স্বকীয়তাই শক্তি

  • জান্নাতুন নুর দিশা
  • জুলাই ১৩, ২০১৯

একজন পরিচিত নারী ইনবক্সে জানাচ্ছিলো তার শ্বশুরবাড়িতে সবাই তার রান্না নিয়ে হাসাহাসি করছে। এখন রান্না শেখার জন্য সারাদিন ইউটিউবে পড়ে থাকে সে। জানতে চাইলাম হাসাহাসির কারণ কী। যা জানলাম তা শুনার পর আমার নিজেরই হাসি পেল! ভদ্রমহিলা সদ্যবিবাহিত। ছেলেপক্ষ যেদিন ওনাকে দেখতে আসে, ওনার মা অনেক সুস্বাদু খাবারদাবার রান্না করেন। 

ওনার মায়ের রান্নার হাত ভালো। তাই খাবার খেয়ে পাত্রপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়। কিন্তু ভদ্রমহিলার মা তাদের বলেন এই রান্না ওনার মেয়ে করেছে! অথচ ভদ্রমহিলা খুব একটা ভালো রাঁধেন না, গড়পড়তা রাঁধেন। এখন বিয়ের পর তার প্রেস্টিজ নিয়মিত পাংচার হয়ে যাচ্ছে! শ্বশুরবাড়ির লোকজনও করছে হাস্যরস। 

এই যে আমাদের দেশে বিয়ের সময় উভয়পক্ষ হাজারটা কথা বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে ওভার এক্সপেকটেশন তৈরি করে, এই রেওয়াজ অনেক পুরনো। খুবই ক্ষতিকর এবং পরবর্তীতে অসম্মানজনক এই রেওয়াজ। আমার এক দূর সম্পর্কের মামাকে বিয়ের পর বলতে বিদ্রূপ করে শুনেছিলাম, "তোমাদের মামী যখন বিয়ের পরদিন গোসল করে বের হলেন, তাকে আমি চিনতেই পারি নি।" মামাকে তো আমি দোষ দেব না। বিয়ের আগে মামীকে যতবার দেখেছেন মামা, প্রত্যেকবার তাকে মেকআপে দেখেছেন। এই যে মেকিভাবে নিজেকে উপস্থাপন, কী প্রয়োজন? সারা জীবনের জন্য ছোট হয়ে যাওয়া। 

এসবে আরেক কাঠি সরেস হল ঘটক বা বিয়ের মাধ্যম শ্রেণী। এরা এক পক্ষের সামনে আরেকপক্ষকে রাজকীয় বর্ণনায় তুলে ধরে। এই যে বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলা, দিনশেষে তৈরি করে একের প্রতি অন্যের অবিশ্বাস, অনাস্থা। এই যে নিজের ব্যাপারে বাড়িয়ে বলবার চর্চা শুধু যে বিয়েশাদির ক্ষেত্রে তা নয়, এসব আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমরা ক্রয়কৃত পণ্যের দাম অন্যের কাছে অহেতুক বাড়িয়ে বলতে ভালোবাসি, অনেক অভিভাবককে দেখেছি সন্তানের রেজাল্ট নিয়ে অন্যদের কাছে মিথ্যাচার করেন। আমরা আমাদের অপূর্ণতাগুলো, আমাদের অপ্রাপ্তিগুলো ঢেকে রাখতে অভ্যস্ত।

নিজেদের খুঁতগুলো বরং প্রকাশিত রাখুন। আপনি যতটুকু ভাবেন নিজেকে, তার চেয়ে বরং কমই প্রকাশ করুন। যে আপনাকে আপনার ত্রুটিবিচ্যুতিসহ গ্রহণ করতে জানবে, সেই তো আপনাকে প্রকৃত ভালোবাসে। 


 

Leave a Comment