আপনি রাগ কন্ট্রোল করতে পারছেন না? এই গল্পটি পড়ুন 

  • ফারজানা আক্তার 
  • মার্চ ১৬, ২০২০

ছোট্ট একটি ছেলে যার নাম রবিন। রবিন খুব ভালো ছেলে কিন্তু প্রচন্ড রাগী। বয়স ৭ বছর। খুব অল্পতে রবিনের রাগ উঠে যায় এবং রাগ উঠে গেলে সামনে যা পায় সব ভাঙ্গচুর করে। নিজের মাথার চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলে। চিৎকার চেচাঁমেচি করে সবাইকে গালাগাল দেয়। রবিনের বাবা ছেলের এমন আচরণে কিছুটা চিন্তিত। 

একদিন রবিনের বাবা বেশ কিছু পেরেক আর একটি হাতুড়ি এনে রবিনকে দিলো। রবিনকে দিয়ে বললো তোমার যখন রাগ উঠবে তখন তুমি এই হাতুড়ি দিয়ে আমাদের বাগানের দেয়ালে পেরেক গাঁথবে। ততক্ষন পর্যন্ত পেরেক গাঁথবে যতক্ষন পর্যন্ত তোমার রাগ না কমবে। 

রবিন খুশি মনে পেরেক আর হাতুড়ি নিয়ে চলে গেলো। রবিনের যখন রাগ উঠে রবিন বাগানে গিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক গাঁথে। রবিন দেখলো হাতুড়ি দিয়ে দেয়ালে পেরেক গাঁথা অনেক কষ্টের। তার থেকে রাগ নিয়ন্ত্রন করা সহজ। ধীরে ধীরে রবিন রাগ নিয়ন্ত্রণ করা শিখে গেছে এবং পেরেক গাঁথা কমে এসেছে। একদিন দেখা গেলো রবিনের আর পেরেক গাঁথতে হচ্ছে না। সে পুরো রাগ কন্ট্রোল করতে শিখে গেছে। 

সে হাসতে হাসতে গিয়ে তার বাবার কাছে তার সফলতার কথা জানালো। বাবা খুব খুশি হলেন। তারপর রবিনকে বললেন তুমি যদি তোমার রাগ আরো অনেক বেশি কন্ট্রোল করতে চাও তাহলে আবার গিয়ে গেঁথে রাখা পেরেক সব তুলে ফেলো। 

রবিন হাসতে হাসতে চলে গেলো। তারপর বাগানে গিয়ে দেয়াল থেকে পেরেক তোলা শুরু করলো। প্রথম পেরেক তোলার পর রবিন দেখলো পেরেক গাঁথার থেকে পেরেক তোলা অনেক বেশি কঠিন কাজ।  বেশ কয়েকদিন রবিনের লেগে গেলো দেয়াল থেকে পেরেক তুলতে। পেরেক তোলা শেষ করে রবিন বাবার কাছে গেলো। 

বাবা খুব খুশী হলেন। তারপর রবিনকে নিয়ে বাগানের সেই অংশে গেলেন যে অংশে রবিন পেরেক গেঁথে আবার তুলে এসেছে। দেয়াল থেকে পেরেক তোলার পর দেয়াল পুরো ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে। রবিনের বাবা রবিনকে সেই দেয়ালের ক্ষত বিক্ষত জায়গা দেখিয়ে বললো, 'কিছু বুঝতে পারলে ?'

রবিন মাথা দুইপাশে নেড়ে না বললো। 

রবিনের বাবা বলবেন, 'তুমি রাগ করে যখন এটা সেটা ভাঙ্গচুর করো আর চিৎকার চেঁচামেচি করে গালাগাল দাও এখন আমাদের অনেক কষ্ট হয়। রাগী মানুষেরা তাদের হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অনেক অবান্তর কথা বলে ফেলে। এই অবান্তর কথা বলার কারণে অপরপাশে থাকা মানুষটির খুব কষ্ট হয়। 

রাগ উঠার পর তুমি এখন দেয়ালে পেরেক গাঁথো আর আগে রাগ উঠলে তুমি আমাদের কটু কথা বলতে। আগে মাথা ঠান্ডা হলে তুমি আমাদের সরি বলতে আর এখন পেরেক তুলো। ভালো করে দেয়ালে তাকাও! পেরেক তোলার পরেও দেয়ালে চিহ্ন রয়ে গেছে। রাগের মাথায় কাউকে কটু কথা বলার পরে তুমি যতই সরি বলো তার মনে কিন্তু এমন ক্ষত দাগ থেকে যায়। তাই আমাদের সবার নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রন করা উচিত। রাগের মাথায় কখনোই কারো সাথে খারাপ ব্যবহার বা কটু কথা বলা উচিত নয়। কারণ রাগের মাথায় মানুষ কথার লিমিট ধরে রাখতে পারে না।'

রবিন তার বাবার কথা বুঝতে পেরে মাথা নিচের দিকে দিয়ে রাখলো। রবিনের বাবা রবিনের কাঁধে হাত দিয়ে রবিনকে ভরসা দিলো। 

আমাদের রাগ বেশি এই কথা আমরা সবাই গর্বের সহিত বলে থাকি। রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না সেই কথা আরো গর্বের সহিত বলে থাকি। কিন্তু আমার বা আমাদের রাগ কন্ট্রোল করা উচিত বা এখন আমি বা আমরা রাগ কন্ট্রোল করা শিখে গেছি এই কথা কেউ বলি না। চেষ্টাও করি না। 

মাত্রাতিরিক্ত রাগ আমাদের মানুষ থেকে অমানুষে পরিণত করে দেয়। মাত্রাতিরিক্ত রাগ আমাদের জ্ঞান শূন্য করে দেয়। মাত্রাতিরিক্ত রাগ আমাদের হিংস্র বানিয়ে দেয়। যারা ভাবেন মাথা গরম হলে যা ইচ্ছে বলে দিয়ে মাথা ঠান্ডা হলে শুধু সরি বলে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়! তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। আমরা সবাই রাগ নিয়ন্ত্রন করে শিখি। নিজেও ভালো থাকি, সবাইকে ভালো রাখি। 

Leave a Comment