মেয়েটি বললো সে সংসার থেকে মুক্তি চায়!
- ফারজানা আক্তার
- মে ৩০, ২০২০
মেয়েটি আমাকে বললো, ' আপু, আমার সংসার করতে ভালো লাগে না। আমি সংসার থেকে মুক্তি চাই। কি করবো?'
আমি জিজ্ঞেস করলাম, 'সংসার করতে ভালো লাগছে না কেন? কোন সমস্যা?'
মেয়েটি বললো, ' বিবাহিত জীবনে শুধু দায়িত্ব আর দায়িত্ব। দায়িত্ব পালন করতে করতে আমি ক্লান্ত। এখন আমি মুক্তি চাই।'
জিজ্ঞেস করলাম, 'বিয়ের বয়স কত ? বাচ্চা আছে?'
মেয়েটি বললো, 'বিয়ের বয়স ৬ মাস। বাবু নেই। '
আমি জিজ্ঞেস করলাম, '৬ মাসে হাঁপিয়ে গেছেন ? কি এমন হয়েছে ? বিস্তারিত বলুন তো!'
এরপর মেয়েটি যা বললো তা বিস্তারিত লিখছি।
মনে করি মেয়েটির নাম রিশা। রিশা অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করে নেয়। পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করলেও রিশার একটি দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক ছিলো।
রিশা কিছুটা বাবা মায়ের অবাধ্য মেয়ে ছিলো। বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা, পার্টি, ঘুরাঘুরি আর ফোনে সারাক্ষন ব্যস্ত থাকতো। মেয়ের অবাধ্যতা দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছিলো। বাবা মা তাই তাড়াহুড়া করে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয়। ভেবেছে মেয়ে সংসারী হয়ে উঠবে।
রিশার প্রেমিকের সাথে মান অভিমান চলছিলো। প্রেমিক অভিমান ভাঙ্গাতে আসে নি। তাই রিশাও অভিমান করে বাবা মায়ের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে নেয়। বিয়ে করার পর তার প্রেমিকের জন্য মন কেমন কেমন শুরু করে।
প্রেমিকের সাথে কথা বলতে গিয়ে কয়েকবার শাশুড়ি আর বরের হাতে ধরা খায়। বর দুইবার থাপ্পড় দিয়েছে। রিশার বাবা মাকে ডেকে পারিবারিক বৈঠক হয়। বাবা মা'ও রিশাকে শাসন করে।
এখন রিশাকে সবাই চোখে চোখে রাখে। এইরকম বন্ধী জীবন রিশার ভালো লাগে না। রিশা জানে ও অন্যায় করছে কিন্তু এইরকম জীবন রিশা চায় না। রিশা প্রয়োজনে এক বেলা ভাত খেয়ে, ছেড়া কাপড় পরে থাকতে রাজি কিন্তু বন্ধী জীবন সে চায় না। সে এই জীবন থেকে মুক্তি চায়।
এই মেয়েকে কিভাবে বুঝাবো জীবন বাংলা সিনেমা না! এই মেয়েকে কিভাবে বুঝাবো এতো আবেগ দিয়ে জীবন চলে না! এই মেয়েকে কিভাবে বুঝাবো বিয়ে পুতুল খেলা নয়! তার প্রেমিক অভিমান ভাঙ্গায় নি তাই তিনি বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করেন, এখন আবার প্রেমিকের জন্য তার কেমন কেমন করে! ( এদের কাছে সম্পর্ক কতটা ঠুনকো! )
এটা ১০০% গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় আজকে সে স্বামীর ঘর থেকে বের হয়ে প্রেমিকের কাছে গেলে প্রেমিক তাকে রাখবে না, অথবা কয়েকদিন রেখে তারপর ছেড়ে দিবে। এরা এতো অন্ধ হয় কিভাবে ?
এতকিছুর মাঝে আমি ভাবছি রিশার বরের কথা। এখানে ছেলেটির কোন দোষ নেই কিন্তু ছেলেটি বিনা দোষে শাস্তি পাচ্ছে। একজনের অন্ধ আবেগ দুই পরিবারের মানুষদের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।