শাড়ি পরি ভালোলাগা থেকে, শরীরের ভাঁজ ফুটিয়ে তুলতে নয়।

  • রোমানা আক্তার-শুদ্ধবালিকা
  • সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯

সবসময় থ্রিপিস পরে চলাফেরা করা মেয়ের জন্য শাড়িটা ওকেশনাল ড্রেস। কিন্তু আমি নির্দিষ্ট ওকেশন ছাড়াও শাড়ি পরি। ফলশ্রুতিতে আমাকে নানাবিধ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। অর্থাৎ শাড়ি পরার কারণটা জানতে চাওয়া হয়।

এখন কথা হচ্ছে, আপনি মানুষ হিসেবে সুন্দর বা অসুন্দর, সুস্থ নাকি অসুস্থ, ধনী অথবা গরীব, মোটা কিংবা চিকন যেমনই হন না কেন সকলের কষ্টের অনুভূতিটা কিন্তু এক। আপনি যতোই হাসিখুশি থাকেন এই হাসির পেছনেও একটা চাপা কষ্ট থেকে যায়, কারওটা সাময়িক, কারওটা দীর্ঘমেয়াদি। আর এই কষ্টের তীব্রতা তখন আরও বেশি হয় যখন আমি বুঝতে পারি কেন কষ্ট হচ্ছে এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তাটাও জানি কিন্তু আমি তা ফলো করতে পারছিনা। এমন অবস্থায় আমার ঘুম কমে যায়, ক্ষুধামন্দা হয়, সারাদিন শুয়ে থাকি। পছন্দের সব কাজ অপছন্দের লাগে এমনকি প্রিয় মানুষগুলোকেও ভালো লাগেনা। আসলে নিজে ভালো না থাকলে অন্যকে ভালো রাখা যায়না।

কিছুকিছু সময় থাকে এক অজানা কষ্ট অনুভব হয়। হাজারটা প্রশ্ন করেও উত্তর পাওয়া যায়না কেন আমি কষ্ট পাচ্ছি? শূন্যতাটা ঠিক কোথায়? এই রকম ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে নিজেকে রান করানো রীতিমত একটা চ্যালেঞ্জ। যারা রান করাতে পারেনা তারাই ডিপ্রেশনে বুদ হয়ে থাকে। সুইসাইড সহ নানাবিধ উদ্ভট চিন্তায় জড়িয়ে পড়ে। এসব নেগেটিভ কাজগুলো কিন্তু সমাজে একটা আত্মসমর্পণ বার্তা দেয়। আর তা হল, "আমি এই জীবনকে চালাতে পারছিনা, এখানে যা যা করণীয় তা আমি করতে পারছিনা, তাই এই জীবন থেকে আমি মুক্তি নিলাম"।

আমি আমার নিজেকে অত সিরিয়াস মুডে আত্মসমর্পণ করাতে চাইনা কখনোই। তাই শাড়ি পরে, টুকটাক সাজুগুজু করে, আবহাওয়া তোয়াক্কা না করে বেড়িয়ে পড়ি কোথাও একটা। আর আমার শাড়িপরা দেখে প্রিয় লোকেরা আনন্দভরে যখন প্রশ্ম করে, "শাড়ি কেন?" তখন ইতোপূর্বে নিজেকে যে অর্থহীন, আজাইরা, আকাইম্মা মনে হচ্ছিল সেই ভাবনাটা মাথা থেকে বের হয়ে যায়।

শুধু ডিপ্রেশন এড়াতেই যে শাড়ি পরি তা নয়, নিজের মনে অদ্ভুতরকম আনন্দটাকে সেলিব্রেট করতেও আমি হুটহাট শাড়ি পরি। বিনা কারণেই যেমন কষ্ট অনুভব হয় তেমনি বিনা কারণেও মনে আনন্দ অনুভব হয়। সেই আনন্দ আমাকে শাড়ি পরতে উস্কে দেয়। আবহাওয়াও অনেক সময় শাড়ি পরার কারণ। ঝুম বৃষ্টিতে শাড়ি পরে ভিজতে ইচ্ছে হয়, সমুদ্রের স্রোতে হাটতে ইচ্ছে হয়, কাঠ ফাটা রোদ্দুরে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখ মুখতে ইচ্ছে হয়, বরফের শুভ্রতায় শাড়ির ভাজে নিজেকে আবৃত করতে ইচ্ছে হয়। উফ! এই শাড়ির মাঝে আমার জীবনের আনন্দ যেমন লুকিয়ে তেমনি কষ্টও লুকিয়ে। আমার প্রতিটি শাড়ি আমার জীবনের প্রতিটি বিশেষ মুহূর্তের সাক্ষী। আর তাই, আমার পুরনো জামা আমি অপরকে দিয়ে দিলেও, পুরাতন অযুহাতে জামা ফেলে দিলেও শাড়ি কাউকে দেই না, ফেলে দেই না। আমি চাইনা, আমার জীবনের স্মৃতিভরা আনন্দ, কষ্ট কিংবা বেখেয়ালি মুহূর্তগুলোর সাক্ষী থাকা শাড়ি গুলো আমাকে ছেড়ে চলে যাক অন্য কারও ঘরে, অন্য কারও শরীরে। দূর ইউরোপে এসেও এক হাটু সমান বরফে বুট জুতার সাথে শাড়ি পরি শুধুমাত্র নিজের ভালো লাগা থেকে।

আমার শাড়ি পরা নিজেকে ডিপ্রেশন থেকে বের করার একটা রাস্তা, নিজের আনন্দের মাত্রা বাড়ানোর একটা উপায়, যা আমি নিজেকে ভালোবেসে করি। আমি বিশ্বাস করি, এই জীবনে বেঁচে থাকাই চরম প্রতিশোধ। মৃত্যুতো ঠেকাতে পারবো না, তাহলে মন খারাপ করে কেন বাঁচবো? এই পৃথিবীতে মন খারাপ করে থাকাটাই লস প্রজেক্ট।

Leave a Comment