শুধু বাহ্যিক নয়,আমাদের অভ্যন্তরীণ উন্নতিও প্রয়োজন!

  • ফাতেমা আক্তার রিপা
  • জানুয়ারি ২২, ২০২০

আমাদের নিত্যদিনের হাজারো সমস্যার অন্যতম একটি সমস্যা হলো বিভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে চিন্তাভাবনার পার্থক্য। অবশ্যই বয়স যখন এক নয় চিন্তাভাবনাও মিলবে না। প্রত্যেকে নিজের বয়স অনুযায়ী চিন্তা ভাবনা করবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। কিন্তু জীবনের কিছু পর্যায় এমন আসে যখন এক বয়সের মানুষ কে তার থেকে ছোট বা বড় বয়সের মানুষের মানসিকতা অনুসারে চিন্তা করতে হয়। তাদের চিন্তা ভাবনা,ভালো লাগা - না লাগার গুরুত্ব দিতে হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা নিজেদের মতো করেই তাদের আচরণের, চিন্তা ভাবনার গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আর তখন ই তৈরি হয় মনোমালিন্য। সম্পর্কে, পরিবারে তৈরি হয় সমস্যা, বাড়তে থাকে তিক্ততা।

কিশোরী একজন মেয়ে যখন চায় নিজের ইচ্ছেমত,পছন্দ অনুযায়ী একটা পোশাক পরতে তখন তার মধ্যবয়সী মা চায় মেয়ে তার পছন্দ করা কিছু পরুক। মেয়ে চায় বন্ধুদের সাথে একটু সময় কাটাতে, শখের কিছু করতে কিন্তু মা চায় মেয়ে বাইরে বেশি না মিশুক,পড়াশোনায় বেশি সময় দিক। অবশ্যই মা বাবা আমাদের ভালোর জন্যই সব কিছু করেন কিন্তু অই যে জেনারেশন গ্যাপ! জেনারেশন ভিত্তিক চিন্তায় মেয়ে যখন স্বাধীনতা চায়, মা তখন মেয়েকে বাস্তবতার কঠিন শিকলে আবদ্ধ থাকতে শিখাতে চায়।

নতুন সংসার করতে আসা বউ যখন চায় সংসারের কাজ নিজে একটু করবে,নিজে রান্না করবে, সবাইকে পরিবেশন করে খাওয়াবে,শাশুড়ি তখন নিজের গুছানো সংসার বউমার হাতে তুলে দিতে চেয়েও যেন দিতে পারে না! যেই ছেলেকে এতদিন নিজে রান্না করে খাইয়েছেন সেই ছেলে আজ যখন বউ এর রান্নার প্রশংসা করে তখন যেন কেমন অভিমান হয়! ছেলের সামনে বউ এর ভুল ধরিয়ে দিতে পারলে আবার অদ্ভুত শান্তি লাগে। কি বিচিত্র না!

শাশুড়ি বা মা বৃদ্ধ হয়েছে। ছেলে মেয়ে,নাতি নাতনি যখন বেঁচে থাকার সম্বল তখন সবাই নিজেদের মত ব্যস্ত। এই বয়সে একাকিত্ব অনুভব হওয়ায় বৃদ্ধ মানুষগুলো চায় সবার সাথে মিশে থাকতে, প্রাণ খোলে হাসতে। কখনো হয়তো সংসারের কোন বিষয়ে মতামত ও দিতে চায়। কিন্তু অই জেনারেশন গ্যাপ এর ফলে কেউ  উনাদের নিয়ে চিন্তা করার কথা ভাবেও না। অনেকের মতে এই বয়সের একমাত্র কাজ হলো খাওয়া-দাওয়া,ঘুমানো আর ধর্ম কর্ম করা। তাদের অনুভূতি অনুভব করার কথা মাথাতেই আসে না আমাদের।

উন্নতি হচ্ছে আমাদের, হচ্ছি আমরা আধুনিকও। কিন্তু এই আধুনিকতা আর উন্নতি হচ্ছে শুধুমাত্র বাহ্যিক। এই আধুনিকতা আর উন্নতি পরিমাপ করা হলে ফলাফল শূন্য ছাড়া আর কিছুই আসবে না।

পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে আবার এমন হাজারো নতুন মুখ পৃথিবীতে আসছে। পুরাতন সব কিছুকে,সকলকে নতুনদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হয়। এটাই বাস্তবতা। সেই বাস্তবতা মেনে আমরা যখন নিজেদের বয়সের থেকে ছোট বা বড় কারোর বয়স অনুযায়ী, চিন্তাভাবনা অনুযায়ী কাজ করবো,তাদের অনুভূতির সম্মান দিবো তখন সত্যি সত্যি আমাদের উন্নতি হবে। শুধু বাহ্যিক নয়,অভ্যন্তরীণ উন্নতিও।

জটিল এই পৃথিবী হয়তো তখনই অনেক বেশি সহজ হবে।

Leave a Comment