পুরুষ সমাজ, আপনারা কবে নিজেদের মানসিকতা উন্নত করবেন?

  • তামান্না ইসলাম 
  • ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯

বর্তমান সময় সারা পৃথিবীতে সর্বাধিক চর্চিত শব্দগুলোর মাঝে "Women"  ঠাঁই পাবে বলে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। এমন না যে নারী কে নিয়ে পূর্বে কথা হয়নি, কিন্তু বর্তমানে এই কথার হার অনেক বেড়েছে। নারীর জীবনধারা উন্নয়ন, নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে তার অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, তার নিরাপত্তা, তার সম্ভাবনা, আরো কতো আলোচনা সমালোচনা! আর আমাদের দেশে মানুষ মায়ের পায়ের নীচে জান্নাত মানে, আবার গালি দিতে গেলেও মাকে টানে!

আমাদের দেশে ৮০'র দশকের ইতিহাস যদি দেখি তো দেখা যায় তখন প্রায় ৮২% নারী গ্রামে বাস করতো। তাদের শিক্ষা, চিকিৎসা সুবিধা, কিংবা স্বীকৃত কর্মসংস্থান ছিলো না। কিন্তু এর মানে এই নয় যে অর্থনৈতিক বিষয়ে তাদের অবদান শূন্য। সেই সময় নারীরা ফসল নির্ভর কাজে বেশি জড়িত ছিলেন। ফসল উৎপাদন, ধান মাড়াই, শুকানো, সংরক্ষন, ইত্যাদির পাশাপাশি ঘরের পাশে সবজি উৎপাদন, হাঁস-মুরগী পালন, গরু- ছাগল দেখাশোনা ইত্যাদি কাজ নারীকেই করতে হতো। এরই মাঝে ছিলো সন্তান পালন, অধিক সন্তান গ্রহন, পরিবারের দেখাশোনা ইত্যাদি। এবং ঘরের এ সকল কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ ছিলো নাম মাত্র।

৯০দশকে এসে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য কাজ শুরু হয়। কর্ম ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু তখন পর্যন্ত এই হার অনেক কম ছিলো। বর্তমান সময় যদি আমার নারীর অগ্রগতির দিকে তাকাই তাহলে দেখা যায় যে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে।  কিন্তু এখনো গ্রাম অঞ্চলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকেই অনেক মেয়ের শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হয়।  বিবাহিত মেয়েদের প্রায় ৯০ শতাংশ বিয়ের প্রথম দুই বছরেই সন্তানের মা হন। এছাড়াও সন্তানের প্রতিপালনের জন্য বেশিভাগ নারীকে ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয়। ঘরের বেশিভাগ ক্ষেত্রেই নারী সদস্যদের মতামতের মূল্যায়ন হয় না। 

এসব বিষয় ছাড়াও নিত্যদিন নারীদের বিভিন্ন রকম হয়রানির সমুখীন হতে হয়। দেশে ধর্ষণের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বাড়ছে। নৈতিক শিক্ষার অভাব, সর্বত্র নারীর দোষ খোঁজা, আইন ব্যবস্থার সঠিক প্রয়োগ না হওয়া সহ আরো অনেক বিষয় এর জন্য দায়ী। পারিবারিক কলহ বৃদ্ধি, দাম্পত্য অশান্তি, ব্রোকেন ফ্যামিলি, ইত্যাদির সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি এখন। 

বলা হয় প্রবল ব্যক্তিত্ববান দুজন মানুষ দীর্ঘদিন পাশাপাশি থাকতে পারে না। এই কথাটার সাথে আমি কেনো যেনো কখনোই একমত হতে পারি না।একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ অপর একজন মানুষের ব্যক্তিত্বকে সম্মান করবে। আর একজন ব্যক্তিত্বহীন বা স্বল্প ব্যক্তিত্বের মানুষ চেষ্টা করবে তার বিপরীতে থাকা মানুষটার মজবুত ব্যক্তিত্বকে দমিয়ে রাখতে। আর সংঘাতটা এই দমিয়ে রাখার প্রবনতা থেকে শুরু হয়।

ইংরেজিতে একটা কথা আছে- No matter how good you are, you can always be replaced. আগেরকার দিনে নারীর শিক্ষা ছিলো না, প্রতিভার মূল্যায়ন ছিলো না, নারী স্বাবলম্বী ছিলো না, তাই সমাজের ভয়ে কোথায় যাবে ভেবে হাজার অত্যাচার সহ্য করে পরে থাকতো। এখন নারী শিক্ষিত, স্বাবলম্বী, কর্ম দক্ষতা আর যোগ্যতা প্রতিদিন বৃদ্ধি করছে। নারী তো এগিয়ে যাচ্ছে সব বাধা পেরিয়ে। পুরুষ সমাজ, আপনারা কবে নিজেদের মানসিকতা উন্নত করবেন?

 

 

Leave a Comment