বউ শাশুড়ির প্রেম!

  • রোমানা আক্তার 
  • সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৮

আমি আমার শাশুড়ি মা'কে মুঠোফোনে বললাম, "মা, আমিতো কোনদিন বাবা-মাকে ছাড়া থাকিনি। এখন বিয়ের খাতিরে আমার বাবা-মাকে ছেড়ে আপনার ছেলের সাথে থাকতে হবে। এখন সেখানে যদি আপনারা না থাকেন, তাহলে আমি মা-বাবা বলে কাকে ডাকবো?" এতোদিন ধরে বলে আসা "আমি  এখান থেকে যাবোনা, তোমরা আসবা" সেই মা আমার কথার উত্তরে বললেন, "পাগলী রে, আগে তুমি বাসায় উঠো, তারপর তোমাদের বাসায় থাকবো।" আমি বললাম, "আমাদের বাসা কি? এটাতো আপনার বাসা।"

তিনি হেসে বললেন, "মা রে, কখন যে মরে যাই।"  আমি বললাম, "এসব কথা বলতে নেই মা। যখন মরবেন তখনতো আর আটকাতে পারবেননা। এসব চিন্তা করে কি হবে? অনেকদিন বেঁচে থাকেন।" তিনি বললেন, "বুড়ো হয়ে গেছি, একলা চলতে পারিনা, রান্না করতে পারিনা, খেতে পারিনা। মরে গেলে তোমাদের খাওয়ানোর মানুষ কমবে।"

আমি বললাম, "বাবা-মা কি সন্তানের জন্য বেশি হয়গো মা যে মরলে কমে যাবেন? বাবা-মা হল সন্তানের জন্য আশীর্বাদ। আপনারা যতোদিন মাথার উপর থাকবেন, ততোদিন আমরা আশীর্বাদে থাকবো। আপনাদের চাইতে ভালো আর কে বাসবে আমাদের?" তিনি বললেন, "ও মা, তুমি ঠিকমতো ঘুমাইও।অনেক রাত হইছে, তুমি গিয়ে খেয়ে নাও আগে।আবার পরে কথা বলবো।" আমি বললাম, "তাহলে আপনি ঘুমিয়ে যান। আমি আবার কালকে ফোন দিবনে। আসসালামু আলাইকুম।"

তিনি সালামের উত্তর দিয়ে ফোনটা রেখে দিলেন। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছুসময় চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। এরপর খাবার টেবিলে গিয়ে বসলাম। ঠিকভাবে নড়তে না পারা শাশুড়ি মা আমার কোনরকম তেল নুন দিয়ে আমার জন্য কোরবানি গরুর মাংস পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, আমি যাতে মসলা মিশিয়ে পছন্দমত রান্না করে নেই। আমি সেই মাংসে কোন এক্সট্রা স্বাদ বাড়াতে চাইনি। তিনি যেভাবে পাঠিয়েছেন, সেভাবেই একটু একটু করে খাচ্ছি। রাতে সে দিয়েই খাবো। মা যখন শুনেছিলেন, আমি অন্যকোন মসলা মাখিয়ে তা রান্না করিনি তখন বললেন, "ইস..এগুলো খাওয়া যায়!" আমি বললাম, "আপনি কি বুঝবেন? রান্নাকি আপনার মায়ের? এটা আমার মায়ের হাতের রান্না। তিনি যেভাবে রাঁধে, সেভাবেই মজা।" তিনি হাসতে হাসতে বললেন, "এরে পাগলি"।

ওদিকে আমার শ্বশুর আব্বা আমাকে তার চার নাম্বার মেয়ের আসনে বসিয়েছেন। কেননা, তাঁর আরও তিনটি মেয়ে আছেন। সেই হিসাবে আমি চতুর্থ। একদিন অভিমান করে আব্বাকে বলেছিলাম, "মুখে মুখেই মেয়ে বলেন, ফোনও দেননা, ফোনটা হাতের কাছেও রাখেননা।" সেদিনের পর থেকে আব্বা আমাকে ফোন দিতে মাঝেমাঝে ভুলে গেলেও ফোনটা হাতের কাছে রাখতে ভুলেননা। আমার সাথে কথা না বলে ঘুমাননা। একদিন ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। পরেরদিন তাঁর সে কি মন খারাপ। আমি ফোন দিয়ে তাকে পাইনি। তিনি কেন ঘুমিয়ে গেলেন? সেদিন হাসতে হাসতে বললাম, "আব্বা, ঘুম আল্লাহর রহমত। আপনি কথা না বলে ঘুমাইছেন, আর আমারতো ঘুম আসেনা দেখে আপনারে ফোন দিছি।" আমার কথা শুনে তিনি মন খারাপ বাদ দিয়ে হেসে উঠলেন।

Leave a Comment