কালো ওড়নাতে আমাকে খুব সুন্দর লাগে!

  • ফারজানা আক্তার 
  • মে ২০, ২০১৮

মিষ্টি মেয়ে খোদেজা, খাতা কলমে শুদ্ধ ভাষায় নাম হবে খাদিজা। কিন্তু তারা পুরোনো আমলের মানুষ। ছোটবেলা থেকে বাবা মা এই নামেই ডাকতো, সেই নামই পরে মুখে মুখে প্রচার হয়ে গেছে। খোদেজার বাল্য বিবাহ হয়েছিলো। বিয়ে কি বোঝার আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো।  সংসার কি বোঝার আগেই মা হয়ে গিয়েছিলো। 

বিয়ে, সংসার না বুঝলেও খোদেজা মা হয়ে গিয়েছিলো। মা হওয়ার পরই কিশোরী খোদেজা পুরোদুস্তর সংসারী হয়ে গিয়েছিলো। স্বামীর আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিলো না। এইদিকে বিয়েও হয়েছে খুব ছোট বেলায়। ছোট ছোট চাওয়া পাওয়াগুলো তৈরী হওয়ার আগেই মা হয়ে গিয়েছে। যখন নিজের মনে একটু এটা সেটার শখ জাগছে, ভালো লাগা কাজ করতে শুরু হয়েছে তখন সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। শখ, ভালো লাগার কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই খোদেজা নিজের ছেলেকে মানুষ করতে লাগলো। 

খোদেজার গায়ের রং দুধে আলতা। কোন রকম মেকআপ ছাড়ায় খোদেজার গোলগোল সাদা গালে গোলাপি আভার দেখা মিলে।  খোদেজার খুব শখ একটা সুতি কালো শাড়ির। কিন্তু সংসার, স্বামী আর সন্তানের কথা ভেবে খোদেজার শখের কথা মনেই রয়ে যায়।  মুখ ফুটে বলতে পারে না। সন্তান বড় হয়, খরচ বাড়ে কিন্তু খোদেজার স্বামীর ইনকাম বাড়ে না। খোদেজা তার শখের কথা মুখ ফুটে বলতেও পারে না। 

দিন যায়! মাস আসে। মানুষের জীবনে এরই মাঝে ছোট খাটো বিশাল পরিবর্তন আসে। সেই কিশোরী খোদেজার বয়স বেড়ে বেড়ে এখন বৃদ্ধা হয়ে গেছেন।  সাথে শখ টাও কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।  কিশোরী বয়সে শখ ছিলো একটা কালো শাড়ির, আর এই বয়সে শখ হলো একটা কালো ওড়নার। কারণ স্বামী গত হয়েছেন বছর দুয়েক হলো, এখন আর তার শাড়ি পরার বয়স নেই। তাই শাড়ির জায়গায় ওড়না চলে এসেছে।  ছেলের সংসার থাকেন তবে মা হয়ে নন। বাসার সকল কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে তিনবেলা খাবার আর মাথা গুঁজার একটু ঠাঁই পান তিনি। একদিন ছেলের বউয়ের কাপড় চোপড় ধুয়ে দেওয়ার সময় খোদেজা কালো রঙের সুতির ওড়না দেখতে পান। তিনি জানেন ওড়নাটা তার ছেলের বৌয়ের, গায়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু কিছু কিছু শখ থাকে যাদের শত যুক্তি তর্ক দিয়েও দমিয়ে রাখা যায় না।  খোদেজার এই মুহূর্তে ঠিক সেই অনুভূতিই হচ্ছে। 

মনের সাথে অনেক তর্ক বিতর্ক করে খোদেজা ছেলের বৌয়ের কালো ওড়নাটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলো। আয়নাতে নিজেকে বারবার দেখতে লাগলেন। কিশোরী বয়সের সেই দুধে আলতা গায়ের রং একটুও ফিকে হয় নি, শুধু শরীরের চামড়াগুলো একটু ঢিলে হয়ে গেছে। খোদেজা যখন কালো ওড়নায় সাজিয়ে আয়নাতে বারবার নিজেকে দেখছিলেন, ঠিক তখনই ছেলের বউ তাকে সেই অবস্থায় দেখে ফেলেন। 

তারপর!!!!!! বৃদ্ধ বয়সে কালো ওড়নার শখ, চুরি করে ছেলের বউয়ের ওড়না নিজের গায়ে জড়ানোর অপরাধে খোদেজাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।  সাথে খোদেজাকে বলা হয় সে একজন চরিত্রহীন! চরিত্রহীন না হলে এই বয়সে কালো ওড়নার শখ কারো হতে পারে! সাথে তাকে লোভীও বলা হয়। ছেলের বউয়ের ওড়নার দিকে তার লোভ এই কথা শোনাতে ভুল করেন নি খোদেজার একমাত্র ছেলে। 

বর্তমানে খোদেজার ঠিকানা একটি বৃদ্ধাশ্রম। জীবনের নানা আপ ডাউনের কথা তার ক্ষনে ক্ষনে মনে হয়। ছেলে আর ছেলের বৌয়ের নিষ্ঠুরতার কথা এখনো তাকে কাঁদায়। কিন্তু একটি কালো ওড়নার শখ এখনো তার মন থেকে যায় নি। এতো এতো দুঃখ কষ্টের মাঝেও তিনি অপেক্ষা করছেন একটি কালো সুতির ওড়নার।    

 

Leave a Comment