আচ্ছা বলুন তো একটা সংসারে কী কী কাজ থাকে?

  • ফারজানা আক্তার 
  • সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯

আচ্ছা বলুন তো একটা সংসারে কী কী কাজ থাকে?

অনেকে এক গাল হেসে উত্তর দিবে রান্না আর খাওয়া। এবং তিতা হলেও সত্যি আমাদের সমাজের বেশিরভাগ পুরুষ বিশ্বাস করে একটা সংসারে রান্না আর খাওয়া ছাড়া কোন কাজ থাকে না। সংসার শব্দটা ছোট হলেও এর বিশালতা অনেক। শুধু রান্না আর খাওয়া দিয়ে একটা সংসার চলে না। কারো সংসার শুরু হয় ছোট্ট একটি বাসা নিয়ে, কারো বা বিশাল বাড়ি নিয়ে।

ছোট কি বড় প্রতিটা সংসারে থালাবাসন - হাঁড়িপাতিল, ঘরদোর, বারান্দা, রান্নাঘর, ওয়াশরুম, ঘরের আসবাবপত্র, বিছানার চাদর, দরজা জানালার পর্দা, ফ্রিজ, ফ্যান ইত্যাদি পরিষ্কার পরিছন্ন রাখতে হয়। বাচ্চা লালনপালন, ঘরে বৃদ্ধ গুরুজন থাকলে তাদের দেখাশোনা করতে হয়। লেখার সময় কাজের লিস্ট এক কি দেড় লাইনে হয়ে গেলো কিন্তু বাস্তবে এই কাজ এক দেড় মিনিটে হয়ে যায় না। সংসারে আপনি যদি তিন বেলাও রান্না না করেন দুইবেলা রান্না করতে হয়। রান্নার সরঞ্জাম জোগাড় করতে হয়, রান্না করতে হয়, রান্নার পর আবার একধাপ হাঁড়িপাতিল পরিষ্কার করতে হয়।

যারা মনে করেন সংসার মানে রান্না আর খাওয়া তাদের চোখে শুধু রান্না আর খাওয়াটাই পড়ে। বাকিসব হাওয়ায় আর বাতাসে হয়ে যান বলে তারা মনে করেন। যারা গৃহিনী তারাও ঘরের এতো কাজে এক সময় হাঁপিয়ে উঠেন, যারা চাকরিজীবী তাদের জন্য দুইদিকে ব্যালেন্স রাখা আরো কষ্টসাধ্য। চাকরি বা ব্যবসা করে নিজের আইডেন্টিটি তৈরী করা প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন, আর সংসার হচ্ছে সুখের ঠিকানা। সারাদিন অফিস সামলিয়ে নিজের সংসারে পা রাখার সাথে সাথে ক্লান্তির ছাপ মুছে গিয়ে প্রশান্তির ছায়া নেমে আসে।

আর, যারা গৃহিনী তারা সারাদিন ঘরের কাজ গুছিয়ে অপেক্ষা করেন সংসারের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কর্তার জন্য। সংসার নামক সুখের ঠিকানা থেকে প্রশান্তির ছায়া তখনই মুছে যায় তখন আপনার ভালোবেসে দায়িত্ব নিয়ে করা কাজকে কেউ বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বলে, 'কি এমন কাজ করো সারাদিন রান্না আর খাওয়া ছাড়া?'

সারা সপ্তাহ অফিস নামক প্যারা থেকে মুক্তি নিয়ে ছুটির দিনে বাজারের লিস্ট কর্তার হাতে দেওয়ার পর যখন শুনতে হয়, 'ছুটির দিনেও একটু শান্তি নেই। একটু রেস্টও করতে পারবো না।' কর্তা নামক মানুষটি হয়তো ভুলে গেছে আপনিও সারা সপ্তাহ অফিসে কামলা দিয়েছেন। আজকে আপনারও ছুটির দিন কিন্তু সংসার নামক সুখের ঠিকানায় আজকে কঠিন কর্মব্যস্ত দিবস।

নিজের সংসারে নিজের হাতে সব কাজ করেও শান্তি। আমার মনে হয় হাতে গোনা কয়েকজন মেয়ে আছে যাদের হয়তো রান্না করতে ভালো লাগে না।বেশিরভাগ মেয়েই নিজের হাতে রান্না করে সংসারের মানুষগুলোর পাতে তুলে দিতে চায়। কোন ক্লান্তিই আপনাকে কাবু করতে পারবে না যখন আপনার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর চেষ্টা প্রচেষ্টাকে আপনার সংসারের মানুষগুলো মূল্যায়ন করবে।

ক্লান্তি আপনাকে তখনই চেপে ধরবে যখন আপনার ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ, চেষ্টা, মেধা, পরিশ্রম গিয়ে আটকে যায়, 'সংসারে কি এমন কাজ করো রান্না আর খাওয়া ছাড়া! তোমার অফিসের কাজ আর আমার অফিসের কাজ এক নয় (এই কথাটা বলে আসলে বুঝানো হয় সে দুনিয়ার সবথেকে ব্যস্ত আর কর্মঠ অফিসে কাজ করে আর বাকিরা সবাই অফিসে গিয়ে বেতন তুলে নিয়ে আসে।), সংসারে এমন কি কাজ আছে?আমার এক তুড়িতে সব হয়ে যাবে ইত্যাদি।' এই ধরণের কথাতে।

ঘরের বাহিরের সব কাজকেই মূল্যায়ন করুন। যে ভালোবেসে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে তাকেও মূল্যায়ন করুন। মূল্যায়ন তার প্রাপ্ত, আপনার তিরস্কার নয়।

Leave a Comment