পিয়াসের শখই ছিল ঘুরে বেড়ানো

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ১৩, ২০১৮

কয়েক দিন আগে মেডিকেল কলেজের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা শেষ করেছেন পিয়াস রায়। ফলাফল প্রকাশের আগে চলছে বিরতি। ভাবলেন, এই ফাঁকে একটু নেপাল ঘুরে আসা যাক। ঘুরে বেড়ানো তাঁর শখও। উড়োজাহাজে ওঠার আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিজের ছবি তুলে তা ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন। অন্যবারের মতো এবারও হয়তো ঘুরে বেড়ানোর অনেক ছবি তিনি পোস্ট করতেন! গতকাল সোমবার নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজের নিখোঁজ যাত্রীদের একজন এখন পিয়াস রায়। দুর্ঘটনার পর থেকে পিয়াসের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা। চিকিৎসাধীন আহত ব্যক্তিদের তালিকায় তাঁর নাম নেই। অজানা আশঙ্কায় মা-বাবা ও স্বজনদের আহাজারি থামছে না। শিক্ষক মা-বাবার দুই সন্তানের মধ্যে পিয়াস বড়।

পিয়াস রায় বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের মধুকাঠি গ্রামের বাসিন্দা সুখেন্দু বিকাশ রায়ের ছেলে। তাঁরা বরিশাল নগরের নতুনবাজারের মথুরানাথ পাবলিক স্কুলসংলগ্ন একটি ভাড়া বাড়িতে বাস করেন। পিয়াসের বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চন্দ্রকান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও মা পূর্ণা রানী মিস্ত্রি বরিশাল সরকারি পলিটেকনিক-সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পিয়াস বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হন গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজে। সেখানে এবার চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন।

পিয়াসের মা পূর্ণা রানী মিস্ত্রি বলেন, গত রোববার রাতে বরিশাল থেকে লঞ্চযোগে ঢাকায় যান পিয়াস। ছেলেকে তিনি লঞ্চঘাটে এগিয়ে দিয়ে আসেন। পরদিন (সোমবার) সকালে ঢাকায় চাচাতো ভাইয়ের বাসায় গিয়ে ওঠেন। সেখান থেকে নেপালের উদ্দেশে যাত্রা করেন। তিনি বলেন, ‘ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওর সঙ্গে আমার মুঠোফোনে কথা হয়। তখন পিয়াস বলেছিল, কিছুক্ষণের মধ্যে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করবে। এরপর থেকে আর ওর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ওটাই ছিল পিয়াসের সঙ্গে আমার শেষ কথা। কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনার পর থেকে পিয়াসের কোনো খোঁজ পাইনি। শুনেছি, আমার ছেলে নেই।’

পিয়াসের ছোট বোন শুভ্রা রায় জানান, ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের যাত্রী ছিলেন পিয়াস। তাঁর পাসপোর্ট নম্বর BC0759899 । আগামী শুক্রবার বেলা তিনটায় কাঠমান্ডু থেকে তাঁর ফেরার কথা ছিল। স্বজনেরা জানান, পিয়াস এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে অবসর সময়ে নানা জায়গায় বেড়াতে যেতেন। দেশ ও দেশের বাইরে বেড়ানো ছিল তাঁর শখ। এর আগে ছয়বার ভারত এবং দুবার নেপালে গিয়েছেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়। ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তাই অবসর সময়ে দেশের বাইরে বেড়ানোর জন্য তিনি নেপাল যাচ্ছিলেন। পিয়াসের বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় জানান, ঢাকায় স্বজনেরা প্রতিনিয়ত খোঁজ রেখে চলছেন ইউএস-বাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

ছবি ও তথ্য : প্রথম আলো 
 

Leave a Comment