অন্যরকম স্বপ্নপূরণ

  • নিশীতা মিতু 
  • ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮

পুরো হোমপেজ ভরে আছে ভালবাসায়। ভালবাসার মানুষের যুগল ছবি, ভালবাসার মানুষের দেয়া উপহার কিংবা ভালবাসার মানুষকে নিয়ে লেখা দখল করে আছে পুরো নিউজফিড।  জ্বর শরীরে ফেসবুকের পাতায় চোখ বুলাচ্ছে মুন। বছরের এই দিনটাতে কেমন জানি একটা অস্বস্তি হয় ওর। জীবনটা যদিও ভালবাসায় ভরপুর তারপরও এই দিনটাতে বিশেষ কারোর প্রয়োজনীয়তা খুব বেশী বোধ করে। ঠিক যেমন ঘূর্ণিঝড়ে ঘরটা হারানোর পর দরিদ্র মানুষটা একটা পাকা বাড়ির তৈরির অভাব বোধ করে।  এসব নিয়ে মন খারাপ করলেই মুনের কাছের বান্ধবীগুলো ওকে বকাঝকা করে। বিশেষ করে মেঘলা প্রায়ই বলে, 'তোর পরিবারের মানুষগুলো তোকে কত ভালবাসে। আমরা তোকে কত ভালবাসি। তাও কেন তোর এত মন খারাপ থাকে?' 

মুন চুপ হয়ে থাকে। কিছু বলারও নেই ওর। নিজের অব্যক্ত অনুভূতিগুলো কাউকে বুঝানোও সম্ভব নয়। কাউকে এটা বুঝানো যাবেনা যে সব ভালবাসার আলাদা ব্যাখ্যা আছে, আলাদা প্রয়োজনীয়তা আছে। কাউকে বুঝাতে পারবেনা ওরও ইচ্ছা করে কেউ একজন হুট করে কল করে বলুক, ভালবাসি মুন। খুব ভালবাসি। খুব ইচ্ছা ছিলো কেউ একজন হাত ধরে চুমু খেয়ে বলুক, ভালবাসি। কেউ ছোট্ট কোন উপহার দিয়ে বলুক, এই উপহার কেবল তোমার জন্য। কেউ বলুক, এই মেয়ে! কাঁদো কেন? মেরে হান্ডি ভেঙ্গে দিবো একদম। 

বন্ধু জাহিদের কল আসলো সন্ধ্যায়। 
‘হ্যা জাহিদ, বল’- বলল মুন।
‘হ্যা কি! কই তুমি?’- ঝটপট জিজ্ঞেস করলো জাহিদ। 
মুন হালকা হেসে বলল, ‘কোথায় আবার। বাসাতেই। আজকের দিনে তো বাইরে বের হবার কোন কারন নেই’। 
জাহিদ বলল, ‘হইসে হইসে ঢং রাখো। নীচে নামো’।
মুন অবাক হয়ে গেলো। অবাক হয়ে বলল, ‘মানে কি! তুমি বাসার নীচে?’
হ্যা জবাব দিয়ে জাহিদ তাড়াতাড়ি মুনকে নীচে নামতে বলল। 

জাহিদ ছোট্ট একটা বক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছে। মুনকে বলল, ‘মুন, তোমাদের সিঁড়ির কাছে চল তো একটু’। কারন জানতে চাইলো মুন। জাহিদ বাঁকা হাসি দিয়ে বলল, ‘একটু রিহার্সেল করতে হবে’। মুন আবারও অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কিসের রিহার্সেল?’ জাহিদ কিছুটা লজ্জামাখা মুখে বলল, ‘আমার প্রেমিকার সাথে আজকে দেখা করবো। ওকে এই রিংটা পরিয়ে দিয়ে ভালবাসার কথা বলবো। কিন্তু আমার খুব টেনশন হচ্ছে বুঝলা। তাই তোমার সাথে একটু রিহার্সেল করবো আরকি’।

সিঁড়ির নীচে দাঁড়িয়ে আছে মুন। জাহিদ বক্স থেকে রিং বের করে মুনকে পরিয়ে দিলো। পরিয়ে বলল, ‘প্রিয়তমা, আজ যেই রিং তোমাকে পরিয়ে দিলাম তা আমার ভালবাসার স্মৃতিচিহ্ন। এই রিং যেন হাত থেকে কখনো না খুলে। এই রিং হাত থেকে সেদিনই খুলবে যেদিন আমাদের বিয়ের রিং তোমার হাতে পরানো হবে। ভালবাসি। অনেক বেশী ভালবাসি’ মুনের ভীষন কান্না পাচ্ছে। ঠিক যেন ওর স্বপ্নটাই পূরণ হচ্ছে। অথচ নিজের জীবনে নয়, অন্য কারোর জীবনে। এমন একটা সন্ধ্যার অপেক্ষাতে কত বছর ছিলো ও। সেই সন্ধ্যাটা জীবনে আসলো ঠিকই কিন্তু নিজের জন্য নয়। কি অদ্ভুত জীবন। ভাবতে ভাবতে কেঁদেই ফেললো মুন। জাহিদ মাথায় হাত দিয়ে চোখ মুছে বলল, এই মেয়ে! কাঁদো কেন? মেরে হান্ডি ভেঙ্গে দিবো একদম।

আবারও অবাক হয়ে গেলো মুন। কান্না থামিয়ে বলল, ‘না এমনি, জ্বর গায়ে তো তাই চোখ জ্বলছে। তোমার প্রেমিকা খুব খুশী হবে’। জাহিদ হেসে বলল, ‘হতেই হবে। খুশী না হয়ে যাবে কই? আমার মত ভালো প্রেমিক কটা আছে, হাহা’। মুনও এবার হালকা হেসে বলল, ‘সেটাই, ঠিক আছে এখন জলদি যাও। রিং পরিয়ে প্রেমিকাকে ভালবাসার কথা বল’।জাহিদ বলল, ‘কই যাবো? রিং তো পরিয়েছি। ভালবাসার কথাও বলেছি’
মুন চোখ বড় করে বলল, ‘মানে! কি বলছো?’ জাহিদ চোখে চোখ রেখে বলল, ‘ভালবাসি মুন, খুব ভালবাসি’। মুন স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে জাহিদের দিকে। মুখের ভাষা সব হারিয়ে গেছে চোখের ভাষায়। এই চোখ জোড়ায় লুকিয়ে আছে অনেকখানি ভালবাসা। 

Leave a Comment