নারীর মন পৃথিবীর স্বর্গীয় বাগান!

  • আকরাম হোসাইন
  • জুলাই ১৬, ২০১৮

আপনার কাছে একটু সময় চাইবো। যদি ফ্রি থাকেন লেখাটা একটু মন দিয়ে পড়বেন। ভেতরে সৃষ্ট অনুভূতি গুলো জানাবেন।

আমরা জানি কি?

"নারীর মন পৃথিবীর স্বর্গীয় বাগান"!

বর্তমান বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে স্বামী, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে সবার পবিবার বিমুখতা। এই সমস্যা এতো কঠিন ও খারাপ রূপ নিয়েছে যা বলতে গেলে চোখে পানি এসে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়। আমরা যদি একটা মনস্থির করে অনুভব করি তাহলেই বুঝতে পারব এ সমস্যার ফলে তৈরি হচ্ছে সমাজে ধর্ষণ,খুন,গুম ও পরকিয়ার মতো ন্যাক্কার জনক কাজ।

আসুন কিছু বিষয় নিয়ে সবাই ক্লিয়ার হই। আসলে আমাদের সমস্যা কোথায়, কেন হচ্ছে এমন?

সমাজে একটা ছেলে বা মেয়ের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে গেলে মনে করি আমাদের সকল দায়িত্ব শেষ। আসলে কি শেষ হয়ে যায়? নাকি শুরু নতুন করে শুরু হয় অনেক কিছু? আমরা যদি খেয়াল করি বর্তমান সমাজে যতটা প্রেম ঘটিত বিয়ে হয় তার চেয়ে বেশি হয় পারিবারিক ভাবে। যাকে আমার এরেঞ্জ ম্যারিজ বলি।

একটি মেয়ে দীর্ঘ ১৮-২৫ বছর নিজের মতো করে চলে যখন অন্য ঘরে যায়, তখন আগের চেয়ে তার স্বপ্ন বৃদ্ধি পায়। মনে মনে বিয়ের সানাই বাজার সাথে সাথেই হাজারটা স্বপ্ন দেখতে শুরু করে হবু বরকে নিয়ে। মনে মনে খুশি হয়। বাহিরটা যদিও খারাপ থাকে পরিবারের জন্য। সেটাও অবশ্য ভিতরের কাজ। বিয়ের হয়ে গেলে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বহু সংগ্রাম করে এবং করতে হয়। নিজের একাকীত্ব দ্বিতল করতে বহু কষ্ট করতে হয় একটা মেয়েকে।

একটা মেয়ে স্বপ্ন দেখে আট-দশটা সুখি পরিবারের মতো নিজের স্বামীর হাত ধরে সপিংয়ে যাবে, হানিমুনে যাবে। এক সাথে বসে এক পেয়ালায় খাবে,এক বালিশে রাতের স্বপ্ন বুনবে, দিন শেষে নিজের স্বামীর হাসি মুখে একটা কপোল, কপাল চুমু পাবে। এতো গুলো স্বপ্ন মনে হলেও স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে বেশি কিছু করার দরকার হয়না একটু ভালোবাসা ছাড়া। কিন্তু এই স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে মেয়েকে সাজতে হয় হাজারো রূপ, নিজেরর ভেতর নিয়ে আসতে হয় নানান বৈচিত্র।তবু স্বপ্নই থেকে যায় অনেক ক্ষেত্রে। যার ফলে তৈরি হয় পরিবার বিমুখতা।

