প্রতিটি মেয়ের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন!

  • ফারজানা আক্তার 
  • ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি প্রতিটি মেয়ের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া এবং নিজস্ব একটি পরিচয় তৈরী করা উচিত। প্রথম লাইন পড়ে অনেকেই আমাকে এখন নারীবাদী ট্যাগ দিয়ে দিবে। আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ নারীবাদীর সংজ্ঞা জেনে তারপর নারীবাদীর ট্যাগ দিবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীবাদী শব্দটা আমার কাছে গালি মনে হয়। কেন গালি মনে হয়! কি কারণে গালি মনে হয় সেসব নিয়ে পরে লিখবো। সাথে এটাও বলে দেই আমি কোন নারীবাদী নই। আমি মানুষবাদী।

একজন মেয়ের কেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া উচিত?

সৃষ্টিতে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি অনেক আপু আছেন যাদের নিজেদের বাড়ি, গাড়ি সবই আছে তবুও নিজ যোগ্যতায় এটলিস্ট তারা তাদের হাত খরচের ইনকামের রাস্তা খুঁজছে। সবাই অশান্তিতে আছে এমনটা কিন্তু নয়, কিন্তু একটা সময় গিয়ে মনে হচ্ছে নিজের কিছু করা উচিত। নিজের মেধার সামান্য হলেও যথাযথ ব্যবহার করা উচিত।

একটু মনোযোগ দিয়ে ভাবুন! মাসের শুরুতে একজন কর্তা তার গিন্নির হাতে সংসার চালানোর টাকা দিয়ে দেয়। সেই টাকায় পুরো মাস সংসার চলবে। বাসা ভাড়া এবং সেই সাথে কারেন্ট বিল, গ্যাস বিল, বাচ্চাদের পড়াশোনার টাকা ইত্যাদি সব চলবে। টাকার এমাউন্টের চেয়ে কিন্তু খরচ বেশি। তবুও দেখবেন একজন গৃহিনী কিভাবে যেন সেখান থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়ে রাখে। পরে যখন কর্তার সমস্যা বা ছেলে মেয়ের বাড়তি কিছুর প্রয়োজন হয় তখন সে জমানো টাকা খরচ করে।

আমার মা একজন গৃহিনী। ঢাকায় আসার সময় আব্বু আমাকে হাত খরচ দিতো। আম্মা লুকিয়ে কিছু টাকা দিয়ে বলতো অচেনা শহরে কত কাজে টাকা লাগতে পারে! তখন খরচ করিস। আমি জানি আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সবার এমন অভিজ্ঞতা আছে। সবার প্রয়োজন মিটাতে গিয়ে মায়ের যখন একটা শাড়ি পছন্দ হয়, কোন গহনা পছন্দ হয় অথবা একদিন বাহিরে গিয়ে খেতে ইচ্ছে করে অথবা কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে তখন চুপ করে থাকে।

মুখ ফুটে কখনো নিজের পছন্দ, অপছন্দ, সাধ আহ্লাদের কথা বলে না। তারা ভাবে একজনের আয়ে সংসার চলে। সেখানে নিজের শখ, আহ্লাদের কথা বলার অর্থ স্বামীর কাঁধে চাপ আরো বাড়িয়ে দেওয়া। একজন স্বামী যতই ভালো হোক সে কখনো মাস শেষে নিজের বউয়ের হাতে এক্সট্রা কিছু টাকা তুলে দিয়ে বলে না তোমার যা ইচ্ছে যেমন ইচ্ছে এই টাকাটা খরচ করো।

