সন্দেহ বনাম স্বামী-স্ত্রী

  • রোজী আরেফিন
  • জুন ২৭, ২০১৯

অফিসের কাজে আজকাল প্রায়ই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে মিলাকে। স্বাভাবিকভাবেই মিলার হাইলি অফিসিয়াল হাজব্যান্ড এটাকে কিছুই মনে করতেন না এতোদিন। আধুনিক যুগে উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা সংসার করার পাশাপাশি  নিজেদের ক্যারিয়ারের দিকেও সমান ব্যস্ততা দেখায় এটা সব স্বামী স্ত্রী এমনকি পরিবারের সকল সদস্যরাই খুব পজিটিভলি দেখেন।

কিন্তু মিলার এই অতিরিক্ত ব্যস্ততা শুধুই ব্যস্ততা রইলো না, কাল হয়ে তার সংসার জীবন কে উলটেপালটে তছনছ করে দিতে লাগলো। শুধু কি তাহলে এই ব্যস্ততার জন্যই মিলার জীবনে এতো অশান্তি? তা না নয়, মিলার জীবনে এর অশান্তি মূলত মিলার হাজব্যান্ড এর করা অমুলক সন্দেহ থেকেই সৃষ্ট।

এক লিটার দুধে যেমন এক ফোটা লেবুর রসই পর্যাপ্ত সম্পুর্ন দুধটাকে ঘোলে পরিনত করতে তেমনি মিলার সুখের সাজানো সংসার টাকেও তার হাজব্যান্ড এর ইদানিংকালের এতটুকু সন্দেহই একেবারে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দিতেই পর্যাপ্ত হচ্ছে। প্রিয় পাঠক,এতক্ষণ যে মিলার কথা বললাম আসলে এই মিলা চরিত্রটি একেবারেই আমার কাল্পনিক। যদিও আমি আমার লিখার সুবিধার্থে মিলা নামক চরিত্র টি এখানে হাজির করেছি কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি আমরা যদি একটু ভালো করে তাকাই তাহলে আমাদের আশেপাশেই এমন অনেক মিলার অভাব কিন্তু আমরা পাবো না।

বিশেষ করে চাকুরীজীবি নারীরাই এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বেশী। একজন চাকুরীজীবি নারীকে বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন নারীপুরুষের সাথে কথা বলতে হয়, উঠাবসা করতে হয়। এবং এ থেকেই মূলত তাদের পরিবারের বিশেষ করে হাজব্যান্ডের সন্দেহের তীর টা তার দিকেই আস্তে আস্তে ছুটে আসে।

অনেক নারীরা অনেক বেশী মিশুক হোন, এবং তারা খুব বেশী সোশ্যাল ও হোন। দেখা যায় এমনকি রিক্সা ভাড়া দেওয়ার সময় ও রিক্সাচালকদের সাথে তারা অযথাই হেসে হেসে কথা বলছেন। এই বেশী মিশুক নারীরাই হাজব্যান্ডের সন্দেহের কোপে বেশী পরেন।

উঠতে বসতে হাজার হাজার কৈফিয়ত,

-এটা করছো কেন

-ওটা করছো কেন

-ফোন বিজি কেন

-ফোন ওয়েটিং কেন

-ফোন অফ কেন

-টাকা বেশী কেন,টাকা কম কেন।

-এই ড্রেস টা কিভাবে আসলো

-দেরী হলো কেন

-কোথায় গিয়েছিলে

-এখানে লাল কেন

-ওখানে কালো কেন

ব্লা ব্লা এরকম হাজারো প্রশ্নে নারীর মন কে ক্ষতবিক্ষত আর জর্জরিত করেও শান্ত হয়না পুরুষের সন্দেহবাতিক মন। রেগুলার কৈফিয়ত দিতে দিতে একসময় নারীটাও বিরক্ত বিপর্যস্ত আর ক্লান্ত হয়ে যায়। আর তখনি সেও বেঁকে বসে। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ হয়তো একেবারে চুপসে আসে আর কেউ কেউ রাগে দুঃখে নিজের সমস্ত খেই হারিয়ে প্রতিশোধপরায়ন হয়ে পরে ওই পুরুষের প্রতি। আর এই সময় টাতেই অনেক নারী ভুল পথে পা বাড়ায়,একটা সোনার সংসার ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে।

তাই সমাজের পুরুষদের প্রতি আহবান,দয়া করে নিজের শুচিবাইগ্রস্ত মানসিকতা বদলান। ভালোবাসা দিয়ে নিজের স্ত্রী কে নিজের নারী করে নিন। একটা কথা মনে রাখবেন,যে আপনার হবে সে কখনো আপনাকে ঠকাবেনা। আর যে আরেকজনের হবে সে কখনো আপনার অমূলক সন্দেহে আপনার কাছে ফিরে আসবে না।

আর নারীদের বলি,প্র বাদে আছে অন্যায় যে সহে আর যে রহে সে সমান অপরাধী। অযাচিত বাড়াবাড়ি ধরনের সন্দেহও একটা মস্ত বড় মানসিক অপরাধ। তাই আপনার হাজব্যান্ড কে বোঝানোর চেষ্টা করুন যেন এমন অমুলক সন্দেহ না করে আর আপনি অবশ্যই রাগের মাথায় কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না এটাও মাথায় রাখবেন।

ভালো থাকুন,ভালো রাখুন।

ধন্যবাদ।

Leave a Comment