই নির্মম প্রক্রিয়ায় জন্যে এই সাইকোলজিক্যাল জটিলতাই মূলত দায়ী।

আমার লেখার মূল ভিত্তি ফ্রয়েডিয়ান সাইকোলজি। সাথে আমার নিজস্ব ছোট গবেষনাও যুক্ত করেছি।  সাইকোলজির প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনেকগুলো করে মতবাদ আছে, অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো বিপরীতও হতে পারে।

আমরা যতটা জানতে পারি বা বুঝতে পারি ততটাই আমরা শেয়ার করি কিংবা মূলধারায় তুলে আনতে চেষ্টা করি। আমার চিন্তা আপনাকে প্রভাবিত করতেও পারে, আবার নাও করতে পারেন। ধন্যবাদ। 


 

Leave a Comment