আসুন বাস্তব একটা মেয়ের স্বপ্ন শুনি। নাম অরু( রূপক অর্থে ব্যবহার করলাম।) ওর সাথে পরিচয় হয় ঢাকা আসার পর, প্রায় কথা হয়, হতো।একদিন কথা বলতে বলতে জানতে চাইলাম- অরু তুমি কেমন ছেলে পছন্দ করো? তোমার ভবিষ্যত স্বপ্ন কি? সে আমার বলল দেখো আমার সাধারণ মনের একজন সহজ সরল ছেলে হলেই চলবে। যে আমাকে বুঝবে আমিও তাকে বুঝবো। আমায় একটু ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে। আর স্বপ্ন গুলো হলো আমার বিয়ের হবে বেশ বড় আয়োজন করে। বিয়ের পর সুন্দর একটা বাসর ঘর থাকবে। স্বামী যদি হানিমুনে নিয়ে যায় সেটা হবে সেরা স্বপ্ন। যদি না পারে তবে যদি কোথায় ঘুরতে নিয়ে যায় তাহলেও চলবে। তাছাড়া আমাদের একটা বালিশ থাকবে। ওর বুকে আমি ঘুমাবো। সকালে ঘুর থেকে উঠার পর যদি আমাকে দুটো চুমু দেয় তাহলেই চলবে। আর সারা দিন বাহিরে থাকলে যদি একবার খোঁজ নেয় তবেই আমি তার দাসী হয়ে কাটাবো বাকি জীবন। আমি সেদিন হেসেছিলাম। এমন ছেলে পাওয়া কঠিন অরু। বললো তখন সেরকম না পেলেও আমি ভালোবাসা দিয়ে বানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবো। এ কথা শুনে অবাক হয়েছি সাথে খুশি হলাম।

একজন মেয়ে নিজের সংসারের সুখের জন্য বা ভবিষ্যত সুখের জন্য কত কি না করে একটু অনুভবে বুঝলেন তো? আর আমরা সেই স্বপ্ন গুলোকে সামান্যতম দামও দিতে পারিনা। বরং তৈরি করি পরিবারের বিশাল ভার হিসেবে। আর আমরা একদল ছেলেরা মনে করি রাতের দেহ ভোগ, আর দিনেরর তিন বেলা রান্না করলেই চলবে এর চেয়ে আর কি? আসলে কি তা? কখনো নয়। মনে রাখলে হবে একটা ছেলের মতো একটা মেয়ের মানুষ, রক্ত প্রবাহ হয় তার শরীরে।ভালো-মন্দ আশা করতেই পারে। সবার ভেতর মনুষ্য চিন্তা নিতে হবে।

তবে, একজন মেয়ের যেমন স্বপ্ন থাকে একজন ছেলের স্বপ্ন থাকে। স্বপ্ন গুলো হয়তো ভিন্ন। ছেলেরা বিয়ের পর নিজেকে তৈরি করতে চায়। কিন্তু দেখা যায় স্বপ্ন গুলো তৈরি করতে পারে না বা পারার চেষ্টা করেও ক্লান্ত হয়ে উঠে। অনেকে আবার মনে করে মনে হয় সংসার স্ত্রী চালায়। বাহিরে আমি যা করি তা তো সমস্যা নয়। এই বিয়োগতা এক সময় ভয়াবহ তৈরি হয় তার প্রভাব পরে স্ত্রীর উপর তার সংসারের উপর এবং তার উপর সেই খেয়াল হারিয়ে ফেলে। দেখা যার তারপর বাহিরে কারো সাথে কিছু হলে সেটা বাড়ি এসে স্ত্রীকে প্রহার করে।এভাবে তৈরি হয় দ্বিতল বিয়োগতা।

একটা মেয়ে চায় যেকোন কাজে তার স্বামী তাকে পাশে রাখুক। নিজের বিষয় গুলো স্বামী শুনবে আর স্বামীর বিষয় সে শুনবে। কিন্তু সেটা হয়না। সেখানে আমরা নারীকে মনে করি সব বিষয়ে তাদের আসার দরকার নেই আবার পুরুষকে ঠিক একি রূপে দেখি থাকে অনেক নারী। এতে তৈরি হয় নিজ দ্বিত্ব শূন্যতা।

এসব শূন্যতা আর বিয়োগের কারণে মেয়েরা জরিয়ে যায় পরকিয়ার মতো ন্যাক্কার কাজে। কারণ প্রত্যেক মেয়েই বন্ধু সুলভ। বন্ধুত্ব একটা মেয়েকে বেশ আনন্দে রাখতে পারে। যখন স্বামীকে বন্ধু হিসেবে পায় না তখন মেয়েরা তার ক্লাস ম্যাট ও পাশের পরিচিত কোন ছেলের সাথে নানান বিষয় সেয়ার করে। একসময় সেয়ার করতে করতে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। এক পর্যায়ে তাদের বন্ধুত্ব এতো ক্লোজ হয় তারা একে আপরের পরিপোষক হয়ে যায় যতটা স্বামী হওয়ার কথা ছিলো। এতে তৈরি হতে থাকে বিবাহবহির্ভূত কাজ যার নাম পরকিয়া। একি রকম কাজ গুলো ছেলেরাও করে থাকে । কিন্তু তাদের ভুল ধরিয়ে দেয়ার মতো লোক থাকে না বা তখন কাউকে পাশেও পায়না। যদি কেউ নিজ থেকে ভালো থাকতে চায় সেটা শততে এক জন।

