নারী কিভাবে ১০০% মৌলিক এবং সুন্দর?

  • আকরাম হোসাইন
  • জুলাই ১৯, ২০১৮

নারী, মা, মেয়ে,বালিকা, যুবতী, কারো স্ত্রী বা বউ শব্দ গুলোর মানে একটা বৃত্তের মতো। কিন্তু আমার সব গুলোকে আলাদা চোখে দেখি। দেখার কথাও। কারণ জন্মের পর আমরা এমনটাই জেনে আসতেছি। মা অপরাধ করলে সব মা খারাপ। মেয়ে অপরাধ করলে সব মেয়ে খারাপ। নারী অপরাধ করলে সব নারী খারাপ। এমন একটা ধরণা সবার মাঝে আছে। আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে পাওয়া। কিন্তু আমরা কখনো কি ভেবে দেখেছি এটা চরম ভুল? আসলে ধারণাটা চরম ভুল।

একটু বিস্তারিত আলোচনা করা যাকঃ

দেখুন উপরের উল্লেখিত শব্দ গুলোর মূল শব্দ হলো নারী। যেমন আমরা নর ও নারী বলি। নারীকে আমার কখনো মেয়ে বা বালিকার চরিত্রে, কখনো স্ত্রী বা বউয়ের চরিত্রে, কখনো মায়ের চরিত্রে দেখি। কিন্তু এমন টা বিষয় দেখেই গেলাম কখনো চিন্তায় আনিনা।যার জন্য আমরা ভুল করি। দেখেন ঠিক নরের ক্ষেত্রে একই জিনিস কাজ করে। নর বিভিন্ন চরিত্র নিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ ও চলাফেরাও করে থাকে।

নারী শব্দটা আরো খোলা মেলা আলোচনা করে দিচ্ছি। ধরেন নারী একটা তরকারি, সেখানে বিভিন্ন মশলা রয়েছে। আপনি যদি কোন মশলা কম দেন তাহলে তরকারি খারাপ লাগবে সেটাই স্বাভাবিক।তরকারি মেইন জিনিস টা লবন। আপনি ঠিক নারীর একটা মেইন পার্ট মা ধরতে পারেন। মা, মেয়ে,নারী সসম্মিলিত ভাবে কোন খারাপ কাজ বা ভালো কাজ সম্পাদন করেনা। তারা বরং তাদের অবস্থান ঠিকই রাখে কিন্তু নারীর বৈশিষ্ট গত কারণে তার একেকটা দিক এদিক সেদিক হয়ে যায়। এতে আপনি আমি সকল মা ও মেয়ে কে দোষ দিতে পারিনা। সেখানে নারী তার একটা পার্ট খারাপ করার কারণে এমনটা হয়েছে।সেখানে আমরা সেই পার্টটা খারাপ চোখে দেখে সংশোধন করার চেষ্টা করতে পারি।

আমাদের সমাজে প্রত্যেকটা মানুষের মাঝে দুটি সত্ত্বা বসবাস করে। এক ভেতরের সত্ত্বা আর এক বাহিরের সত্ত্বা। যারা ভেতরের সত্ত্বা জাগানো তারা ভুল কাজ খুব কমই করে। বরং সমাজে তারা সমানে, পেছনে সম্মানের সহিত বেঁচে থাকে। আর যারা বাহিরের সত্ত্বা জাগিয়ে কাজ করে তারা সমাজে উচু স্থানে থাকলেও মানুষের চোখে ভালো নয়। ঠিক তেমনি একজন নারী যখন তার ভেতরের সত্ত্বা দিয়ে চলে তখন সে আদর্শ মা,মেয়ে,বউ হয়ে উঠে সবার চোখে । আবার যখন বাহিরের সত্ত্বা দিয়ে কাজ করে তখন হয়তো সে মা কিন্তু বউয়ের স্থানে সঠিক নয় বা মেয়ে থাকা কালীন ভালো ছিলোনা এমনটা ভাবা যেতে পারে। এতে করে আমরা আলাদা ভাবে কাউকে দোষ দিতে পারিনা।

আমাদের সমাজে প্রত্যেক মানুষ ১০০% ভাগ ভালো।কিন্তু তার যে চরিত্র গুলো যে আছে সেই গুলোর হয়তো একটা ৭৫% ভাল আর একটা ১২০% ভালো আর এটা ৯০% খারাপ। সমান গড় নিয়ে দেখবেন সে ১০০% ভালোই আছে। তাই আমরা কাউকে সরাসরি কোন খারাপ বা ভালো কাজ দেখে বিবেচনা করা যায় না। আসলে সে কতোটুকু মন্দ বা ভালো।

ধরুন একজন নারী তার সন্তানকে বেশ ভালোবাসে সেবা করে। কিন্তু সে তার শ্বশুর ও শ্বাশড়ি দেখা শোনা করেনা। সেখানে সে মা হিসেবে উত্তম কিন্তু বউ হিসেবে অধম। তাহলে আপনি কি বলবেন নারী হিসেবে খারাপ? মোটেও না। কারণ একটা পার্ট খারাপ মানে সে সম্পূর্ণ খারাপ নয় হয়তো সে সেই দিক বাহির থেকে বিবেচনা করে চলে আসছে তাই একটা দিক খারাপ। নারী হিসেবে সে একটু অন্যরকম। আপনি বরং নারীর আদর্শের ১০০% দেখে তাকে বিবেচনা করুন কখনো তাকে গালি ও মন্দ বলতে পারবেন না।

