এই দেশে মেয়ে হয়ে জন্মানোটা আজন্ম পাপ!

  • ফারজানা আক্তার 
  • মে ৩, ২০২১

যাদের গ্রামে জন্ম অথবা যাদের বাড়িতে আমগাছ আছে তাদের সবারই কমবেশি এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে; আমের সিজনে য্খনই গাছ থেকে আম পড়ার শব্দ পাওয়া যায় সবাই সেদিকে আম কুঁড়াতে ছুটে যায়। 

বর্তমানে ফেসবুক আর ইউটিউবের কল্যাণে একদল ইস্যু কুড়ানো জাতির দেখা মিলেছে। যেই একটা ইস্যু সামনে আসে ওমনি কার আগে কে কতটা আবেগ আর মিথ্যা রং ঢং মিশিয়ে গালগল্প দিয়ে কন্টেন্ট বানাবে সেই প্রতিযোগিতা লেগে যায়। তাদের মেইন টার্গেট ভিউ বাড়ানো। তাদের বানানো ভিডিওতে কতটা সত্যি থাকলো, কতটা মিথ্যা থাকলো, তাদের বানানো কন্টেন্ট সমাজের কোন কাজে আসলো, নাকি ক্ষতি করলো এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই। মাথায় আছে ভিউ বাড়বে, টাকা আসবে। 

আরো পড়ুন : আপনার সন্তানকে ধনী নয়; মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিন। 

বর্তমানে টক অফ দা কান্ট্রিতে আছেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর এবং মুনিয়া। আপনাদের অনেকের চোখে মুনিয়া রক্ষিতা, লোভী এবং ওর সাথে যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। মনে করুন আপনাদের সাথে সহমত প্রকাশ করলাম! এখন প্রশ্ন হলো একজন রক্ষিতা মরে যাওয়ার পর তার ছবি, নাচের ভিডিও আর টিকটকের ভিডিও ব্যবহার করে টাকা ইনকাম করতে লজ্জা লাগছে না ? 

মুনিয়ার বয়স কম ছিল তাই বলে ওর অন্যায়কে ন্যায় বলবো না। ও বেঁচে থাকলে বলতাম ওকেও শাস্তির আওতায় আনা হোক। কিন্তু ও বেঁচে নেই। দ্বিতীয় কোন মুনিয়ার জীবনে আবার কোন আনভীরের আগমনের আগে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। অন্যায় নিয়ে আলোচনাকরতে হবে , এই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে, দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। 

মুনিয়ার চরিত্র নিয়ে সবাই চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে, কিন্তু মুনিয়ার এই পরিণতির জন্য ওর বড় বোনও যে দ্বায়ী সেটা এড়িয়ে যাচ্ছে। মুনিয়ার একমাত্র গার্ডিয়ান ওর বড় বোন ছিল। ওর বোন সব জানার পরেও ওকে এই জীবন থেকে সরিয়ে নেয়নি। আজকে এই ঘটনার দ্বায়ভার উনি কিভাবে এড়িয়ে যান ?

আরো পড়ুন : মেয়েরা কেন নিজের একটি বাড়ি করতে পারে না?

মুনিয়াকে রক্ষিতা বলুন আর লোভী বলুন তাতে কী যাবে আসবে ? মুনিয়া তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুক বা রাতের অন্ধকারে নাচুক তাতে কী যাবে আসবে ? ও তো আর বেঁচে নেই। 

মুনিয়াকে নিয়ে অনেক ভিডিও বানালেন, এখন আনভীরকে নিয়ে একটা ভিডিও বানান। এই লোকের জীবনে কতশত নারী এসেছে। কত নারীর জীবন ইনি নষ্ট করেছেন। টাকা দিয়ে কতশত অন্যায়কে ন্যায় বানিয়ে নিচ্ছেন। আনভীরের উচিত শাস্তির বিষয়ে সোচ্চার হয়ে কিছু ভিডিও বানান। 

ঘটনা দুইজনকে নিয়ে ঘটছে। একজনকে নিয়ে পড়ে থাকলে হবে ? পুরুষশাসিত সমাজের এই এক সমস্যা। সকল বিষয়ে নারীকেই পণ্য বানানো হয়। নারীই হয়ে উঠে প্রধান কন্টেন্ট। 

আরো পড়ুন : ‍‍`পড়াশোনার পেছনে এতো খরচ করে কি লাভ? সেই তো পরের ঘরেই যাবে!‍‍`

এই দেশে মেয়ে হয়ে জন্মানোটা আজন্ম পাপ। বেঁচে থাকলেও শান্তি নেই, মরে গিয়েও শান্তি নেই। মুনিয়া মেয়েটা বোকা ছিল। ওর বড় বোন এবং কথিত প্রেমিক আনভীর দুইজনই ওকে ব্যবহার করেছে কিন্তু ও বুঝতে পারেনি। যতক্ষণে বুঝতে পেরেছে ততক্ষণে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে অথবা তার সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে বলে সোচ্চার হওয়ার সাথে সাথে তাকে খুন করা হয়েছে। 

আত্মহত্যা কিংবা খুন যা কিছু ঘটছে মুনিয়ার সাথে ঘটেছে। খুব অল্প সময়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। যে মেয়েটা আপনাদের চোখে অপরাধী, যে মেয়েটার সাথে ভালো কিছু ঘটেনি, যে মেয়েটা বেঁচে নেই তাকে পণ্য বানিয়ে টাকা ইনকাম করতে লজ্জা লাগছে না ? 

পাড়ার কোন দালালের থেকে আপনারা কম নন। দালালরা যেমন পতিতাদের পয়সায় বেঁচে থাকে; আপনারাও আপনাদের ভাষায় মুনিয়াদের মতো রক্ষিতাদের কন্টেন্ট বানিয়ে পয়সা ইনকাম করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

আরো পড়ুন : জানুন সন্তানকে যে শিক্ষাগুলো অবশ্যই দিতে হবে! 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment