শামীমের নারী দিবস!

  • ফারজানা আক্তার 
  • মার্চ ৮, ২০১৮

শামীম সাহেব তাড়াহুড়া করে তৈরি হচ্ছেন । ইস! কেন যে এতো রাত করে ঘুমাতে গেলেন! নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে । কি এমন হতো কাল রাতে একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলে । এখন এতো কিছু ভাবার সময় নেই । তাকে ঠিক সময়ের ২০মিনিট আগে গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে হবে । বাহিরের দুনিয়ার সবাই জানে শামীম সাহেব খুব পাংচুয়াল মানুষ । কোথাও কখনো দেরি করেন পৌঁছান না । প্রতিটা মিটিং, মিছিল, সমাবেশ কিংবা সেমিনার সব জায়গায় তিনি ২০মিনিট আগেই পৌঁছে যান । পৌঁছে গিয়ে তিনি আয়োজনের সবকিছু তদাকরি করেন । নিজের মনের মতো কিছু না হলে শামীম সেটা মেনে নিতে পারেন না ।

রুবি নাস্তার টেবিলের কাজ সারছেন । আজকে নাকি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সেমিনার আছে । সেখানে অনেক ভালো ভালো কথা বলতে হবে শামীম সাহেবকে । তাই সকালের নাস্তাটা জম্পেশ হওয়া চাই । রুবি আজকে সেই অনুযায়ী খুব ভালো ভালো মেন্যু দিয়ে নাস্তার টেবিল সাজিয়েছেন । রুবি কাজ শেষ করে শামীম সাহেবকে ডাকতে গেলেন । ওহ! রুবির পরিচয়টা দেওয়া হয় নি । রুবি এই বাসার লাগোয়া বাবুর্চি । শামীম মানুষটা খুব ভোজন রসিক ।খেতে খুব ভালবাসেন । বুয়াদের রান্না তার মুখে একদম রুচে না । কত বুয়া আসলো গেলো কিন্তু শামীমকে কেউ তাদের রান্না দিয়ে মন ভরাতে পারলো না । অন্য সব ব্যাপারে ১৯-২০হলেও শামীম মোটামোটি মেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু খাওয়ার দাওয়ার ব্যাপারে একদম মেনে নিতে পারেন না । তাই বুয়ার ৫গুন টাকা নিয়ে শহরের নামকরা এক বাবুর্চিকে তিনি ২৪ঘণ্টার জন্য জন্য রেখে দিয়েছেন ।

কি ভাবছেন ? শামীম অবিবাহিত? মোটেই না! শামীম তিন তিনবার বিয়ে করেছেন কিন্তু কোন বিয়েই তার ৬মাস পার হতে পারে নি । শামীম বউদের বউ মনে করেন না, তিনি তার নিজের কেনা সম্পত্তি মনে করেন । শামীম মনে করেন বউরা তার বাসায় থাকবে, তার ইনকাম করা পয়সায় খাবে, শখ মিটাবে তাহলে তিনি যেভাবে তৃপ্তি চাইবেন সেভাবে দিতে হবে না! ভিডিওতে কত সুন্দর সুন্দর মেয়েরা কত সুন্দর সুন্দর স্টাইলে কত কিছু করে ।আর এই বউগুলো এই রকম কোন স্টাইলের কথা বললেন ছ্যা ছ্যা করে উঠে । নিজেদেরকে এক একজন সতী সাবিত্রি ভাবে । তাই শামীম সাহেবও এক একটাকে লাথি মেরে বের করে দিয়েছেন । তিন বউয়ের কেউ তাদের নিজেদের সংসার ভাঙ্গতে চায় নি কিন্তু শামীম সাহেবের মন মতো কিছু না হলে তিনি সেসব জিনিস নিজের ঘরেও রাখেন না, নিজের জীবনেও রাখেন না ।

টাকা দিয়ে কি দরকার এমন ছ্যা ছ্যা করা বউ পোষার ! তার থেকে এই টাকা অন্য কারো পিছনে দিলেই পোয়া বার হয়ে যাবে । তখন জল না চাইতেই মেঘ, বৃষ্টি সব চলে আসবে । এই রুবিটাও খুব কাজের । যেমন রান্নার হাত তেমনি সব স্টাইলে পটু ! তবে রেটটা খুব বেশি নেয় রুবি । হোটেলের মেয়েদের ডাবল দিতে হবে এক এক রাতের জন্য । তবুও ভালো নিজের বাসায় এমন জিনিস রয়েছে । হোটেলে কষ্ট করে যেতে হয় না । কাল রাতে শামীম ভেবেছিলো রুবিকে অল্পকিছু সময় রেখে ছেড়ে দিবে । কিন্তু সময়ে সময়ে মেয়েটা কেমন জানি একটু বেশিই কামরুপি হয়ে উঠে । ছাড়তে চাইলেও ছাড়া যায় না । কাল রাতে রুবি তেমনি কামরুপি হয়ে উঠেছিলো । শামীম নিজের মনের সাথে বারবার যুদ্ধ করেও রুবির সেই রুপের জালে হার মেনেছে । অনেক রাতে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঘুমিয়েছিলেন বলেই সকালে উঠতে দেরি করেছেন শামীম ।

