সম্মান দেয়াতেই মহত্ত্ব

  • জান্নাতুন নুর দিশা
  • আগস্ট ১৫, ২০১৯

কয়েকদিন আগে এক আড়ম্বরপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখলাম স্টেজে একদল বয়স্ক মহিলা উঠে বউয়ের পাশে বসে রইল। ফটোগ্রাফি রিলেটেড যারা কাজ করছিলো তাদের ডাক দিয়ে ধমকের সুরে বললো, "অ্যাই ক্যামেরাম্যান, তোমরা তাড়াতাড়ি ছবি তুলো তো। এত দেরী কর কেন?" ফটোগ্রাফারসহ বাকি যারা কাজ করছিলো বিব্রত চোখে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ কয়েকটা ছবি তুলে দিলো। এতে মহিলাগুলোর মন ভরলো না। তারা এ এঙ্গেল সে এঙ্গেল থেকে ছবি তোলার জন্য রীতিমত ফটোগ্রাফারদের আদেশ দিচ্ছিলো। 

এ জাতীয় অভিজ্ঞতা প্রায় ফটোগ্রাফারদের আছে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর সাথে রিলেটেড যারা তাদেরকেও হরহামেশাই অতি তুচ্ছভাবে ট্রিট করে এক শ্রেণীর লোকজন। এরা ভাবে বিয়েতে যারা কাজ করছে, তাদের পেশা ক্ষুদ্র মানের। কত হাই প্রোফাইল উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়ে এখন এসব নিয়ে কাজ করে এসব নিয়ে অনেকেরই এখনো ধারণা নেই। 

যদি উচ্চশিক্ষিত নাও হয় তবু যাকে তাকে তুমি করে বলা, ধমকানো যে অভদ্রতা এই সেন্স বিন্দুমাত্র দেখা যায় না অনেকের মধ্যে। পেশাকে ছোট করে দেখা এসব আমাদের পুরনো বদঅভ্যাস। আমরা ভাবি ফটোগ্রাফারকে বিয়ের অনুষ্ঠানে ধমকানো যাবে। নার্সদের নিয়েও অনেকের এই জাতীয় কুধারণা আছে। নার্স বা সেবিকা পেশাকে অতিতুচ্ছ জ্ঞান করা লোকজন এখনো সমাজে আছে। আমার এক আন্টিকেই দেখেছি মেয়ে নার্স বলে একজন গ্রেজুয়েট শিক্ষিত মেয়েকে তিনি তার এসএসসি পাস ব্যবসায়ী ছেলের জন্য বউ করে আনেন নি। 

অন্য এক ভদ্রলোককে দেখেছি এক আপু প্রাইমারির শিক্ষক বলে নাক সিঁটকাচ্ছে। প্রাইমারি সম্পর্কে এদের এখনো কোনো ধারণাই নেই। সেই মান্ধাতার আমলে পড়ে আছে এদের ভাবনা। এরা ফটোগ্রাফার, নার্স, টিচার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার শুনলেই নাক সিঁটকাবে। অথচ দেখা যাবে নিজের ছেলে পাড়ার মোড়ে পানবিড়ির দোকান করে। পান বিড়ির দোকান করাও খারাপ না, কিন্তু বিড়ির গদিতে বসে অন্য পেশাকে ছোট ভাবা ধৃষ্টতা। 

অনেককে বলতে দেখবেন বুয়াকে বুয়া, ড্রাইভারকে ড্রাইভার বলে ডাকা উচিত না, তাদের খালা, চাচা ডাকা উচিত। অথচ বুয়া, আয়া বা ড্রাইভার, দারোয়ান এসব স্রেফ তাদের পেশার নাম। ডাক্তারকে ডাক্তার বললে, উকিলকে উকিল বললে যদি তাদের মানহানি না হয়, দারোয়ানকে দারোয়ান বললেও মানহানি হয় না। নাকি আপনার কাছে আপনার চাচা সম্মানের বিষয় কিন্তু দারোয়ান পেশা অসম্মানের বলে দারোয়ানকে চাচা ডাকতে চাচ্ছেন? 

কোনো নৈতিক পেশাকেই ছোট ভাবার কোনো সুযোগ নেই। আপনার ঘরের বয়ঃজ্যোষ্ঠদের মাঝেমাঝে একটু বোঝাবেন যুগ অনেক বদলে গেছে, বিনয় দিয়ে না চাইলে কোনো পেশাজীবীই শুধু টাকার বিনিময়ে তাদের সার্ভিস দিতে চাইবে না।

Leave a Comment