একজন মেয়ের কিন্তু ইচ্ছে হয় নিজের মাকে, বাবাকে, ভাইকে বোনকে অকেশন ছাড়াও কিছু উপহার দিতে। মনে হয় একটা দিন, একবেলা নিজের মতো করে ঘুরে বেড়াতে। নিজের পছন্দের জিনিসপত্র কিনতে। সংসারের সবার জন্য নিজের মনের মতো কেনাকাটা করতে। কিন্তু সে যতক্ষণ পর্যন্ত মুখ ফুটে স্বামীর কাছে টাকা না চাইবে সে পাবে না। এই চাওয়াটাই তাকে লজ্জায় ফেলে দেয়। মনে হয় তার চাওয়া তার স্বামীর সংসারের কাঁধে অতিরিক্ত চাপ ফেলবে।

বিষয়গুলো আপনার কাছে ক্ষুদ্র মনে হতে পারে কিন্তু বিষয়গুলো গভীর। একবার নিজের মায়ের চেহারা মনে করে দেখুন। নিজের মায়ের দিকে তাকান। তার হাসির পিছনের দীর্ঘশ্বাসকে অনুভব করার চেষ্টা করুন।

এবার আসি নিজস্ব পরিচয়ের বিষয়ে!

আমি আমার বাবার মেয়ের। আমার স্বামীর বউ। আমার ভাইয়ের বোন। আমার ছেলের মা। তাহলে আমি কোথায় ? আমার তো একটা নাম আছে। আমি ফারজানা। এখানে ফারজানা কোথায় ? বিশ্বাস করুন আমার বাবার, স্বামীর, ভাইয়ের, ছেলের পরিচয়ে পরিচিতি পেয়ে আমি গর্বিত। কিন্তু আমি আমার নিজের যোগ্যতায়, চেষ্টায় নিজের পরিচয় তৈরী করতে চাই। আমি আমার নিজের পরিচয়েও আমার বাবা, স্বামী, ভাই, ছেলেকে পরিচিতি দিতে চাই।

জন্মের পর প্রতিটি মেয়ের একটি নাম রাখা হয়। সময়ের সাথে সাথে সেই নাম হারিয়ে গিয়ে প্রতিটি মেয়ে হয়ে যায় অমুকের মেয়ে, তমুকের বউ, রফিকের মা, শফিকের বোন। বিশাল এই দুনিয়ায় আমরা সবাই দুই দিনের অতিথি। দুইদিন আগে কিংবা পরে সবাই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবো। যাওয়ার আগে নিজের নামের একটি পরিচিতি তৈরী করে যাওয়া উচিত। আমরা হারিয়ে গেলেও দুনিয়ার বুকে নামটা যেন জ্বলজ্বল করে। অমুকের মা আর তমুকের বউকে কেউ মনে রাখবে না। সবাই নামকে মনে রাখে তাই নামের যথাযথ ব্যবহার করা উচিত।

সকল মেয়েদের বলছি! নিজের পরিচিত তৈরী করতে, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে আপনাকে ঘরের বাহিরে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। ঘরে বসেও আজকাল অনেক কিছু করা যাচ্ছে। আপনার ইচ্ছে থাকতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। আমি অনেক মেয়েকে বলতে শুনি! তারা বলে তাদের সকল খরচের দায়িত্ব তাদের স্বামীর। তারা শুধু শুধু কষ্ট করবে না! বিশ্বাস করুন আপুরা একটা সময়ের পর আপনারা নিজেদের কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর করার কিছু পাবেন না। এখন অনেক সুযোগ আছে। ঘরে বসে চাইলে অনেক কিছু করা যাবে। সামান্য কিছু হলেও কাজ করতে শুরু করুন। খুব অল্প ইনকাম হোক তবুও শুরু করুন।

অন্যের উপর হোক সে বাবা, স্বামী, ছেলে নির্ভর না করে নিজের উপর নির্ভরশীল হন। মনে রাখবেন দিনশেষে আপনি শুধু আপনার, বাকি সবাই সময়ের অতিথি। সময় কখন কোনদিকে মোড় নিবে আমরা কেউ জানি না। তাই নিজেকে সকল সময়ের জন্য প্রস্তুত রাখা উচিত।

Leave a Comment