মধ্যবিত্ত জীবনের গল্প

  • ইউসূফ আহমেদ শুভ্র
  • মার্চ ৭, ২০১৮

সারা দিনের কর্ম ব্যস্ততা শেষে টিন শেডের একরুমের ঘরে ফিরে হুটহাট   আমি আমার শৈশবকে অসম্ভব রকমের মিস করি।ইচ্ছে হলেই নদীতে ঝাপ দেওয়া, মধ্যদুপুরে দাড়িয়াবান্ধা খেলা, ফজলু চাচার আচারের লোভে স্কুলে যাওয়া।দুরন্ত সেই শৈশবে একদিন বড় রাস্তার পাশে বসে বন্ধুরা মিলে তুমুল আড্ডার ফাকে একটা বেজি কে দেখি গর্তে লুকাচ্ছে।সবাই মিলে সেই গর্ত থেকে তাকে বের করি।বেজিটাকে বাসায় এনে ছোট্ট একটা খাঁচায়য় ভরে পালতাম তাঁকে।ছোট আমি কতো যে কথা বলতাম তখন বেজিটার সাথে।এক সময় মনে হলো সে আমার কথা বুঝতে পারে। আমার ভালোলাগা আবর্তিত হয় বেজীটাকে কেন্দ্র করে।আমি বিশ্বাস করে তাকে ছেড়ে দেই,সে পালিয়ে যায়।

প্রথম বিশ্বাসী বন্ধু আমার বিশ্বাস ভঙ্গ করে। আমাদের ঘরের পাশেই পুকুর ছিল। একটু খানি মায়ের চোখের আড়াল হতে পারলেই পুকুরের পাড়ে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকতাম। একদিন দেখলাম, অনেকগুলো  চিংড়ি  আমার পায়ের চারপাশে ঘুরছে।আমায় ছুঁয়ে দিচ্ছে,আমার সাথে আনন্দ করছে। তারপর থেকেই  ওঁরা আমার বন্ধু । আমি পানিতে হাত বা পা  দিলেই ওঁরা আসতো।অনেক মজা করতাম আমরা।অন্য কেউ হাত দিলে আসতো না। আমি ওঁদের সাথে খেলছিলাম।হঠাৎ পাশের ঘরের এক চাচা আমার বন্ধুদের উপর জাল ফেলে।আমাকে বিশ্বাস করে ওঁরা প্রাণ দিলো। আমি সেই চাচাকে বাধা দিতে পারি নি। 

আমি বেজীর সাথে নিষ্ঠুর হতে পারি নি ,আমি চিংড়িকে ভালোবেসে বাঁচাতে পারি নি।আমি মধ্য জায়গাতে আঁটকে গিয়ে কষ্ট পাই। প্রচণ্ড রকমের কষ্ট পাই। মধ্যবিত্ত হওয়ার জ্বালা  হাড়ে  হাড়ে টের পাই...না পারি হাজার হাজার টাকার জামা-কাপড় পরে  ফুলবাবু হয়ে  ফুটানি করতে...আর না পারি একেবারে সাধাসিধা জীবন যাপন করতে। ধনীরা সম্পদ নেই বলে গরিবকে অনুগ্রহ করে আর মধ্যবিত্তকে কৃপণ  বলে ঘৃণা করে।আবার গরিবরা ধনীদের উপর খুশি থাকে আর ওই একই কারনে  মধ্যবিত্তকে ঘৃণা করে। মধ্যবিত্তরা সর্ব জায়গাতে বাশ খায়। আমিও বাঁশ খাই। ঘরে খাই, বাহিরে খাই, আড়ালে খাই, জনসম্মক্ষে ও খাই। কিন্তু আমি একজন আদর্শ মধ্যবিত্ত। কষ্টে বুক ভাঙে তবুও দাঁত কেলিয়ে হাসি.....................।।

ছবি : জাহিদ অপু 

Leave a Comment