এমনি পুরুষের ক্ষেত্রেও একটা দিক দেখে বিবেচনা করা ঠিক নয়। সমাজে এধরনের মেসেজ নাই বলে অবহেলার স্বীকার ঘর ও বাহিরে সবাই। হত্যা, খুন, গুম হচ্ছে হর-হামেশায়। আসুন আমরা নিজের বিবেক জাগ্রত করি। নারীকে আলাদা পার্ট হিসেবে না দেখে নারীর আদর্শ চোখে দেখি, তাদের দূর্বলতা গুলো তাদের সমানে তুলে ধরি তাহলে একটা পবিবার, সমাজ, সংসার হবে সুখের।

ঠিক নারীরাও পুরুষদের পুরুষের আদর্শ চোখে দেখবেন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে বুঝাবেন। পৃথিবীতে কেউ ঈশ্বর নয় সব বুঝে চলবে। ভুল সবারই হয়। নারীর কোনো একটা দিক নষ্টের মূলে পুরুষের অবদান যতটা না পুরুষের নষ্টে নারীর অবদান আছে তার চেয়ে বেশি।

শেষ একটা উদাহরণ আপনি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন একটা লোহা পড়ে আছে, এটা দেখে চলে গেলেন। কিছুক্ষন পর আর একজন এসে লোহাটা দেখে ফেলে দিলো দূরে। আপনি সমাজে বহু সমাজ সেবক কারণ করেন। আর ঐ লোকটা সাধারণ কৃষক। এখন আপনার মাথাশ কি কাজ করছে না দুজন পুরুষই ভালো কিন্তু তাদের গুন গুলো আলাদা। দোষের কিছু নেই।

আচ্ছা আমরা যে মাদার তেরেসাকে মায়ের বিশাল মর্যাদা দিয়ে রাখি। ওনি কি জন্ম দাত্রী হিসেবে মায়ের মর্যাদা পেয়েছে নাকি কর্মের মাধ্যেমে? সবাই বলব কর্মের মাধ্যমে। একজন নারীর তার একটা দিকের উপর বৃত্তি করে বিশাল মর্যাদা পায়। আমরা শুধু একটা দিকই ধরেছি। ধরিনি তার নারীত্ব কে! ধরেছি তার সততা ও কর্ম কে। তেমনি যদি সমাজে বেড়ে উঠা নারীদের মূলটা না ধরে শুধু তার খারাপ দিক গুলো বা ভালো দিক গুলো খুঁজি। আর ভেতর থেকে প্রশ্ন করি তাহলে খোঁজে পাব তার মূলটা চরমই আছে। সেটা চরম থাকার কারণ হলো তার এটা দিক। আসুন আমাদের ভালো মন্দ দিক খুঁজি। তাহলো মৌলিক কারো উপর হামলা আর করতে মন চাইবেনা। সবাই মৌলিক ভাবে সত্য।

আপনার ভেতরের সত্ত্বা কাজ করেনি। ওনার ভেতরের সত্ত্বা কাজ করেছে।যে ব্যক্তির ভেতরের সত্ত্বা কাজ করে তার বাহিরের সত্ত্বা উত্তম।আর যার শুধু বাহিরের সত্ত্বা কাজ করে সে ভেতরের সত্ত্বা খোঁজই পায়না।তাই কারো উপর দোষ না চাপিয়ে তাদের নিজ সত্ত্বা বিবেচনা করুন পাশে গিয়ে দাঁড়ান সমাজ দেশ পরিবর্তন হবে ইনশাল্লাহ।

আপনি যদি নিজের ভেতরের সত্ত্বা কাজে লাগাতে পারেন। তাহলে নারী পুরুষের স্তর গুলো আলাদা করে বিবেচনা করবেন না। বরং তার বা আপনার মন্দ দিক গুলো ফাইন্ড আউট করে সংশোধন করবেন। এতে পরিবার সুন্দর হবে। আর কথায় কথায় বেরিয়ে আসবে না সব নারী খারাপ, সব মেয়ে খারাপ, সব পুরুষ খারাপ।

মনে রাখবেন কাউকে মন্দ বলার আগে আপনার কোনো দোষ আছে কিনা। যদি মৌলিক হন আপনি তাহলে কারো দোষ পেলে শুধু ঐ টুকু সংশোধনের জন্য বলেন। সবাইকে টানতে গেলে আপনিও চলে আসবেন। পৃথিবীতে দুইটা জিনিজের কায়েম চলছে সেটা নর ও নারী। আমরা যদি একে অপরকে ঘৃনা ও অহংকার করি তাহলে বেঁচে থাকা আর সুন্দর মানে চলার চিন্তা করি কেনো? আসুন আমরা মৌলিক জায়গা থেকে সবার দোষ গুলো ধরি সেটা সংশোধনের চেষ্টা করি।

পরিশেষে বলতে চাই চলুন ভালোবাসায় বাঁচি, ভালোবাসা নিয়ে ভাবি,ভাবি ভালোবাসকে কিভাবে নিজের চরিত্র করা যায়। তাহলে সমাজের কখনো আর হবেনা একটা ধর্ষণ, খুন, গুম। মনে রাখবে প্রত্যেক মানুষ তার কাছে শত ভাগ ভালো। তাই নিজেকে আগে বিচার করে তারপর আমরা অন্যের দিক গুলো তুলে ধরি। পৃথিবীর মন্দের সংখ্যা খুবই কম।

 

Leave a Comment