ইগো নামক ব্যাধির জন্যই কি সম্পর্কগুলোতে এত দুরত্ব তৈরি হচ্ছে?

  • ফাতেমা আক্তার রিপা 
  • মে ১৯, ২০২০

ভালোবাসা, ছোট ছোট খুনসুটি, ঝগড়া, মান -অভিমান, রাগ প্রতিটি সম্পর্কের অলংকার। সম্পর্ক গুলোকে সাজিয়ে তুলতে, আরো অনেক বেশি মধুর করে তুলতে এই অলংকারগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্ক দুইজনের হোক বা চারজনের সব ক্ষেত্রেই এই অনুভুতিগুলো প্রকাশিত হয়ে থাকে। একসাথে পথ চলতে গিয়ে আমরা মায়ায় আটকা পড়ি , ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হই, ছোট ছোট বিষয় নিয়ে মান -অভিমানের পালা চলতে থাকে আমাদের মধ্যে। এভাবেই সম্পর্কগুলো পূর্ণতা পায়, মানুষগুলো আপন থেকে আরো আপন হয়ে যায় আমাদের। অভ্যস্ত হয়ে যাই একে অন্যের সাথে।

কিন্তু অনেক সময় আমরা ভুলে যাই প্রতিটি বিষয়ের একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে। যা পার না করাই ভালো। বেশি খেলে যেমন উগরে দেওয়াটাই স্বাভাবিক তেমনি ভালোবাসার নামে অন্ধ বিশ্বাস করার কারণে সম্পর্কে বিস্বাদ চলে আসে। বিস্বাদ আসে ছোট খাট মান-অভিমান, ভুল বুঝা-বুঝিকে সীমার বাইরে টেনে নিয়ে যাওয়ার ফলে।

কাছের মানুষ আপন মানুষ বলা হয় কেন? আমার মন খারাপ হলে তাকে বলতে পারবো, তার মন খারাপ হলে আমি তাকে সামলাবো, তার কোন কাজ ভালো না লাগলে নিঃসংকোচে জানাবো, আবার আমার কোন কাজ ভালো না লাগলে সে আমায় বলবে। ভালো সময়ে , খারাপ সময়ে একে অপরের পাশে থাকবো এজন্যই তো নাকি। এই কথাগুলো তো প্রতিটি সম্পর্কের জন্যই আবশ্যক।

আপন মানুষ সেই তো হয় যে ভুল করলেও আমার আর আমি ভুল করলেও তার ই। আপন হিসেবে সে ভুল ধরিয়ে দেয়ার অধিকার রাখে, ভুল শুধরে দেয়ার অধিকার রাখে। ভুলটাকে ভুলে নতুন আরেকটা সুযোগ যে দেয় তাকে আপন বলে মেনে নিতে কেন এত দ্বিধা কাজ করে আমাদের মধ্যে! নাকি এটা দ্বিধা নয় একেবারেই? এটা শুধুমাত্র ইগো নামক ব্যাধির আক্রমণ।

ইগো নামক এই ব্যাধির জন্যই কি তবে সম্পর্কগুলোতে এত দুরত্ব তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন? সে কথা বলেনি আমি কেন বলবো, সে আমায় চায় না তাহলে আমি কেন চাইবো,সে আমার কাছে আসে নি আমি কেন আসবো, সে ভুল করেছে আমি কেন আগে কথা বলবো,আমি ভুল করেছি তাই লজ্জায় তার সামনে দাড়াতে পারছি না এই কথাগুলো কি আপনজনদের মধ্যে মানায়?এসব চিন্তা ভাবনা কে ইগো ছাড়া তো আর কোনো ভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় কি?

আর লজ্জা?কেন ভাই আমার ঘরের মানুষের কাছে আমার আবার কিসের লজ্জা! ভুল যদি হয়েও থাকে আর তার জন্য যদি আমি অনুতপ্ত হই সেটাই যথেষ্ট। আমার হাজারো ভুল কে ভুলে তারা যদি আমায় কাছে ডাকে আমি কেন দশ পা এগিয়ে যাবো না তাদের কাছে।তারাই তো আপন যারা ভালো খারাপ সব সময় পাশে থাকে আমাদের সামলে নেবার জন্য,প্রতিটি আঘাত থেকে বাঁচানোর জন্য যারা ঢাল হয়ে দাড়ায় তাদের কেন পারবো না আমি বিশ্বাস করতে, ভরসা করতে।

ছোটখাট সংকোচ,ইগোর পাল্লায় পরে কত কত সুন্দর সম্পর্ক যে তার পরিচয় হারাচ্ছে তা হয়তো সংখ্যায় বিবেচ্য সম্ভব নয়। অথচ নিজের দিক হতে একবার হাত বাড়িয়ে কিন্তু আমরা দেখতেই পারি তারা আমাদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতে হাত রাখে কিনা। একবার দু'বার তিনবার। তারপর ও যদি বিপরীত পাশ থেকে কোন সদুত্তর না মিলে সেটা অই বিপরীত পাশের সমস্যা আপনার আমার নয়। আমরা আমাদের জায়গা থেকে চেষ্টাটুকুন নিশ্চয়ই করতে পারি। অবলীলায় করতে পারি কারণ সে যে আমার ই আপনজন।

ভালোবাসা, মান-অভিমানকে তাদের নিজের জায়গায় রেখে নিজেরা ভালো থাকার চেষ্টা করি। কোন সুন্দর সম্পর্ক যেন ইগো আর সংকোচের কবলে না পরে সে দিকে লক্ষ রাখি। দিনশেষে আপন মানুষগুলোকে নিয়ে শান্তিতে থাকাই যখন কাম্য তখন এত রেষারেষি না করাই বোধহয় শ্রেয়।।

Leave a Comment