রাতের শামীম রুবির সম্পর্কের সাথে দিনের শামীম রুবির সম্পর্কের কোন মিল নেই । দিনে তাদের দেখলে খুব স্বাভাবিক মনে হবে সবার কাছে । রুবি যেয়ে শামীমকে বললো, "স্যার, টেবিলে নাস্তা দেয়া হয়েছে ।" রুবির কণ্ঠ শুনেই শামীম রেগে গেলো । শামীম জুতা পরছিলো সেটা রুবির মুখে ছুঁড়ে মারলো । চিৎকার করে বললো, "সামনে থেকে যা ** । তোর জন্য যদি আজকে আমার সেমিনারে যেতে দেরি হয় তাহলে তোর খবর আছে । আমার এতদিনের সময়ের আগে উপস্তিত হওয়ার সুনাম আজ যদি ক্ষুণ্ণ হয় তাহলে তোকে মেরেই ফেলবো ।" রুবি মনে মনে একটা গালি দিয়ে সরে গেলো । শামীম আরেক জোড়া জুতা পরে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো । গাড়িতে যেতে যেতে ভাবলো একেও ছাড়াতে হবে । এক জিনিস এতো বেশিদিন ধরে রাখা ঠিক না । রুবির সব গুণই রয়েছে । তাই শামীম একে নিয়ে এতদিন ভাবে নাই । কিন্তু রুবির সময়ে অসময়ে জ্বলে উঠাটা এখন শামীমকে ভাবাচ্ছে । মেয়ে মানুষ আবার বেশি গুণী হলেও সমস্যা! শামীম ঠিক করলো আজকের সেমিনারটা শেষ হোক । একেও বিদায় করে দিবেন ।

শামীম যে ভয় পেয়েছিলো সেটা ঠিক হয় না । নির্ধারিত সময়ের ২০মিনিট আগেই তিনি সেমিনারে পৌঁছেছেন । শামীম ঘুরে ঘুরে চারদিক দেখছেন । আজকে পুরো অনুষ্ঠানটির ডেকোরেশন সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে । শামীম মুগ্ধ । চারদিকে তরুণীরা সুন্দর করে শাড়ি পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের দেখতে এক একটা প্রজাপতির মতো মনে হচ্ছে । অনুষ্ঠানের অতিথিরা অনেকেই চলে এসেছেন এবং তাদের জন্য নিরাধারিত স্থানে বসে আছেন । অতিথিদের মধ্যে ম্যাক্সিমামই নারী । শামীম আয়োজকের একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, "আচ্ছা এটা কিসের সেমিনার বললেন নাতো ? আমার ভাষণটা রেডি করা আছে তো ?" আয়োজক সাহেব বললেন, "আইজকা মাইয়্যা মানুষের দিবস স্যার । হিহহিহিহিহিহিহি! মাইয়্যা মানুষের নামে আজকে খুব খুব ভালা ভালা কিছু কতা কইবেন আপনে । ভদ্র লোকেরা একে আবার নারী দিবস কয় স্যার । আফনার বয়ান রেডি, সাথে অন্য সবকিছুও রেডি স্যার ।" 'সাথে অন্য সব কিছুও রেডি ' কথাটা বলে আয়োজক সাহেব শামীমকে একটা চোখ টিপ মারলেন । শামীম মুচকি হাসলো । শামীম যেখানেই যাক তার জন্য এই অন্যকিছুটা সব জায়গায় রেডি থাকে । সুন্দর লম্বা একটা বয়ান শেষে খুব ভালো পেট পূজা হয় তার । সুন্দর একটা পেট পূজার পর সুন্দর একটা রুমে সুন্দর একটা রমণী না হলে হয় ! তবে আজকের সেমিনার যেন খুব লম্বা হচ্ছে । শামীমের সময় যাচ্ছে না । শামীম অপেক্ষা করছে আজকের অন্যকিছুটার জন্য ! মাইয়্যা মানুষের দিবস ! থুক্ক ! নারী দিবসে নারীকে নিয়ে বিছানায় খেলাটা অন্যভাবে জমাতে হবে , সেই চিন্তায় বিভোর শামীম!

ছবি : গুগল 

Leave a Comment