পূরণ হলো না পাইলট পৃথুলার স্বপ্ন

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • মার্চ ১৮, ২০১৮

খুব কষ্ট করে একমাত্র মেয়েকে বড় করেছেন মা। মেয়ের কোনো ইচ্ছায় বাধা দেননি। পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন মা। সফলও হয়েছেন। মেয়ের ইচ্ছা ছিল মা-বাবাকে সঙ্গে নিয়ে পৃথিবী ঘুরে বেড়ানোর। মেয়ে পাইলট হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পৃথুলা সেই রঙিন স্বপ্ন পূরণ হলো না। মেয়েটা আমার চুপি-চুপি হারিয়ে গেল।নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তে নিহত পাইলট পৃথুলা রশীদের মা রাফেজা বেগম অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার মিরপুর ডিওএইচএসে পৃথুলাদের বাসায় পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। সোমবার ইউএস-বাংলার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে আনিসুর রশিদ ও রাফেজা বেগমের দিনগুলো থমকে গেছে। গোসল নেই, খাওয়া নেই, ঘুম নেই। সব সময় কেমন যেন এলোমেলোভাবে তাদের দিন কাটছে।

ডায়াবেটিক আর থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত রাফেজা বেগম। মেয়ের পরনের কাপড় বুকে নিয়ে শূন্য ঘরে বিলাপ করে যাচ্ছেন। গত দু’দিন ধরে তাকে স্যালাইন দেয়া হয়েছে। চিকিৎসক বাসায় খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। স্বজনরা জানান, ছোটবেলা থেকেই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিল পৃথুলা রশীদের। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় তার ইচ্ছাকেই বড় করে দেখেছেন পরিবারের সবাই। পৃথুলার বাবা আনিসুর রশীদ ২১ বছর রাশিয়ায় ছিলেন। অনেক কষ্টে মা একাই মেয়েকে বড় করে তুলেছেন। মেয়ের পোশাক বুকের মধ্যে নিয়ে বিলাপ করে মা রাফেজা বেগম বলেন, আমার মেয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমাকে আতাফল খাইয়ে গেছে। সকাল ৬টায় মেয়ে বেরিয়ে গেছে। এরপরেই আমি অফিসে যাই। সেই যাওয়াই আমার মেয়ের শেষ যাওয়া। আমার বাবুটা (পৃথুলা) আর বাসায় ফিরে এলো না।

মিরপুর ডিওএইচএসে ১০ নম্বর রোডের নিলয় ভবনের ২য় তলায় ভাড়া বাসায় থাকেন পৃথুলার পরিবার। পৃথুলা ছিল খুবই আবেগী। সব প্রাণীর প্রতি তার ছিল অন্যরকম ভালোবাসা। একটি বেড়ালও পুষতেন। প্রতিদিন বাসায় ফিরে বেড়ালটা খেয়েছে কি-না তা জানতে চাইতেন। বাড়ির ভেতরের ডান দিকে রয়েছে পৃথুলার একটি অ্যাকুরিয়াম। সেখানে বিভিন্ন ধরনের মাছ রয়েছে। মাছগুলোকে সে নিয়মিত খাবার দিতেন।
পৃথুলার মামা তৈফিকুর রহমান সুমন জাগো নিউজকে বলেন, পোষা প্রাণীদের প্রতি পৃথুলার অনেক ভালোবাসা ছিল। কোনো প্রাণী কষ্ট পেলে পৃথুলা সে আঘাত অনুভব করতো। ওর পোষা বেড়ালকে কেউ ধমক দিলে পৃথুলা মন খারাপ করতো। অ্যাকুরিয়ামের বড় মাছগুলো পৃথুলার অনেক পছন্দের ছিল। প্রতিদিন বাসায় ফিরে নিজ হাতে মাছগুলোকে খাওয়াতো।

পৃথুলার ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়ে বাম দেয়ালে আটকানো বিশাল আকৃতির পোস্টার। পোস্টারটির একেবারে ওপরে বাঁয়ে লেখা ফ্লাইট সেফটিবোম্বার্বাডিয়ার কিউফোরজিরোজিরো। তার পাশে উড়োজাহাজটির ককপিট প্যানেলের ছবি। ঘরজুড়ে মেয়ের জিনিসপত্র। তাই রাফেজা বেগমকে অন্য ঘরে পাঠিয়ে পৃথুলার দৃশ্যমান সবকিছু একটি আলমারির ভেতরে রাখা রয়েছে। মা জানান, আমার মেয়েকে এনে দাও। বাবুটা আমাকে সেরা বন্ধু মনে করতো। চাকরির পরীক্ষায় আমার মেয়েকে বলা হয়েছিল তোমার বেস্ট বন্ধু কে? উত্তর দিয়েছিল আমার মা। মেয়ের ফ্লাইটে দেরি হলে আমি অফিস থেকেও ফিরতে দেরি করতাম, মেয়েকে ছাড়া যে এ ঘরে আমি একা থাকতে পারি না। পৃথুলা ছাড়া ঘর যে আমার শূন্য মনে হতো। সেই ঘরে আর কোনদিন মেয়েটা ফিরবে না।

মা রাফেজা বেগম মেয়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, গত শুক্রবার মেয়েকে নিয়ে বসুন্ধরায় গিয়েছিলাম। পৃথুলাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মা তুমি কি খাবে? ও আইসক্রিম খেতে চেয়েছিল। ছোট থেকেই পৃথুলাকে টাকা দিলে বেশি টাকা নিত না। রাতে আমার ঘুম না আসা পর্যন্ত সে নিজের ঘরে যেত না, আমাকে প্রতি রাতে সে গুড নাইট বলে নিজের ঘরে যেত। এখন আমাকে কে ঘুম পাড়াবে? প্রথম মাসের বেতনের টাকা দিয়ে আমার বাবুটা নিজের ঘরে একটি আলমারি কিনেছিল। এরপর থেকে বেতনের পুরো টাকা আমার হাতে তুলে দিতো। বেতনের পুরো টাকাটা হাতে দিয়ে বলতো, তুমি অনেক কষ্ট করেছো, আমার বেতনের টাকা দুই হাতে খরচ করো, আমি সেটা চোখে দেখতে চাই। মেয়েকে শেষ বারের মতো দু ‘চোখ ভরে দেখতে দ্রুত মেয়ের মরদেহ এনে দিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।

সূত্র : জাগোনিউজ২৪

 

Leave a Comment