জীবনে কি কোন দুর্জন ব্যক্তির সাথে দেখা হয়েছে?

  • ফাতেমা আক্তার রিপা 
  • মে ৩০, ২০২০

উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন বাংলা দ্বিতীয় পত্রে " দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য" এই ভাবসম্প্রসারণ টি পড়ে নি এমন মানুষ বোধকরি একজনও পাওয়া যাবে না। গুরুত্ব দিয়ে হোক বা না দিয়ে সবাই ই একটু আধটু পড়েছি কারণ সম্মানীয় স্যারদের মতে এটি ভালো গুরুত্বপূর্ণ ছিল পরীক্ষার জন্য। তাই ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে টানা ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত এটি সিলেবাসের অংশ হিসেবে থাকতো। হয়তো এখনও থাকে।

এই ভাবসম্প্রসারণটির মর্মকথা ছিল অনেকটা এমন যে,শিক্ষিত হোক বা ধনী সেই ব্যক্তি যদি চরিত্রহীন হয় তাহলে তার সান্নিধ্যে না যাওয়াই উত্তম। বরং তাকে এড়িয়ে চলা উচিত। শুধু শিক্ষিত বা ধনী ই নয় যে কোন খারাপ মানসিকতার অধিকারী মানুষের জন্যই এই কথাটি প্রযোজ্য। আর এই কথা যে শুধু পরীক্ষা পাশের জন্য জানতে হবে তা নয় বাস্তব জীবনেও এর প্রয়োগ জরুরী। তাই লেখকগণ তাদের এই সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের এটা বুঝাতে চেয়েছেন বারবার।

এখন আসি সম্পূর্ণ বাস্তব চিত্রে। আচ্ছা যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার জীবনে কি কোন দুর্জন ব্যক্তির সাথে দেখা হয়েছে?যদি দেখা হয়ে থাকে তাহলে আপনি কি তাকে পরিত্যাগ করতে পেরেছেন? পেরেছেন তার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে আলাদা হয়ে যেতে?

কোন দুর্জনের সাথে দেখা হয়েছে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর বেশিরভাগ ই হ্যা হবে কারণ আমাদের ঘরে বাইরে,পরিবেশে, সমাজে দুর্জনদের অভাব নেই। হাটতে, ফিরতে, চলতে তাদের সাথে আমাদের দেখা হয়েই যায়। কিন্তু পরিত্যাগের ব্যাপারটাতে এই উত্তর ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।কারণ সব দুর্জনদের এক নিমিষেই পরিত্যাগ করা যায় না।

রাস্তায় হেঁটে যাবার সময় আপনার সাথে কেউ অপ্রত্যাশিত আচরণ করলে আপনি তাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন,কোন শিক্ষক আপনার সাথে খারাপ আচরণ করলে আপনি তাকে পরিত্যাগ করে অন্য শিক্ষকের কাছে যেতে পারবেন,এক ডাক্তার খারাপ মানুষ হলে অন্য ডাক্তারের কাছে যেতে পারবেন। মোটকথা আপনি দুর্জনদের পরিত্যাগ করতে পারবেন।

কিন্তু কিছু দুর্জন এমন ও হয় যারা আমাদের খুব কাছের আর একান্ত আপন হয়।তাদের চাইলেও আর একেবারে পরিত্যাগ করা হয়ে উঠে না।সম্পর্কের টানে,মায়ায় পরে, সমাজের নিয়মে কিছু দুর্জনদের সাথে নিয়েই আমাদের পথ চলতে হয়। কিন্তু হ্যা সেক্ষেত্রে ভালোবাসাটা পরিণত হয়ে যায় সমঝোতায়,কিংবা ঘৃণায়। আর তখন ই আমাদের জীবন হয়ে উঠে ভীষণ রকম বিষাদময়।

বাস্তবতার কাছে আমাদের আবেগ বারবার ই হেরে যায়,হেরে যাবে।এটাই সত্যি।তাই আমাদের এই কঠিন সত্যিটুকু মেনে নিয়েই জীবনধারণ করতে হয়। তবে কোন দুর্জন যাতে আমাদের বিশ্বাসের অপব্যবহার না করতে পারে, আমাদের চুপ করে থাকাকে দুর্বলতা না ভাবে সেজন্য নিজেকে প্রস্তুত ও রাখতে হবে আমাদেরই।

নিজেকে নিরাপদ রেখে আমরা সর্বোচ্চ এতটুকু চেষ্টা করে যেতে পারি যেন তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে। আর হ্যা নিজেদেরকেও এমন ভাবে গড়ে নেওয়া আবশ্যক যেন আমরা আবার কারো কাছে দুর্জন হিসেবে চিহ্নিত না হই।

সকল দুর্জনদের পেছনে ফেলে একটা সুন্দর সমাজ গড়ে উঠুক। উন্নত হোক আমাদের মানবিকতা। প্রসারিত হোক আমাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো। সবাই মিলে বাঁচি একটা সুন্দর আগামীর অপেক্ষায়।।

Leave a Comment