পরিবারের বাবা ও মায়ের এ বিয়োগতার প্রভাব পরে সন্তানের উপর। যে বাবা ও মা তাদের নিজেদের বিষয় একজনের সাথে আরেক ভাগ বসাতে পারে না সেখানে সন্তানের বিষয় গুলো তো পাত্তাই দেয়া হয়না।এতে সংসার তৈরি অশান্তি।

আসুন আর একটা গল্প শুনি। স্বামী ও স্ত্রী দুজনই শিক্ষিত। মা শিক্ষিকা আর বাবা আইনজিবি। একদিন ছোট ছেলেটি তার বাবা ও মায়ের গল্প চলাকালিন এসে বাবাকে প্রশ্ন করে বাবা!বাবা! সেক্স কি? বাবা সেই রেগে গিয়ে গালে চর মারে। আর বলে খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে খারাপ হয়ে যাচ্ছো? মা ছেলেকে কোলে করে নিয়ে কান্নারত অবস্থায় শুয়ায় দেয়। রাত যখন গভীর ঘুমানোর আগে ছেলেকে দেখতে যায়, ছেলেকে মারলাম। কিন্তু দেখতে যাওয়ার সময় টেবিলে রাখা একটা কাগল লক্ষ করে। ওখানে গিয়ে দেখে স্কুল থেকে একটা ফরম দিয়েছে যেখানে লেখা আছে sex। কত গুলো নামের অফশনের পরে এটা। ছেলেটি নিজের নাম, বাবার নাম,মার নাম পূর্ণ করলেও সেক্স শব্দটি জানতে না পেরে বাবাকে গিয়ে জিজ্ঞাস করলে বাবা রেগে ছেলেকে মারে । এটা দেখার পর বাবা দাঁড়ায় কেঁদে দেয়। কি ভুল করলো!

দেখুন আমাদের সমাজে এমন ঘটনা বহু ঘটতেছে। হয়তো চক্ষুর আড়ালে আমরা দেখিনা। যদি বাবা ও মা বেশি অন্তরিক হতো তাহলে ছেলের এ বিষয়টা নিয়ে এতো উত্তেজিত হতো না। আসলে স্বামী ও স্ত্রী তাদের বিষয় গুলো আলাদা বিষয় ভাবে নেয়ায়, কাউকে কেউ কারো বিষয়ে সেয়ার না করায়, নিজের ইচ্ছে গুলো সমাধান তো হয়নি'ই। সেই প্রভাবটাও ছেলের উপরে পরেছে।

এমন হচ্ছে সমাজে সবচেয়ে বেশি। তাই আসুন আমরা পরিবারের একান্ত বিষয় গুলো নিজরা মিটিয়ে নেই। একটা অপরিচিত মেয়েকে ঘরে এনে তার স্বপ্ন গুলো শুনি বা একজন ছেলে কি চায় তা শুনি তাহলে সমাজে তৈরি হবেনা কোন খারাপ সন্তান হবেনা পরকিয়ার মতো ন্যাক্কার কাজ!

পরিবারে এ বিমুখতা সমাজে ও দেশে প্রভাব ফেলছে। ভালো ছাত্র তৈরি হচ্ছে না। শিক্ষাঙ্গনে তৈরি হচ্ছে আরাজকতা। আসুন আমরা প্রত্যেক মানুষের নিজের মতামত শুনি। তাদের মতামত প্রাধান্য দেই। পরিবার করি বন্ধু শুলভ। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন। ভালোবাসা রাখবেন।

মনে রাখবেন, একজন মা বা একজন মেয়ে বা একজন নারীর মন পৃথিবীর স্বর্গীয় বাগান।

আসুন নিজেকে সব সময় যত বেশি নিচু শ্রেনীর মানুষ ভাবি। আর নিজের কাজ গুলো ভাবি ভুল হচ্ছে তাহলে দেখবেন আপনার আমার পথ হবে সুন্দর ও আদর্শ।

 

Leave a Comment