নারীত্বকে পুঁজি করে অনৈতিক সুবিধা আদায় নারীত্বেরই অপমান।

  • জান্নাতুন নুর দিশা
  • আগস্ট ২৯, ২০১৯

আরো বেশ কয়েক বছর আগের কথা। আমাদের এক সরকারি চাকরিজীবী আত্মীয় বহুদিন ধরে একটা প্রমোশনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছিলেন। এই প্রমোশনের জন্য সব রকম শর্ত পূর্ণ করে এবং সব রকম টেস্টে সবচেয়ে ভালো করেও ভদ্রলোক ঐ প্রমোশন পায় নি। কারণ তার এক সুন্দরী নারী সহকর্মী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অনৈতিক উপায়ে খুশি করে সেই প্রমোশন নিয়ে নেয়। 

শুধুমাত্র নারী পরিচয়কে ব্যবহার করে আলাদা সুযোগ নেবার যে মানসিকতা আজকাল অহরহ দেখা যায়। এই সমাজে অসংখ্য মেধাবী, পরিশ্রমী নারী নিজের যোগ্যতা দিয়ে সফলতা অর্জন করছে। কিন্তু কিছু কিছু সুযোগসন্ধানী নারীর জন্য সকল নারীর অর্জিত সফলতাই ভীষণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ভদ্রলোক প্রচন্ড রকম মানসিক কষ্ট পান, সহ্যই করতে পারছিলেন না এই অন্যায়, কিন্তু ওনার কিছুই করার ছিল না।

কেবলমাত্র নিজের নারী পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে নিজের যোগ্যতার চেয়ে ভালো চাকরি, পদোন্নতি ও কর্মক্ষেত্রে আরো অনেক যোগ্য ব্যক্তিকে বঞ্চিত করে নানাবিধ সুবিধা আদায় করার হীন প্রবণতা নারীত্বেরই চূড়ান্ত অপমান। 

”অসহায় নারীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভোগ করা" ধরনের বাক্য অনেককেই ব্যবহার করতে দেখি। এরা অসহায় নারী হয় কী করে? গার্মেন্টসে চাকরি করা মেয়েদের চেয়েও কি এরা দরিদ্র আর অসহায় যে চাকরির জন্য নিজেকে এভাবে বিলিয়ে দেয়? এ ধরণের নারীদের প্রতি কোনো রকম অনুকম্পা দেখানোর কোনো অবকাশ নেই। এক্ষেত্রে সুযোগ নেয়া পুরুষটি যতটুকু দোষী, সুযোগ দেয়া নারীটি ততটাই দোষী। 

একটা মেয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে, সব রকম যোগ্যতার অধিকারী হয়েও তার যদি এই হীন উপায়ে নিজের নারীত্ব বিক্রি করে উপরে ওঠা লাগে, তবে তার চেয়ে ভিক্ষুকের মর্যাদাও অনেক বেশি। 
 
এ ধরণের যেকোনো উপায়ে সফল হতে চাওয়া দেহ এলিয়ে দেয়া নারীদের জন্যই নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে প্রতিযোগিতা করে উপরে উঠা উদ্যোমী নারীদের দিকেও সমাজ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়।

অথচ সবসময় এমনটা হয় না। অনেক নারীর সফলতার পেছনে অনেক সংগ্রাম, পরিশ্রম, সততা আর ন্যায়নিষ্ঠার গল্প থাকে। নোংরামো আর অসততার গল্পের পেছনে সেসব গল্প কেমন অন্তরালেই থেকে যায়!

একজন যোগ্য, উদ্যোমী, পরিশ্রমীর নারীর যেকোনো রকম অনৈতিক প্রস্তাব ঘৃণা ভরে ফিরিয়ে দেবার মত মানসিক দৃঢ়তা কথা উচিত। নাহয় একটা দুটো সফলতার সুযোগ হাত ছাড়া হয়েই যাবে। তবু তো নিজের বিবেকের সামনে মাথা উঁচু করে বাঁচতে যাবে। নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে নাহয় আর ক'বছর পর সে সফলতা অর্জন করে নেয়া যাবে। গার্মেন্টস শিল্পে অল্পশিক্ষিত মেয়েগুলোই তো নিজেদের পরিশ্রমকে পুঁজি করে বাঁচে। 

আজকে ফ্রেন্ডলিস্টের এক ছেলেকেই দেখলাম লিখেছে যেহেতু সরকারি অফিসে অফিসে মেয়েরা লীলা করছে, তাই মেয়েদের বাল্যবিবাহের ব্যবস্থা করা উচিত! এদের এসব বলার সুযোগ তৈরি হয় এরকম কিছু দুর্নীতিবাজ মেয়ের জন্য! অথচ দুর্নীতিতে সামগ্রিকভাবে সবাই জড়িত। অনেক ছেলেও এমনকি উভগামী বসের কাছ থেকে এ ধরণের নোংরা প্রস্তাব পায়। ছেলেরা আত্মসচেতন বলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব প্রস্তাব ঘৃণা ভরে ফিরিয়ে দেয়৷ নারীদেরও সেরকম শক্ত মেরুদণ্ড গড়ে উঠা খুব দরকারী। শরীরভোগী ক্ষমতাবানের কুপ্রস্তাবের মুখে থুতু ছিটিয়ে দেবার মত মানসিক দৃঢ়তা কেন থাকবে না একটা মেয়ের, কেন স্রোতে গা ভাসিয়ে নিজেকে ভোগপণ্য বানানো? 

ঘুষখোর, নারীলোভী, দুর্নীতিবাজ আমলাদের সব রকম দুর্নীতির চিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হওয়াটা আসলেই দরকার। আর এ ধরনের সুবিধাভোগী নারীদের সাবিত্রী আদলে চলা মুখোশও উন্মোচিত হওয়া দরকার। এসব প্রাইভেসি, ব্যক্তিস্বাধীনতা, কেন এসব নিয়ে কথা বলতে হবে এই জাতীয় কথা বলে যারা এদের ডিফেন্ড করে তারা নিজেরাও নিশ্চিত এসব কাজের অংশীদার। 

 

Leave a Comment